ঢাকা      বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১
শিরোনাম

পানির নিচে নোয়াখালীর সরকারি অফিস

IMG
02 July 2024, 4:49 PM

মাওলা সুজন নোয়াখালী: ভারী ও টানা বর্ষণে ডুবেছে নোয়াখালী জেলা শহর। জলাবদ্ধতায় আটকে আছে লাখো মানুষ। ডুবে গেছে সড়ক, বাসাবাড়িতেও ঢুকছে পানি। বাদ যায়নি সরকারি অফিস সমূহ। জলাবদ্ধতায় বিঘ্নিত হচ্ছে সেবা। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে খাল খননের ফলে কমেছে জলাবদ্ধতা। তবে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে দুই দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন পৌর মেয়র।

আজ মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর নোয়াখালী কার্যালয় জানিয়েছে, সোমবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত মাত্র ৬ ঘণ্টায় ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দিনেও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।

সরেজমিনে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস সমূহ ঘুরে দেখা যায়, পানিতে ডুবে গেছে বিভিন্ন সরকারি অফিস। জলাবদ্ধতায় ডুবে গেছে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়। অফিস কক্ষে পানি ঢুকে যাওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে সেবা কার্যক্রম। পানিতে ডুবে গেছে জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, জেলা সিভিল সার্জন বাসভবনের সড়ক।

এছাড়া পানিতে ডুবে গেছে জেলা আবহাওয়া অফিস, জেলা মৎস্য অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বেসরকারি অফিস সমূহ। এতে জীবিকার তাগিদে বের হওয়া শ্রমজীবী-কর্মজীবী, অফিসগামী মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ে।

মোাজাম্মেল হোসেন নামে একজন বলেন, বর্ষার সময় বৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্ত বৃষ্টির পরে শহরে যে জলাবদ্বতা সৃষ্টি হয়েছে তাতে ভোগান্তি চরমে। বড় মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী, তাকে নিয়ে পানি মাড়িয়ে পরীক্ষা সেন্টারে যেতে খুবই কষ্ট হয়েছে।

আলাউদ্দিন নামে আরেকজন বলেন, পুরো শহরে যে অবস্থা তাতে বৃষ্টি এভাবে অব্যাহত থাকলে সবই ডুবে যাবে।

সামিহা নামে একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের স্কুলের সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। যাওয়া আসা করতে কষ্ট হচ্ছে।

একটি সরকারী অফিসে সেবা নিতে আসা কামরুন নাহার বলেন, এমন আজব পরিস্থিতিতে কখনো পড়িনি। এতো গুরুত্বপূর্ণ অফিস অথচ পানির নিচে ডুবে গেছে। সেবা প্রত্যাশীদের অসুবিধা হচ্ছে। যারা সেবা দিচ্ছে তারাও পানিতে ডুবে ডুবে সেবা দিচ্ছে। লজ্জায় পড়েছি এই অফিসে এসে।

পৌর বাসিন্দা আবদুর জলিল বলেন, সড়কের থেকে ড্রেনের উচ্চতা বেশি তাই পানি রাস্তায় জমে থাকে। এতে করে জলাবদ্ধতা যেমন হয়, তেমন সড়কেরও ক্ষতি হয়। কারা এসব ড্রেন তৈরি করে মাথায় আসে না। বেশির ভাগ ড্রেন ও নালা বন্ধ রয়েছে।

জেলা মৎস্য অফিসে সেবা নিতে আসা মো. সাইফ বলেন, মৎস্য অফিসে মাছ চাষ করার মতো জলাবদ্ধতা হয়েছে। এই অবস্থা যদি জেলা শহরে হয় তাহলে আমাদের বলার কিছু থাকে না। যারা ভোগান্তিতে আছে তারাই বুঝবে কত কষ্ট।

জেলা প্রশাসকের বাংলোর একজন কর্মচারী বলেন, ডিসি স্যারের বাংলোর সামনের সড়কে পানি উঠে গেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বাংলোতেও পানি ঢুকবে। এক ভয়াবহ অবস্থার ভেতরে আছি।

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. ইব্রাহিম বলেন, পুলিশ সুপার কার্যালয়ের নিচ তলায় আমার অফিস। আমার অফিসে পানি ডুকেছে। আমি নিজেই জলাবদ্ধতায় আটকে আছি। পুলিশ সুপার কার্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম প্রায় বন্ধের পথে এই জলাবদ্ধতার কারণে। পাশাপাশি বিভিন্ন নথিপত্র ও আসবাবপত্র ক্ষতির মুখে আছে। কি বলব আমার বাসভবনের সড়কটিও ডুবে গেছে জলাবদ্ধতায়।

জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আজও সারা দিন বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ভারী বর্ষণের ফলে আমার অফিস ও সড়ক ডুবেছে। আমিও জলাবদ্ধতায় আটকে আছি।

পানি উন্নযন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী আমির ফয়সাল বলেন, জলাবদ্ধতা রোধ প্রকল্পে শহর ও আশপাশের ১৬১ কিলোমিটার খাল খনন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালী। সাথে সাথে নোয়াখালী খালও খনন করা হয়েছে। যেটা নোয়াখালীর দুঃখ ছিল। তবে পুরোপুরি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে ড্রেন ও নালা রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।

নোয়াখালীর পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল বলেন, সরকারি অফিসসহ বিভিন্নস্থানে জলাবদ্ধতার ফলে ভোগান্তির বিষয়ে আমি খবর পেয়েছি। আসলে ড্রেনগুলো পরিষ্কার না থাকায় এমন হয়েছে। পৌরসভার কর্মীরা কাজ করছে। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে সাময়িকভাবে এটা হয়েছে। আগামী দুই এক দিনের মধ্যে এটি সমাধান হয়ে যাবে বলে আমি আশা করছি।


বাংলাদেশ গ্লোবাল/এফআর

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন