ঢাকা      সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
শিরোনাম

খেজুর এনবিআরের বিলাসী পণ্য, শুল্ক প্রায় ১০০ শতাংশ

IMG
28 February 2024, 7:50 PM

ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল: ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেছেন, বিশ্বের সব জায়গায় বিভিন্ন উৎসব পণ্যে বড় ছাড় দেওয়া হয়। কারণ ওরা মনে করে এই উৎসবে যদি মানুষকে আমাদের পণ্য দিতে পারি, তাহলে পরিচিত হবে আমাদের পণ্য। এই রমজান মাসে আমরা যারা ব্যবসায়ী তারা অবশ্যই ব্যবসা করব। এই মাসে আমরা আল্লাহ এবং রাসূলের (সা.) কাছে যেন ভালো হতে পারি সে চিন্তা করে ব্যবসা করব। আমরা ব্যবসা করে অবশ্যই লাভ করব। তবে লাভটা হতে হবে ন্যায্য। রমজানে যদি মিনিমাম লাভ করি, তাহলে নিজের জন্য লাভ, আর মানুষের জন্যও ভালো। এই জায়গায় সবাইকে সাবধান হতে হবে।

বুধবার নিত্যপণ্যের সংকট মোকাবিলায় আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

নিত্যপণ্যের উৎপাদন, আমদানি, মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে এফবিসিসিআই।

সাপ্লাই চেইনে ব্যবসায় প্রধান সমস্যা জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাপ্লাই চেইনে ঘাটতি হলে কৃত্রিম সংকট তৈরি হবে। কেউ যেন কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে। কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। ব্যবসায়ীরা ভ্যাট, ট্যাক্সসহ সব কিছু সরকারকে দিচ্ছে। তারপরও দিন শেষে একটা কথা উঠে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা করে। আমাদেরকে এই তকমা যাতে আর না দিতে পারে। এই জায়গায় কাজ করতে হবে। কাঁচাবাজারে দেখা যায় সকালে বেগুনের দাম ১০০ টাকা, বিকালে ৯০ টাকা।

তিনি বলেন, আমি চাই না কোনো বাজার মনিটরিং পুলিশ দিয়ে হোক। বাজার কমিটির সভাপতি সেক্রেটারি দিয়ে মনিটরিং করালে আর পুলিশ দরকার নেই। তাহলে আর পুলিশ ব্যবসায়ীদের হয়রানি করতে পারবে না।

এফবিসিসিআইর সভাপতি বলেন, ৯৯ শতাংশ ভালো ব্যবসায়ী। আর এক শতাংশ খারাপ ব্যবসায়ী। খারাপ ব্যবসায়ীদের জন্য এফবিসিসিআই কোনো কথা বলবে না। পরিষ্কার ম্যাসেজ।

তিনি বলেন, পণ্য পরিবহনসহ যদি কোথাও চাঁদাবাজি হয় আর আমরা জানতে পারি তাহলে ব্যবস্থা নেব। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। তাতে চাঁদাবাজ যেই হোক।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, মালের কমতি নেই, সাপ্লাইরও ঘাটতি নেই। পর্যাপ্ত মজুত আছে। চাঁদাবাজি কোথাও হলে আমাদের জানাবেন।

সভায় ব্যবসায়ীরা জানান, এনবিআর খেজুর বিলাসী পণ্য হিসেবে মূল্য ধরেছে। বর্তমানে এক কনটেইনার খেজুর আমদানি করতে ৫০ লাখ টাকা শুল্ক দিতে হয়।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমদানি করা ১১০ টাকা কেজি দরের খেজুরে ১৪০ টাকা শুল্ক দিয়ে বাজারে বিক্রি করতে হয় ২৫০ টাকা। আমদানি করা ১২০ টাকা কেজি দরের খেজুরে ২১০ টাকা শুল্ক দিয়ে বাজারে ৩৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয়। এজন্যই বাজারে খেজুরের দাম বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই শুল্ক যুক্ত করা হয়েছে। অথচ গত বছর এক কেজি খেজুরে ১০ টাকা শুল্ক দিয়েছি।

তিনি বলেন, গত ৩৫ বছর ধরে আমি খেজুর আমদানি করি, কিন্তু কখনো শুল্ক দিতে হয়নি। আমি খেজুর আমদানি করলাম ৯০০ থেকে ১০০০ ডলারে। চট্টগ্রামের কাস্টম কমিশনার সাধারণ কনটেইনার খেজুরের জন্য ২৫০০ ডলার এবং হিমায়িত কনটেইনারে খেজুরের জন্য চার হাজার ডলার শুল্ক নির্ধারণ করেছে। এতে করে খেজুরের দাম দুই থেকে তিনগুণ বেড়ে গেল। আমরা এনবিআর-এ কথা বলেছি, কিন্তু তারা কোনো যুক্তি দেখাতে পারল না, কেন এটার শুল্ক ২৫০০/৪০০০ করল। এই অ্যাসেসমেন্টে এক কার্টন খেজুর আমাকে বিক্রি করতে হবে সাড়ে চার হাজার টাকায়, কেজি পড়বে ৪৫০। আসলে আমরা সবাই যদি সহযোগিতা না করি, তাহলে বাজারে এটার দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না।

এই মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা বলেন, পেঁয়াজ ভারত থেকে বন্ধ করার পর, আমরা সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারছি না। তবে আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে। রোজার প্রথমে পেঁয়াজের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা চলে আসতে পারে।

বাংলাদেশ কাঁচাবাজার মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান বলেন, বেগুনের চাহিদা সারাবছর যা থাকে রমজানে তা ১০০ গুণ বেড়ে যায়। এ জন্য স্বাভাবিক সভা-সেমিনার করে দাম কমানো যায় না, নীতি-নৈতিকতা ঠিক না হলে। আর কাঁচামরিচ রমজানের প্রথম দিকে একটু বাড়তে পারে। কিন্তু আলুর দাম বাড়বে না।

সভায় রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হোসেন জানান, ব্রয়লার মুরগির দাম গত ১৫ দিনে ২০০ টাকায় নিয়ে গেছে। ব্রয়লার মুরগি ও মসলা নিয়ে তেলেসমতি চলছে। গাবতলী বাজার, হাইওয়েতে চাঁদাবাজি হচ্ছে গরুতে। চিনি-তেল পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এতে আমরা বিপদে আছি। এসব সমস্যা সমাধান করতে না পারলে রমজানে দাম কমানো যাবে না। রমজানে গরু-মুরগির মাংসের দাম নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।

পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুনির হোসেন বলেন, বড় আড়তদাররা মুরগির দাম বাড়ায়।

কাপ্তান বাজার আড়ত মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল মান্নান খান ময়না বলেন, দোকানদাররা মূল্য তালিকা টানায় না। বাজারে সিন্ডিকেট আছে স্পষ্ট। কৃষক কখনই দায়ী না। সিন্ডিকেট ধরার ব্যবস্থা করুন।

কারওয়ান বাজার কাঁচামাল আড়তদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সুজন বলেন, পণ্য পরিবহনে চাঁদা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। পণ্য বহনকারী ট্রাক থেকে কয়েক ধাপে চাঁদা নেওয়া হয়। শুরু থেকে গন্তব্য পৌঁছাতে কয়েক স্থানে চাঁদা দিতে হয়। যার জন্য পণ্যের দাম বেড়ে যায়।

সভায় এফবিসিসিআইর এক পরিচালক জানান, রাস্তায় পুলিশ, স্থানীয় নেতারা, রাজনৈতিক নেতা, পৌর মেয়র, আনলোডিং জায়গায় চাঁদাবাজি হয়।

মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিসহ সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন