ঢাকা      শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
শিরোনাম

কোরআনের আয়াত নিয়ে গবেষণার সুফল

IMG
23 January 2024, 5:38 PM

আমজাদ ইউনুস, কালের কণ্ঠ: পবিত্র আল কোরআন মহান আল্লাহর শাশ্বত বাণী। মানবজাতির পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। চিরন্তন হিদায়াতের উৎস। মানবজাতির ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। কোরআনের বিধান, আদেশ-নিষেধ জীবনে প্রয়োগের জন্য কোরআন ভালোভাবে উপলব্ধি করতে হবে। এ জন্য সফল, সুন্দর, শুভ্র ও শুদ্ধ জীবন গঠনে কোরআন অনুধাবন করা আবশ্যক ও অপরিহার্য।

মানবিক ও ধর্মীয় দিক থেকে কোরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য অফুরন্ত। মহান আল্লাহ তাআলা কোরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা, গবেষণা ও চর্চা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে এবং বুদ্ধিমানরা যেন তা অনুধাবন করে।’ (সুরা : সোয়াদ, আয়াত : ২৯)
মানবজাতির বোঝার সুবিধার্থে মহান আল্লাহ তাআলা কোরআনকে সহজ করে দিয়েছেন। কোরআন বোঝার জন্য আহ্বান করেছেন। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি কোরআনকে বোঝার জন্য সহজ করে দিয়েছি।

অতএব, কোনো চিন্তাশীল আছে কি?’ (সুরা : কামার, আয়াত : ২২)
কোরআন নিয়ে যারা চিন্তা করে না এবং কোরআন গবেষণা থেকে বিরত থাকে মহান আল্লাহ তাদের নিন্দা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা কি কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না। নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?’ (সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ২৪)

কোরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা এবং কোরআন মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া নবুয়তি দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা.)-কে এ দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তোমার প্রতি এক স্মরণিকা (কিতাব) অবতীর্ণ করেছি, যেন তা তুমি মানুষের জন্য বয়ান তথা ব্যাখ্যা করে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দাও, যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। ’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ২)
রাসুল (সা.) মানুষকে কোরআন শিক্ষা দিতেন। পাশাপাশি সে যুগের প্রেক্ষাপট সামনে নিয়ে কোরআনের ব্যাখ্যাও বলে দিতেন। তিনি নিজে কোরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতেন। সাহাবিদেরও কোরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে উৎসাহিত করেছেন। আউফ বিন মালিক বলেন, একবার আমি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে অবস্থান করলাম। তিনি মিসওয়াক করলেন। অতঃপর অজু করে নামাজে দাঁড়ালেন। আমিও তাঁর সঙ্গে দাঁড়ালাম। তিনি সুরা বাকারা তিলাওয়াত শুরু করলেন। রহমত ও দয়া বিষয়ক কোনো আয়াত এলে তিনি থামতেন এবং তা কামনা করতেন। আবার শাস্তিবিষয়ক কোনো আয়াত এলে তখনো তিনি থামতেন এবং তা থেকে মুক্তি চাইতেন। (নাসায়ি, হাদিস : ১১৩১)

রাসুল (সা.)-এর সাহাবিরা কোরআনের নির্দেশনাকেই অগ্রগণ্য হিসেবে গ্রহণ করতেন এবং তা বাস্তবায়নে আয়াতে কোরআন ভালোভাবে অনুধাবনের চেষ্টা করতেন। আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমাদের মাঝে যখন কেউ ১০টি আয়াত শিখতেন, তখন তিনি সেগুলোর অর্থ অনুধাবন ও নিজের জীবনে বাস্তবায়ন ব্যতীত সেগুলো অতিক্রম করতেন না।’ (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২৭)

সাহাবিরা কোরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার ফজিলত ও মর্যাদা উপলব্ধি করেছিলেন। তাঁরা কোরআনকেই সব কিছুর ওপর প্রাধান্য দিতেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই কোরআনের একটি আয়াত পুনরাবৃত্তি করতে করতে পুরো রাত কাটিয়ে দিতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) চিন্তা-ভাবনা ছাড়া সুরা বাকারা পাঠের চেয়ে মনোযোগ সহকারে সুরা জিলজাল ও আল-কারিয়া তিলাওয়াত করতে পছন্দ করতেন। (সুনানুন নাসায়ি, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ২২৩)

আবদল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বলেছেন, ‘যে জ্ঞান অন্বেষণ করতে চায়, সে যেন আল-কোরআনকে প্রাধান্য দেয়। কেননা এর মধ্যে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব জ্ঞানই নিহিত আছে।’ (বাহরুল উলুম, আবুল লাইস সামারকান্দী, খণ্ড : ১, পৃ. : ৭১)

যাঁরা কোরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করেন এবং কোরআনের আয়াত শুনে বিগলিত হয়ে যান তাঁরা বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকেন। আল্লাহ তাআলা তাঁদের প্রকৃত মুমিন ও জ্ঞানী বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, বলো, ‘তোমরা কোরআনে বিশ্বাস করো কিংবা বিশ্বাস না করো, ইতোপূর্বে যাদের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তাদের যখন কোরআন পাঠ করে শোনানো হয়, তখন তারা অধোমুখে সাজদায় লুটিয়ে পড়ে।’ আর তারা বলে, ‘আমাদের রব মহান পবিত্র; আমাদের রবের ওয়াদা অবশ্যই পূর্ণ হবে। তারা কাঁদতে কাঁদতে অধোমুখে সাজদায় লুটিয়ে পড়ে আর তা তাদের বিনয় ও নম্রতা বাড়িয়ে দেয়।’ (সুরা : আল-ইসরা, আয়াত : ১০৭-১০৯)

কোরআনের আয়াত নিয়ে চিন্তা, ভাবনা ও গভীর মনোনিবেশ বান্দার জন্য ইহকালীন ও পরকালীন সৌভাগ্য নিয়ে আনে। এর মাধ্যমে আল্লাহর ভয় জাগ্রত হয়। ঈমান বৃদ্ধি পায়। ভালো-মন্দ বুঝতে পারে। মন্দ ও অকল্যাণ থেকে দূরে থাকে। অন্তরে দুনিয়ার বাস্তবতা ফুটে ওঠে। হৃদয় কোমল হয়। আল্লাহর রহমত ও ফেরেশতারা তাদের পরিবেষ্টন করে রাখেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিন তো তারাই, আল্লাহর কথা আলোচিত হলেই যাদের অন্তর কেঁপে ওঠে, আর তাদের কাছে যখন তাঁর আয়াত পঠিত হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে আর তারা তাদের রবের ওপর নির্ভর করে।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ২)

রাসুল (সা.) বলেন, যখন কোনো সম্প্রদায় আল্লাহর গৃহসমূহের কোনো একটি গৃহে একত্রিত হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করে এবং একে অপরের সঙ্গে মিলে (কোরআন) অধ্যয়নে লিপ্ত থাকে তখন তাদের ওপর শান্তিধারা অবতীর্ণ হয়। রহমত তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে এবং ফেরেশতারা তাদের পরিবেষ্টন করে রাখেন। আর আল্লাহ তাআলা তার নিকটবর্তীদের (ফেরেশতাগণের) মধ্যে তাদের কথা আলোচনা করেন। (মুসলিম, হাদিস : ২৬৯৯)



সৌজন্যে: কালের কন্ঠ (অনলাইন)

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন