স্পোর্টস ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: মনুমেন্তালে নামার আগেই সুখবর পেয়েছে আর্জেন্টিনা দল। ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত, যেটা কি না আবার নিজেদের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ইতিহাসে দ্রুততমও। এমন খবরে মনটা কার না ফুরফুরে হবে! চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে তাই বুঝি একটু নির্মম মজা করার সাধ হয়েছিল আর্জেন্টিনার।
কিক অফের পর প্রথম দুই মিনিটে ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা বল পাননি। তখনই বোঝা গিয়েছিল, কিছু একটা নিয়ে তাড়া আছে লিওনেল স্কালোনি অ্যান্ড গংয়ের। হাতে পাঁচ ম্যাচ রেখে বিশ্বকাপে খেলার টিকিট পাওয়া উদ্যাপনে বুঝি কেক কাটতে হবে! কিংবা মাঠেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কেক বানিয়ে…। আরেকটু হলে সেটাই হতো! কারণ শুরুটা ছিল কেকে দ্রুত পোচ দেওয়ার মতোই! তারপর সময় শেষ হওয়ার আগে আরও একটি। এভাবে চারবার অর্থাৎ চারটি গোল। আর্জেন্টিনা জিতেছে ৪-১ গোলে।
চার মিনিটে (৩ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড) জুলিয়ান আলভারেজের গোল। সেটা আবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচে তৃতীয় দ্রুততম। তাতেও আর্জেন্টিনার তাড়াটা ঠিক পরিস্কার বোঝানো যাচ্ছে না। ব্রাজিল ‘মাকড়সা’র কামড় মানে ‘স্পাইডার’ আলভারেজের কাছে গোল হজম করতে সময় পেয়েছে মাত্র ৮ মিনিট। এনজো ফার্নান্দেজ দিয়েছেন দ্বিতীয় পোচ; ১২ মিনিটে। ব্রাজিল তখনও বলার মতো একটি আক্রমণও করতে পারেনি। পোস্টেও শট নেই। ওদিকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে রচিত হয়েছে নতুন ইতিহাস। এতো দ্রুত কখনো দুই গোল হজম করেনি ব্রাজিল!
দুই গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা ব্রাজিলকে ম্যাচে ফিরিয়েছে আসলে আর্জেন্টিনাই। স্বাগতিকদের রক্ষণ দেয়ালের অন্যতম ‘স্তম্ভ’ ক্রিস্টিয়ান রোমেরো ব্রাজিলের প্রতি একটু ‘প্রসন্ন’ হয়ে উঠেছিলেন কি না! ২৬ মিনিটে তাই বল পায়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, দূরে থাকা ম্যাথিয়াস কুনিয়া বল কাড়তে ছুটে আসেন কি না তা দেখার জন্য বুঝি! কুনিয়া আসলেন ঠিকই, কিন্তু রোমেরো তাঁকে ড্রিবলিংয়ের চেষ্টা করেও পারলেন না। বল কেড়ে কুনিয়ার ডান পায়ের জোরালো শট সোজা আর্জেন্টিনার জালে। জাতীয় দলের হয়ে এ ফরোয়ার্ডের প্রথম গোল আর্জেন্টিনার পোস্টে ব্রাজিলের প্রথম শটও।
কিন্তু আর্জেন্টিনার তাড়া তখনও শেষ হয়নি। ৩৬ মিনিটে বক্সের বাঁ প্রান্ত থেকে বাঁ পায়ের জোরালো শটে গোলকিপার বেন্তোর পরীক্ষা নিয়ে চোখ রাঙানি দেন থিয়াগো আলমাদা। কে জানতো, পরের মিনিটেই তৃতীয় পোচটি দেবেন অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার। ফার্নান্দেজের বাতাসে ভাসানো কম্পাসে মাপা পাস লিভারপুল মিডফিল্ডারের পায়ে এসে পড়েছে। ভলিতে প্রথমার্ধেই ব্রাজিলকে তিন গোল দেওয়ার কাজটুকু সেরেছেন পাকানো পায়ের কাজে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো প্রথমার্ধে তিন গোল হজম করলো ব্রাজিল। প্রথম ২০০৫ সালের জুনে আর্জেন্টিনার মাটিতেই।
প্রথমার্ধে ৬১ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে ব্রাজিলের পোস্টে চারটি শট নিয়েছে আর্জেন্টিনা। তিনটি গোল এবং আরেকটি আলমাদার সেই শট। এই আলমাদার ডিফেন্স চেরা পাস থেকেই বল দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্রথম গোলটি করেন আলভারেজ। ফার্নান্দেজের আলতো টোকায় করা গোলটি ৩৩ পাসের ফসল, ৩৫ তমটি ছিল নাহুয়েল মলিনার।
গোল পেতে মরিয়া ব্রাজিল তিনটি পরিবর্তন নিয়ে বিরতির পর মাঠে নামে। রড্রিগোর জায়গায় এনদ্রিক, জোয়েলিংতনের জায়গায় হোয়াও গোমেজ ও হলুদ কার্ড দেখা মুরিল্লোর জায়গায় লিও ওর্তিজ। কিন্তু তাতে ব্রাজিলের খেলার ধার বাড়েনি। আক্রমণভাগ থেকে মিডফিল্ড ছিল বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। রক্ষণে একটু চাপেই ঠকঠক কাঁপুনি! ৫৬ মিনিটে আলমাদার শট পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়, ৬১ মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে হেডে নিশ্চিত গোল মিস করেন নিকোলাস টাগলিয়াফিকো।
রাফিনিয়া চেষ্টা করেছেন। ফ্রি কিক থেকে বল মানব দেয়ালে মেরেছেন। পোস্টেও মেরেছেন। কিন্তু ম্যাচের আগে যে প্রতিশ্রুতির আগুন তিনি জ্বেলেছিলেন তা নেভাতে তেমন একটা তাগিদ দেখা যায়নি। বিরতির পর দর্শকদের খালি মুখে ফেরত দিলে কেমন দেখায় তাই বুঝি আরেকটি গোল করেছে আর্জেন্টিনা। আলমাদার বদলি নামা জিউলিয়ানো সিমিওনে ৭১ মিনিটে সেই গোলদাতা। ব্রাজিলের রক্ষণ ভেঙেচুরে বাঁ দিক থেকে ঢুকে পড়া টাগলিয়াফিকোর ক্রস বেশ কঠিন কোণ থেকে নেওয়া শটে গোল করেন আর্জেন্টিনার সাবেক মিডফিল্ডার ডিয়েগো সিমিওনের এই ছেলে।
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com