স্পোর্টস ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: গত বৃহস্পতিবার প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে মনিরুজ্জামানের সঙ্গে অন-ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুই নম্বরে থাকা মোহামেডান ও পাঁচ নম্বর স্থানে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার দায়িত্ব পাওয়ায় আপত্তি জানিয়েছিল দুই দল।
এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান আম্পায়ারস কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ মিঠু। তাঁর দাবি, নারী বা পুরুষ বিবেচনা করাটা বৈষম্য। তবে দুই দল দাবি করেছে, নারী নন, অনভিজ্ঞ বলেই জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার জেসির দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে কথা বলেছিলেন তারা।
দুই দল আসলে কী ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিল, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল বিসিবির আম্পায়ারস কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ মিঠুর কাছে। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘বেসিক্যালি করেছে কী, যখন নারী আম্পায়ার দেখেছে, তখন ওরা নাকি বলেছে, আলাপ করেছে যে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নারী আম্পায়ার এলো কেন? আমার কথা হলো, আমরা কোথায় প্র্যাকটিস করাবো (নারী আম্পায়ারদের)? আমি তো বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করছি। সেকেন্ড ডিভিশন, ফার্স্ট ডিভিশন করে করে উপরে এনেছি। এখন প্রিমিয়ার লিগে সিনিয়র খেলোয়াড়দের সাথে কাজ করলেই কিন্তু আত্মবিশ্বাসটা বাড়ে। যে কোনো ক্ষেত্রেই তো তাই, ধীরে ধীরে ধাপ পার হতে হয়।’
বৃহস্পতিবার প্রথম নারী আম্পায়ার হিসেবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে দায়িত্ব পেয়েছিলেন জেসি। তাঁর দায়িত্ব পাওয়াতে দলগুলোর আপত্তির কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না মিঠু, ‘প্রধান হিসেবে আমি তো বৈষম্য করতে পারি না। আমার কাছে সবাই সমান। আম্পায়ারিং তো এমন না যে ফিজিক্যালি বক্সিং করতে যাচ্ছে- ছেলেদের গায়ে জোর বেশি, মেয়েদের কম। আইসিসি, সবাই এ ব্যাপারে পুশ করছে। আমাদের বোর্ড সভাপতি, ক্রিকেট বোর্ড থেকে বলা আছে, নারী আম্পায়ারদের দেখভাল করতে হবে। এমন এক ম্যাচে দিয়েছি যার কোনো প্রভাব নেই। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ বা রেলিগেশন ম্যাচ হতো, তখন বুঝতাম (আপত্তি থাকতে পারে)। দুই হবে না তিন হবে, না চার হবে- এই ম্যাচেও যদি অসুবিধা হয়, তাহলে কিছু বলার নাই। ওরাও (দুই ক্লাব) বুঝছে। হয়তো প্রথম দিকে কথা বলছে, পরে তো খেলছে।’
মোহামেডানের ক্রিকেট সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম টিটুর দাবি, তাঁরা কোনো অভিযোগ করেননি। তিনি বলেন, ‘মোহামেডানের অফিশিয়াল হিসেবে একমাত্র আমিই মাঠে ছিলাম। আমরা কারও কাছে আম্পায়ার নিয়ে কোনো অভিযোগ করিনি। কেউ ফোনও করিনি। আমি মিঠুকে জিজ্ঞেস করতে চাই, অভিযোগ কে করেছে। বললেই তো হবে না, অভিযোগ করেছে। আম্পায়ার নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি। মিঠু কোথা থেকে শুনেছে। কোথা থেকে কী হলো, বুঝতে পারছি না। মোহামেডান বড় ক্লাব, আমরা আম্পায়ার সম্পর্কে হুট করে কথা বলতে পারি না। আর প্রথম ম্যাচ করতে এসে ও (জেসি) তো ভালো করেছে।’
তাহলে আম্পায়ারস কমিটির প্রধান এমন কথা কেন বলেছেন, সে প্রশ্ন করা হলে টিটু বলেন, ‘মিঠু তাহলে জানে না, ওকে জিজ্ঞেস করেন। কে অভিযোগ করলো জানি না, মোহামেডানের কেউ দেয় নাই, এটা শতভাগ নিশ্চিত।’
তবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথোপকথনে মৌখিকভাবে নিজেদের অখুশি মনোভাব প্রকাশের কথা স্বীকার করেছেন টিটু, ‘আমরা আসলে আপত্তি তুলিনি। আমরা এমনিতে বলাবলি করছিলাম যে, ম্যাচের মেরিট অনুযায়ী তো এতো বড় ম্যাচে জেসি আম্পায়ার হতে পারে না। আমরা বলছিলাম, এতো বড় ম্যাচে আরও ভালো আম্পায়ার দরকার ছিল। আমরা অফিসিয়ালি অভিযোগ করিনি, অফিসিয়ালি অভিযোগ করবো কেন। আমরা ওরকমভাবে রিপোর্ট-টিপোর্ট করিনি।’
একই প্রতিবেদনে প্রাইম ব্যাংক ক্লাবের ম্যানেজার শিকদার আবুল হাশেম কঙ্কনও বলেছেন তাদের আপত্তির কারণ, ‘মহিলা আম্পায়ার দেবে এটা তো জানি না আমরা। বাংলাদেশে মহিলা আম্পায়ারের অভিজ্ঞতা কেমন এটা তো আমরা সবাই জানি। আপত্তি করি না। যেহেতু এটা বড় ম্যাচ, এখানে নিয়মিত যারা করে তাদের আশা করছিলাম। মহিলা আম্পায়ার দেখেন, যেটা এলবিডব্লিউ সেটা দেয় নাই, যেটা হয় নাই সেটা দিয়েছে। আমরা ম্যাচ শুরুর আগেও কিছু বলিনি। এমনিতে নিজেরা আলাপ করেছি। সিসিডিএমের কাউকে বলিনি। নিজেরাই আলাপ করেছি। অনভিজ্ঞতার জন্যই।’
দুই ক্লাবের বক্তব্য জানিয়ে মিঠুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সমালোচনার মুখে এখন অবস্থান বদলেছে তারা, ‘ফোন করেনি, ব্যাপারটা হয়েছে মাঠে। এখন হয়েছে কী, কাজটা করেছে, কথা বলেছে। কিন্তু এখন দেখছে ব্যাপারটা খারাপ দিকে চলে যাচ্ছে, সবাই সমালোচনা করছে… (তাই এখন না বলছে)। টিটুরাই মন্তব্য করেছে। আমি যতটুকু বুঝেছি, ওরা অখুশি ছিল। তারা বলেছেও। খেলোয়াড় এবং কর্মকর্তারা বলছেন এই ম্যাচে না দিলেও পারতো। কে কতোটা খারাপভাবে বলছে সেটা তো জানি না, শুধু এটুকু জানি… এখন টিটু আমাকে ফোন করছে, জেসিকে ফোন করছে। এখন বুঝছে যে মোহামেডানের ওপর… মাঠে যারা ছিল তারাও… আমরা শুনলাম কোত্থেকে? আমি তো মাঠে ছিলাম না। মাঠে ওরা এসব করছে। ওরা অখুশি ছিল, (জেসিকে) দিলো কেন? যেখানে স্বাগত জানানোর কথা, সেটা করেনি। এখন যেহেতু সংবাদমাধ্যমে কথা হচ্ছে, ফেসবুকে আলোচনা হচ্ছে, এখন এরা পিছু হটছে। একদিক থেকে ভালো হয়েছে, ভবিষ্যতে আর চাপ দিতে পারবে না।’
এ ব্যাপারে সিসিডিএমের চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, রেফারিং নিয়ে তাঁদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি, ম্যাচ রেফারির রিপোর্টেও আনুষ্ঠানিকভাবে এমন কিছু ছিল না, ‘এরকম কোনো কিছু আমাদের বলা হয়নি, শুনিওনি। কেউ কিছু বলেনি, ওদের মধ্যে ওরা কী আলোচনা করছে সেটা তো আমরা জানি না। আমাদের কেউ কিছু বলেনি। দুই ক্লাব থেকে দেওয়া বক্তব্যে কিছু নেই। ম্যাচের মাঝে খেলা বন্ধ হয়েছিল, সেটা অন্য ইস্যু। এর বাইরে মৌখিকভাবে বা লিখিতভাবে অন্য কিছু জানানো হয়নি। এর বাইরে আমরা কিছু জানি না।’
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com