ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বে রাশিয়ার নতুন স্থল আক্রমণ থেকে বাঁচতে আরও হাজার হাজার বেসামরিক লোক পালিয়ে গিয়েছে। এই স্থল আক্রমণে শহর ও গ্রামকে লক্ষ্য করে কামান এবং মর্টার দিয়ে গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। এই তীব্র লড়াইয়ের মুখে খারকিভ অঞ্চলে অন্তত একটি ইউক্রেনীয় ইউনিট পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। যার ফলে রাশিয়ার সীমান্তে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অঞ্চল জুড়ে আরও বেশি ভূমি রাশিয়ার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।
রবিবার বিকেলের মধ্যে ভোভচানস্ক শহরটি যুদ্ধের একটি কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ভোভচানস্ক উত্তর-পূর্বের বৃহত্তম শহরগুলির মধ্যে একটি, যার যুদ্ধ-পূর্ববর্তী জনসংখ্যা ছিল ১৭,০০০। খারকিভ আঞ্চলিক পুলিশের প্রধান ভলোদিমির টাইমোশকো বলেন, রুশ বাহিনী শহরের উপকণ্ঠে পৌঁছেছে, এবং তিন দিক থেকে এগিয়ে আসছে। তিনি বলেন, “পদাতিক বাহিনীর লড়াই ইতিমধ্যেই চলছে।"
টাইমোশকো বলেন, শহরের দিকে যাওয়ার প্রধান রাস্তায় একটি রাশিয়ান ট্যাঙ্ক দেখা গেছে। এটি ভারী অস্ত্র মোতায়েন করার জন্য মস্কোর আস্থার চিত্র তুলে ধরে। মস্কোর বাহিনী অভিযান শুরু করার পর শুক্রবার থেকে অন্তত ৪,০০০ জন বেসামরিক লোক খারকিভ অঞ্চল থেকে পালিয়ে গেছে, গভর্নমেন্ট ওলেহ সিনিয়েহুবভ এক সামাজিক মিডিয়া বিবৃতিতে এ কথা বলেন। সেখানে রাশিয়ান বাহিনী গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭টি লোকালয়ে আক্রমণ করেছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, উত্তর-পূর্বে রাশিয়ার আক্রমণ থামানোকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে এবং কিয়েভের সৈন্যরা খারকিভ অঞ্চলের আশেপাশের সাতটি গ্রামে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “রাশিয়ার আক্রমণাত্মক উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করা এখন আমাদের এক নম্বর কাজ। আমরা সেই কাজে সফল হবো কিনা তা নির্ভর করে প্রতিটি সৈনিক, প্রতিটি সার্জেন্ট, প্রতিটি অফিসারের উপর"।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রবিবার জানিয়েছে, তাদের বাহিনী ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলের সীমান্তে চারটি গ্রাম দখল করেছে। শনিবার আরও পাঁচটি গ্রাম দখল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ইউক্রেনের নেতৃত্ব মস্কোর সাফল্য নিশ্চিত করেনি। কিন্তু টাইমোশকো বলেন, স্ট্রিলেচা, পাইলনা এবং বরসিভিকা রাশিয়ার দখলে ছিল এবং ঐ দিক থেকেই তারা পদাতিক বাহিনী নিয়ে আসে যুদ্ধরত গ্রাম গিলিবোকে এবং লুকিয়ান্তসি আক্রমণ করার জন্য।
ইউক্রেনের একটি ইউনিট বলে, তারা কিছু এলাকা থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে এবং রাশিয়ার বাহিনী শনিবার গভীর রাতে আরও একটি গ্রাম দখল করেছে। শনিবার সন্ধ্যায় এক ভিডিওতে দেখা যায়, ইউক্রেনের ন্যাশনাল গার্ডের স্পেশাল ফোর্সের ডিট্যাচমেন্টের অংশ, হোস্ট্রি কার্তুজি ইউনিট বলে, তারা হ্লিবোকে গ্রামের নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের দুই বছরেরও বেশি সময় পর রাশিয়া রণাঙ্গনে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। ইউক্রেন যখন জনবলের ঘাটতির পাশাপাশি আর্টিলারি শেল এবং বিমান প্রতিরক্ষা মজুদ নিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে, তখন রাশিয়া নতুন এলাকায় অভিযান শুরু করেছে।
জেলেন্সকি শনিবার সকালে এক বিবৃতিতে কিয়েভের পশ্চিমা মিত্রদের তাদের প্রতিশ্রুত অস্ত্র সরবরাহ ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান। গত মার্চে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তিনি বেলগোরোদ সংলগ্ন ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে একটি “স্যানিটারি জোন'” তৈরির কথা ভাবছেন। বেলগোরোদ প্রায়ই ইউক্রেনের গোলাবর্ষণের স্বীকার হয়।
শুক্রবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কারবি বলেন, এসব কিছুই ইঙ্গিত করছে রুশ বাহিনী খারকিভে বড় ধরনের আক্রমনের পরিকল্পনা করছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেনীয় বাহিনী তীব্র রুশ সাঁজোয়া স্থল আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জন্য নতুন করে ৪০ কোটি ডলারের অস্ত্র ও সরঞ্জাম প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।।
প্রেসিডেন্সিয়াল ড্রডাউন অথরিটির এই সাহায্য প্যাকেজ কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে পেন্টাগনের স্টকপাইল থেকে যুদ্ধাস্ত্র এবং পরিষেবাদি স্থানান্তর করার অনুমতি দেয়। কংগ্রেসের ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা বিল পাসের পর এটিই ইউক্রেনের জন্য জরুরি সামরিক সহায়তার তৃতীয় ধাপ।
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com