বিজনেস ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: বিশ্বের সেরা শক্তি হয়ে ওঠাই চীনের লক্ষ্য৷ অভ্যন্তরীণ ওষুধ শিল্প ক্ষেত্রেও চীন সেই লক্ষ্য পূরণ করতে চাইছে৷ গোটা বিশ্ব চীনে তৈরি ওষুধের উপর আরো নির্ভরশীল হয়ে উঠছে৷ গোটা বিশ্ব কি চিকিৎসা পণ্যের ক্ষেত্রে পুরোপুরি চীনের উপর নির্ভর করতে চলেছে? সে ক্ষেত্রে এমন পণ্যের রপ্তানি কি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হবে?
সবসময় সস্তার পণ্য উৎপাদন করাই চীনের ওষুধ শিল্পের মূলমন্ত্র থেকেছে৷ এই শিল্প খাতের দ্রুত উত্থানের ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্বও অনেক সাহায্য করেছে৷ ওষুধ বিশেষজ্ঞ হিসেবে উলরিকে হলৎসগ্রাবে বলেন, ‘‘এর প্রেক্ষাপট হলো, আমরা ওষুধের জন্য বেশি ব্যয় করতে চাই না, যদিও সেটাই চিকিৎসার সবচেয়ে সস্তা উপায়৷ সে কারণে উৎপাদনের ব্যয় কমানোর চেষ্টা করা হয়৷ সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে এমন সব দেশে যাওয়া যেখানে সস্তার শ্রম, কম পরিবেশবিধি এবং জ্বালানির কম মূল্য রয়েছে৷''
চীন বর্তমানে ৪০ শতাংশ অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট বা চিকিৎসার ওষুধের অংশ উৎপাদন করছে বলে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন৷ আপাতদৃষ্টিতে সেটা মনে না হলেও চীন সেই প্রক্রিয়ায় জড়িত আছে৷ প্রতিযোগিতার বাজারে বাকিদের তুলনায় চীনের একটা সুবিধা রয়েছে৷ সে দেশ ওষুধের বেশিরভাগ কাঁচামালও উৎপাদন করে৷ বিশাল আকারে উৎপাদনের কারণে তার মূল্যও অত্যন্ত কম থাকে৷
মূল্যের ক্ষেত্রে সেই সুবিধার দৌলতে চীন বিদেশি প্রতিযোগীদের বাজার থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে৷ যেমন সেফালোস্পোরিন নামের অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে সেটা দেখা যাচ্ছে৷ এমনকি অত্যাধুনিক উৎপাদন প্রক্রিয়া সত্ত্বেও জার্মানির কোনো কোম্পানি চীনের সামনে মাথা তোলার সুযোগ পাচ্ছে না৷ উলরিকে হলৎসগ্রাবে জানান, ‘‘কয়েক বছর আগে পর্যন্তও হ্যোক্সট কোম্পানি সেফালোস্পোরিন উৎপাদন করতো৷ চীনের স্পষ্ট উত্থানের ফলে সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না৷ তারা সব সময়ে হ্যোক্সটের তুলনায় কম দাম হেঁকে এসেছে৷ সে সময়কার হ্যোক্সট কোম্পানির মালিকরা তখন বাধ্য হয়ে বললেন, এটা আর লাভজনক নয়৷ আমরা উৎপাদন বন্ধ করে দেবো৷''
এর পরিণাম সম্পর্কে উলরিকে হলৎসগ্রাবে আরো বলেন, ‘‘ভালো করে সেফালোস্পোরিনের দিকে নজর দিলে লক্ষ্য করবেন, সেটির ভিত্তির মৌলিক উপাদান হলো অ্যামিনোসেফালিক পিউরানয়েক অ্যাসিড, যা বড় আকারে শুধু চীনেই উৎপাদিত হয়৷ তাই যুদ্ধ হলে আমরা তাইওয়ানের পক্ষে অবস্থান নিলে চীন যদি ইউরোপে সেই উপাদান আর সরবরাহ না করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন আমাদের খালি হাতে বসে থাকতে হবে৷ সেফালোস্পোরিন আর পাওয়া যাবে না৷ অথচ অ্যান্টিবায়োটিকের মতো ওষুধ জীবন বাঁচায়৷''
চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার শেষ নেই৷ সে দেশ নতুন ওষুধের ক্ষেত্রে শীর্ষে থাকতে চায়৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন বর্তমানে বিশ্বের প্রতি ১০টি প্রাথমিক স্তরের ওষুধের মধ্যে একটির জন্য গবেষণা চালাচ্ছে৷ ওষুধ বিশেষজ্ঞ হিসেবে আন্দ্রেয়াস মাইসার বলেন, ‘‘আমার মতে, তারা আরো বেশি উদ্ধাবন-বান্ধব৷ আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ধার না ধরে তারা কোনো কিছু বাস্তবায়ন করতে চাইলে সেটা করে ছাড়ে৷ তাদের আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আমাদের তুলনায় অনেক বেশি দ্রুত ঘটে৷ অন্যদিকে ‘কোর ইন্ডাস্ট্রি' হিসেবে চিহ্নিত হলে অর্থ, সহায়তা ও তহবিলের অভাব হয় না৷''
ইউরোপ আবার ওষুধ উৎপাদন ফিরিয়ে আনতে চায়৷ যেমন: ইউরোপে প্যারাসিটামল নামের ব্যথার ওষুধের এক-তৃতীয়াংশ চাহিদা মেটাতে ফ্রান্সে এক কারখানা নির্মাণ করা হচ্ছে৷ তবে মোটা অংকের সরকারি ভর্তুকির কারণেই সেটা সম্ভব হচ্ছে৷
চীনের বদলে ইউরোপে তৈরি একটি মাত্র ট্যাবলেটের দাম জার্মানিতে ১০ থেকে ২০ সেন্ট বেশি হতে পারে৷ তবে চীনের উপর নির্ভরতা আরো কমাতে বিশ্বের কোথাও রোগীরা বাড়তি মাশুল গুনতে প্রস্তুত কি না, তা কারো জানা নেই৷
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com