ঢাকা      শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১
শিরোনাম

সংবাদপত্র ব্যবসায় ওমর আলী শিকদারের অর্ধশত বছর

IMG
03 July 2024, 7:32 PM

আরিফুর রহমান মাদারীপুর: সংবিধানের ৪র্থ স্তম্ভ সংবাদ মাধ্যম। আজকের বাংলাদেশে সংবাদপত্র ছাপা হয় ১৮৪৭ সালে রংপুর থেকে সাপ্তাহিক রঙ্গপুর বার্ত্তাবহ। দেশ বিদেশের নানা ঘটনা জানার জন্যই আমরা সাধারণত সংবাদপত্র পড়ি। একটা সময় ছিল খবরের কাগজ পাঠক বাসা বাড়ি অফিস আদালত, চায়ের দোকান, লাইব্রেরী সহ বিভিন্ন জায়গায় পড়তো। কোন ঘটনার ঘটার পর প্রতিবেদক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে সাদা কাগজে লিখে ডাকযোগে ঢাকায় প্রেরণ করতো। পাঠক সেই খবর সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতো ৩/৭ দিন পর। কালের বিবর্তনে এখন আর পাঠক খবরের কাগজ বেশি একটা পড়ে না। প্রযুক্তির যুগে আর সেই খবর পাঠক জানে যখনই ঘটনা ঠিক তখনই।

ছাপা সংবাদপত্রের বন্টনে যুক্ত থাকেন হকররা। যারা নিরলসভাবে কাজ করে যান মানুষের জন্য-সংবাদপত্রের জন্য। মাদারীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলে সংবাদপত্রের ব্যবসা করতেন স্থানীয় মরহুম নেছারউদ্দিন খন্দকার। তার এই ব্যবসায় ব্যাপক সুনাম ও খ্যাতি রয়েছে। কথা হয় তাঁর হাত ধরে দীর্ঘ ৫০ বছর যাবত সরাসরি খবরের কাগজের ব্যবসা করেন স্থানীয় ওমর আলী শিকদারের সাথে। একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানান এ পেশার নানান তথ্য।

ওমর আলী শিকদার মাদারীপুর শহরের আমিরাবাদে ১৯৫৬ সালের পহেলা মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম লেহাজদ্দিন শিকদার পেশায় ছিলেন ব্যবসায়ী। মাতা হামিদা বেগম। ১৯৭০ সালে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করে দেশ স্বাধীনের পর সংসারের হাল ধরেন। ১৯৭৫ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারীতে প্রথম সংবাদপত্র বিক্রির কাজে যোগ দেন স্থানীয় মরহুম নেছারউদ্দিন খন্দকারের সাথে।

তিনি মাদারীপুর বণিক সমিতির দুই বারের প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ সংবাদপত্র এজেন্ট এসোসিয়েশনের কার্যকরী সদস্য ও ৩নং ওয়ার্ডের পৌর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৮৪ সালের ৬ জুন সুলতানা বেগমের সাথে দাম্পত্য জীবনে আবদ্ধ হন। তাদের পরিবারে রয়েছে ২ ছেলে শরাফাত হোসেন ইরাদ ও রিয়াফাত হোসেন ইরান এবং মেয়ে কামরুন নাহার।

ওমর আলী শিকদার জানান, আমার মালিক নেছারউদ্দিন সাহেব ১০/১২টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার এজেন্ট এবং শহরের পুরান বাজারে নেছারিয়া লাইব্রেরীর মালিক ছিলেন। তৎকালীন তাঁর বিশাল পত্রিকার ব্যবসা এবং লাইব্রেরীর ব্যবসায় খুব জমজমাট ছিল। তাঁর অধীনস্ত ১৫ বছর সংবাদপত্রের ব্যবসার সাথে ছিলাম। তখন প্রথম পত্রিকা বিলি করে ৩’শ টাকা পেয়ে খুব খুশি হলাম। নেছারউদ্দিন সাহেবের ছিলেন অমায়িক মানুষ। আজও তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। ঢাকার জাতীয় পত্রিকার মালিকরা তাকে খুব ভালবাসতেন এবং শ্রদ্ধা সম্মান করতেন। ঢাকার সদরঘাট হতে লঞ্চে এবং ফুলবাড়িয়া হতে গাড়ীতে দক্ষিণাঞ্চলে পত্রিকা আসতো। এখান থেকে গোপালগঞ্জ, গৌরনদী, ভাংগা, শরীয়তপুর সহ বিভিন্ন অঞ্চলে পত্রিকা বিতরণ করা হতো। এসব কাজে খন্দকার সাহেবের অধীনের শতশত কর্মচারী ও হকার চাকরী করছেন। তাঁর সাথে কাজ করে অনেকেই পত্রিকার এজেন্ট হয়েছেন। আমি তাঁর সাথে ১৫ বছর কাজ করেছি।

তিনি আরও জানান, ১৯৯০ সালে নিজে সংবাদপত্রের এজেন্সীর নিয়ে পত্রিকার ব্যবসা শুরু করি। জাতীয় সংসদ নিবার্চন উপলক্ষে ১৯৯১ সালে সংবাদপত্রের মাদারীপুরে স্বর্ণযুগ ছিল। তখন ৮/১০টি পত্রিকার ৩ হাজার কপি আসতো। ২০২০ সালে করোনাকালীন লকডাউনের কারণে পত্রিকা ব্যবসার ধস নামে। আমরা ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকার ক্ষতিগ্রস্থ হই। অনলাইনের কারণে বর্তমানে মানুষ ছাপা পত্রিকার পাঠক নাই বললেই চলে। বর্তমানে মাদারীপুর শহরে সর্বমোট ১২’শ পত্রিকা আসে। আগামীতে ছাপা পত্রিকার পাঠক থাকবে কি না আমার সন্দেহ রয়েছে।

তিনি আরও জানান, পত্রিকার ব্যবসা এক সময় খুব ভালো ছিল। ছাপা পত্রিকা থেকে পাঠকের আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় এখন আর ব্যবসা নাই। গত ২০২৩ সালে ওমরা হজ্জ্ব পালন করে এসেছি। আগামীতে এই ব্যবসা আর করতে মন চায় না।

উল্লেখ্য, মাদারীপুর জেলায় বর্তমানে সংবাদপত্র ব্যবসায়ী রয়েছেন ৯ জন। আর এই সংবাদপত্র সূর্যোদয়ের সাথে সাথে পাঠকের হাতে পৌছে দেন প্রায় ৪০ জন হকার। এর মধ্যে ওমর আলী শিকদারের রয়েছেন ১০ জন।



বাংলাদেশ গ্লোবাল/এফআর

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন