ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল: অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৪ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ বাবদ সংশোধিত বাজেট ছিল ৩ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। আর মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৪ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। আজ জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত বাজেট বক্তৃতায় তিনি এই প্রস্তাব করেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, প্রাণিজ আমিষের শতভাগ চাহিদা মেটানোর সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে তার সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মৎস্যখাতে সময়োপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের সফল বাস্তবায়নের ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মৎস্য উৎপাদন হয়েছে ৪৯.১৫ লক্ষ মেট্রিক টন।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিসারিজ এন্ড একুয়াকালচার ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে ৩য় এবং বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম স্থানে রয়েছে। ইলিশ উৎপাদনকারী দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১ম। দেশীয় মাছকে সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে ৪০ প্রজাতির দেশীয় মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। জেনেটিক গবেষণার মাধ্যমে মাছের উন্নত জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। দেশের ক্রমবর্ধমান প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগির টেকসই জাত উন্নয়ন, সুষম খাদ্য ব্যবস্থাপনা এবং রোগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উৎপাদন দ্বিগুণ করার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্য সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সুনীল অর্থনীতির বিকাশ সাধনে সামুদ্রিক মৎস্য আইন, ২০২০, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ নীতিমালা, ২০২২ এবং সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালা, ২০২৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন 'সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ' প্রকল্পের মাধ্যমে মনিটরিং, কন্ট্রোল, সার্ভিলেন্স (এমসিএস) ব্যবস্থা প্রণীত হয়েছে এবং চট্টগ্রামে জয়েন্ট মনিটরিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর ফলে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নে ৫টি মেরিন ফিশারিজ সার্ভিলেন্স চেকপোস্ট নির্মাণ এবং ৬টি পেট্রোলিং ভেসেল ও হাইস্পীড বোট সংযোজনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরি রোমে ন্যাশনাল প্ল্যান অব একশন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, মৎস্য গবেষণা ও জরিপ জাহাজ ‘আর ভি মীন সন্ধানী’ কর্তৃক বঙ্গোপসাগরে এ পর্যন্ত ৪৪টি সার্ভে ক্রুজ পরিচালনা করে জৈবিক বিশ্লেষণের জন্যে ডাটা সংরক্ষণ করা হয়েছে। সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনাসহ সামগ্রিক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারণে তৈরি করা হচ্ছে মেরিন স্পেশাল প্লানিং যা সামুদ্রিক সেক্টরের জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের সহব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণে ৪৫০টি মৎস্যজীবী গ্রাম প্রতিষ্ঠা করে জেলেদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ১৪.৫.১ অনুযায়ী মোট সামুদ্রিক এলাকার ১০ শতাংশ সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ইতোমধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গভীর সমুদ্রে ৬৯৮ বর্গ কি. মি মেরিন রির্জাভ এরিয়া এবং নিঝুমদ্বীপ সংলগ্ন ৩১৮৮ বর্গ কি. মি এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা ব্যবস্থাপনার নিমিয় নিঝুমদ্বীপ সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকার ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সর্বোপরি, ‘গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণে পাইলট প্রকল্প’ বাস্তবায়িত হচ্ছে, যার আওতায় টুনা আহরণের নিমিত্ত দু’টি সামুদ্রিক ভেসেল ক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এ সকল কার্যক্রমের ফলে সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন ২০১০-১১ অর্থবছরে ৫.৪৬ লক্ষ মেট্রিক টন থেকে ২৪.৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬.৭৯ লক্ষ মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, মৎস্য আহরণে দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকার জেলেদের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেণ গ্রহণ করছে। কর্মহীন সময়ে সরকার জেলেদের খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সামুদ্রিক অর্থনৈতিক এলাকায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন এবং সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও সংরক্ষণের জন্য প্রতি বছর ২০ মে হতে ২৩ জুলাই পর্যন্ত (মোট ৬৫ দিন) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক জলসীমায় সকল ধরণের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। ২০২৩ সালে নিষিদ্ধকালীন মোট ৬৫ দিনের জন্য ১৪টি জেলার ৬৮টি উপজেলায় ২ লক্ষ ৯৯ হাজার ১৩৫টি জেলে পরিবারকে মাসে ৪০ কেজি হারে মোট ২৬ হাজার ৮৩ মে.টন ভিজিএফ (চাল) বিতরণ করা হয়েছে। এই কার্যক্রম আগামী অর্থবছরেও চলমান থাকবে।
তিনি আরও বলেন, মৎস্যের পাশাপাশি গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগির টেকসই জাত উন্নয়ন এবং রোগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্মার্ট লাইভস্টক সেক্টর গঠনের পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত ন্যূনতম প্রাণিজ আমিমের চাহিদার ভিত্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। প্রাণিস্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগে টিকা উৎপাদন ও প্রয়োগ বাড়ানো হয়েছে। 'শেখ হাসিনার উপহার, প্রাণির পাশেই ডাক্তার'- এই নীতি সামনে রেখে প্রাণিচিকিৎসা সেবা খামারির দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য ৩৬০টি উপজেলায় মোবাইল ভেটেনারি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। এছাড়া দৈনিক মাথাপিছু প্রোটিনের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন, টিকা প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ গ্লোবাল/এফআর
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com