আদিত্য সরকার, বাংলাদেশ গ্লোবাল: পর্যটকদের সর্বোত্তম পরিষেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় ট্যু’র অপারেটরদের সুপরিকল্পিত ভাবে ট্যুর পরিচালনার উদ্দেশ্যে এবং তাদের একটি আইনী কাঠামোর আওতায় আনার লক্ষে মন্ত্রিসভা আজ ‘বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটরস এবং ট্যুর গাইডস (রেজিস্ট্রেশন এবং কন্ট্রোল অ্যাক্ট), ২০২০’ অনুমোদন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন প্রদান করা হয়। পরে বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে সুপরিকল্পিতভাবে ট্যুর কার্যক্রম পরিচালনায় ট্যুর অপারেটর ও গাইড আইনের আওতায় পর্যটকদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।’
‘ট্যুর অপারেটর কীভাবে পরিচালনা করা হবে, দেশি-বিদেশি ট্যুর অপারেটরদের কীভাবে অনুমোদন দেয়া হবে, কীভাবে নিবন্ধন দেয়া হবে- আইনে এসব উল্লেখ করা হয়েছে এবং নিবন্ধন ছাড়া ট্যুর পরিচালনাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ৬ মাসের জেল বা ২ লাখ টাকা বা উভয় দ-ের বিধান নির্ধারণ করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আইনে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। ট্যুর অপারেটররা যদি কোনো অপরাধ করে তাহলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা। অপরাধের বিচার মোবাইল কোর্টের আওতাধীন হবে এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিচার করা যাবে।’
নিবন্ধন ছাড়া ট্যুর অপারেশন করা যাবে না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘নিবন্ধনের জন্য কি কি যোগ্যতা তা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। সনদ প্রদানের জন্য সরকার একটি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ গঠন করবে।’
তিনি বলেন, ‘পর্যটকদের কাক্সিক্ষত সেবা দিতে আইন করা হয়েছে। এর অধীনে একটি গাইডলাইন করা হবে। কোন সেবা কত টাকার মাধ্যমে পাওয়া যাবে, এগুলো পরিষ্কার হবে। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য ট্যুর অপারেটর, ট্যুর গাইডের কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে পরিচালনা করা সম্ভব হবে।’
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ধীরে ধীরে যত উন্নত দেশের দিকে যাব, আমাদের সেবাগুলো তত উন্নত হতে থাকবে। সেবাখাত বিনিয়োগের একটা বড় ক্ষেত্র হবে। এজন্য আইন করার উদ্যোগ নেয়া হয়।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আইনের মাধ্যমে পর্যটকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। সেবা প্রাপ্তি সহজ হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। কারণ, অনেক বড় বড় ইনফরমাল ট্যুর হচ্ছে কিন্তু কোনো ভ্যাট বা ট্যাক্স সরকারের খাতে জমা হচ্ছে না। এজন্য যত নিবন্ধন ও ট্যুর হবে সবগুলো রাজস্ব বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চলে আসবে।’
এদিন বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ‘জাহাজ নির্মাণ শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা-২০২১’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘২০২৫ সালের মধ্যে জাহাজ রফতানি আয় বছরে ৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে চার বছরের মধ্যে জাহাজ নির্মাণ খাতের কর্মী সংখ্যা ৩০ হাজার থেকে বাড়িয়ে এক লাখ করারও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জাহাজ নির্মাণ খাতের উৎপাদন বৃদ্ধি, এই শিল্প সংশ্লিষ্ট নানাবিধ ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের বিকাশ, অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আমদানি নির্ভরতা হ্রাস, রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ জাহাজ নির্মাণ শিল্পের টেকসই বিকাশ ত্বরান্বিত করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনাসহ জাহান নির্মাণ শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।’
নীতিমালার মূল লক্ষ্যগুলো আলোচনায় এনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহনের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় জাহাজ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন, বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে বিশ্ব জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উপযুক্ত অংশীদার হিসেবে গড়ে তোলা হবে এই নীতিমালার লক্ষ্য।
এছাড়া, অধিক বিনিয়োগ ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০২৫ সালের মধ্যে জাহাজ রফতানি খাতের অবদান ৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। এখন জাহাজ রফতানি করে আয় হয় এক বিলিয়ন ডলার,’ বলেন তিনি।
নীতিমালা অনুযায়ী অধিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জাহাজ শিল্পে নিয়োজিত বিদ্যমান ৩০ হাজার কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি করে ২০২৫ সালের মধ্যে এক লাখে উন্নীত করা হবে জানিয়ে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করাও নীতিমালার উদ্দেশ্য।’