ঢাকা      রবিবার, ১৬ জুন ২০২৪, ১ আষাঢ় ১৪৩১
শিরোনাম

আইসিসি কী এবং কেন তারা ইসরাইল ও হামাস নেতাদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কথা ভাবছে

IMG
22 May 2024, 6:06 AM

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট বা আইসিসি শিগগিরই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ ইসরাইলি এবং হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারে। দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধের সাত মাসেরও বেশী সময় পার হওয়ার পর আদালতের প্রধান কৌঁসুলি এই অনুরোধ জানিয়েছেন।

করিম খান জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে নেতানিয়াহু, ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট এবং হামাসের তিন নেতা - ইয়াহিয়া সিনওয়ার, মোহাম্মদ দেইফ এবং ইসমাইল হানিয়া গাজা উপত্যকা এবং ইসরাইলে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী।

আইসিসি ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্বের সবচেয়ে জঘন্যতম নৃশংসতা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা এবং আগ্রাসনের অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসাবে এই আদালতটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

রোম স্ট্যাচিউটের মাধ্যমে আইসিসি তৈরির পরিকল্পনা ১৯৯৮ সালে গৃহীত হয়েছিল এবং ২০০২ সালের ১ জুলাই ৬০টি দেশ থেকে অনুমোদন লাভ করে একে কার্যকর করা হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ আইসিসিকে অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু এটা একটি স্বাধীন আদালত।

পুলিশ বাহিনী ছাড়া আইসিসি সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারের জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলির উপর নির্ভর করে, যা বিচারের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। নেতানিয়াহু গত মাসে বলেন, ইসরাইল তাদের “আত্মরক্ষার মৌলিক অধিকারকে ক্ষুণ্ন করার আইসিসির যেকোনো প্রচেষ্টাকে কখনোই মেনে নেবে না।” তিনি বলেন, আইসিসি ইসরায়েলের পদক্ষেপের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না। তবে এটি “একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করবে।”

আইসিসি কী?

আইসিসির ১২৪ সদস্যভুক্ত দেশ রোম স্ট্যাচিউট বা রোম সংবিধিতে স্বাক্ষর করেছে। কয়েক ডজন দেশ যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা এবং অন্যান্য অপরাধের বিষয়ে আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করেনি এবং তাতে স্বাক্ষর করেনি। ঐসব দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন।

আন্তর্জাতিক আদালত তখনই জড়িত হয়, যখন দেশগুলি তাদের ভূখণ্ডে কোন অপরাধের বিচার করতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক হয়। ইসরাইলের যুক্তি যে, তাদের একটি কার্যকরী আদালত রয়েছে যা কর্মক্ষম। অতীতে দেখা গেছে, বিচার করতে কোন দেশের সক্ষমতা বা সদিচ্ছা নিয়ে যখন মতবিরোধ হয়েছে, তখন সেই দেশের সাথে আইসিসির বিরোধ হয়েছে।

তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালে আইসিসির প্রসিকিউটর এবং প্রসিকিউশন অফিসের আরেক শীর্ষ কর্মীর ওপর অর্থনৈতিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। আইসিসি কর্মীরা আফগানিস্তানে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং মিত্র সেনাদের ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের তদন্ত করছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যার প্রশাসন গাজা অভিযানের জন্য ইসরাইলকে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও রাজনৈতিক সমর্থন সরবরাহ করেছে, ২০২১ সালে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে।

আন্তর্জাতিক আদালতে ১৭টি তদন্ত চলছে, মোট ৪২টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে এবং ২১ জন সন্দেহভাজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আইসিসির বিচারকরা ১০ জন সন্দেহভাজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন এবং চারজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।

এই আদালতকে শুরুর দিকের বছরগুলিতে আফ্রিকার অপরাধের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করার জন্য সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে বর্তমানে তারা এশিয়া, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, এবং ল্যাটিন আমেরিকায় তদন্ত চালাচ্ছে।

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সঙ্গে আইসিসির সম্পর্ক

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০১২ সালে ফিলিস্তিনীদের মর্যাদা একটি সাধারণ পর্যবেক্ষক থেকে সদস্য নয়, কিন্তু পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রে উন্নীত করে। এর ফলে আইসিসিসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের যোগদানের দ্বার উন্মুক্ত হয়। আইসিসি ২০১৫ সালে "দ্য স্টেট অব প্যালেস্টাইন"কে সদস্য হিসেবে গ্রহণ করে, যেটা ছিল ফিলিস্তিনি আদালতের এখতিয়ার মেনে নেয়ার এক বছর পর।

আদালতের তৎকালীন প্রধান কৌঁসুলি ২০২১ সালে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সম্ভাব্য অপরাধের তদন্ত শুরু করছেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। ইসরাইল প্রায়ই জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পক্ষপাতিত্ব করছে বলে অভিযোগ করে থাকে এবং নেতানিয়াহু ঐ সিদ্ধান্তকে ভন্ডমি এবং ইহুদী বিদ্বেষী বলে নিন্দা জানান।

আইসিসির বর্তমান প্রধান কৌঁসুলি খান ডিসেম্বর মাসে রামাল্লা এবং ইসরায়েল সফর করেন। সেখানে তিনি ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা এবং গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় নিহত বা জিম্মি হওয়া ইসরাইলি পরিবারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

খান হামাসের অভিযানকে “সবচাইতে গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধ যা মানুষের মানবিক বোধকে কষাঘাত করে” বলে অভিহিত করেন এবং সমস্ত জিম্মিদের অতিসত্বর এবং নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান জানান।

খান বলেন, ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে “আন্তর্জাতিক মানবিক আইন প্রয়োগ এখনও বহাল রাখা অপরিহার্য” এবং “ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানে যে আইন অবশ্যই প্রয়োগ করা হবে।" সফর শেষে খান বলেন, হামাস ও ইসরাইলি বাহিনীর সম্ভাব্য অপরাধের বিষয়ে আইসিসির পক্ষে তদন্ত করা “আমার অফিসের জন্য অগ্রাধিকার হবে।”

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন