ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: নেপালে গতকাল শুক্রবার দেশটির পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক মাওবাদী নেতা পুষ্পকমল দাহাল ওরফে প্রচন্ড আস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পর নতুন জোট সরকার গঠন হতে যাচ্ছে। নতুন এই সরকারের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সরকার গঠন করেছিলেন পুষ্পকমল দাহাল। তখন তৃতীয়বারের মতো নেপালের প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। এরপর ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে তাঁকে তিনবার জোট বদলাতে হয়। আর পাঁচবার পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে হয়। গতকাল পঞ্চমবারের অনাস্থা ভোটে হেরে যান তিনি।
ইউএমএল পার্টির আইনপ্রণেতা যোগেশ ভট্টরাই গতকাল বলেন, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে নতুন জোট সরকারের প্রয়োজন ছিল।
এর মধ্য দিয়ে নেপালে ২০ মাস ধরে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার নিরসন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০০৮ সালে নেপালে ২৩৯ বছরের পুরোনো রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে। এর পর থেকে গণতান্ত্রিক নেপালে চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা। কে পি শর্মা অলি নতুন সরকার গঠন করলে সেটা হবে ২০০৮ সালের পর দেশটিতে ১৪ তম গণতান্ত্রিক সরকার।
নেপালের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি সব সময় বড় দুই প্রতিবেশী ভারত ও চীনের কড়া নজরদারিতে থাকে। হিমালয়ঘেঁষা নেপালে এই দুই দেশের বড় বিনিয়োগ রয়েছে। দিল্লি ও বেইজিং নেপাল ও নেপালের রাজনীতিতে প্রভাব রাখতে চায়।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহালের সরকারের ওপর থেকে গত সপ্তাহে সমর্থন তুলে নেয় অন্যতম বৃহত্তম জোটসঙ্গী লিবারেল কমিউনিস্ট ইউনিফায়েড মার্ক্সিস্ট লেনিনিস্ট (ইউএমএল) পার্টি। দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন কে পি শর্মা অলি।
এরপর পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে ৬৯ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহালের সামনে দু’টি বিকল্প খোলা ছিল। হয় তাঁকে সরকার প্রধানের পদ ছাড়তে হবে, নতুবা পার্লামেন্টে নিজের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে। পুষ্পকমল দাহাল দ্বিতীয় বিকল্প বেছে নিয়ে ব্যর্থ হন।
কে পি শর্মা অলি এর আগে দু’বার নেপালের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। গত জুনের শেষের দিকে তিনি মধ্যপন্থী দল নেপালি কংগ্রেসের (এনসি) সঙ্গে একটি চুক্তি করেন। এর ফলে পার্লামেন্টে এই জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পথ সুগম হয়। তখন থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, কে পি শর্মা অলি নতুন সরকার গড়বেন।
তবে গতকাল পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে পুষ্পকমল দাহাল হেরে যাওয়ার পর কে পি শর্মা অলির নেতৃত্বে নতুন জোট সরকার কবে নাগাদ দায়িত্ব নেবে, সে সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি।
ভোটাভুটিতে উতরে যেতে সাবেক মাওবাদী নেতা পুষ্পকমল দাহালের ২৭৫ আসনের পার্লামেন্টে ন্যূনতম ১৩৮টি ভোট দরকার ছিল। গতকাল পার্লামেন্টে হাজির ছিলেন ২৫৮ সদস্য। তাঁদের মধ্যে পুষ্পকমল দাহালের পক্ষে ভোট দেন মাত্র ৬৩ জন। আর বিপক্ষে ভোট পড়ে ১৯৪টি। বাকি একজন ভোটদানে বিরত ছিলেন।
স্পিকার দেব রাজ ঘিমিরি ভোট গণনা শেষে বলেন, আস্থা ভোটে পার্লামেন্ট সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহালকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে সরকার গঠন করেছিলেন পুষ্পকমল দাহাল। তখন তৃতীয়বারের মতো নেপালের প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। এরপর সরকার টিকে তাঁকে তিনবার জোটসঙ্গী বদলাতে হয়। আর পাঁচবার পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে হয়। গতকাল পঞ্চমবারের অনাস্থা ভোটে হেরে যান তিনি।
ইউএমএল পার্টির আইনপ্রণেতা যোগেশ ভট্টরাই গতকাল বলেন, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে নতুন জোট সরকারের প্রয়োজন ছিল।
পার্লামেন্টে ভোটাভুটির আগে গতকাল এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল বলেন, কে পি শর্মা অলির নেতৃত্বে বড় দুটি রাজনৈতিক দলের জোটের অবস্থান গণতান্ত্রিক চর্চার বিরুদ্ধে।
নেপালি কংগ্রেস দেশটির পার্লামেন্টে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। আর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ইউএমএল। এই দুটি দল এখন নেপালে জোট সরকার গঠন করবে।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে ৬৯ বছর বয়সী এই নেতা তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তবে জোট মিত্ররা সমর্থন প্রত্যাহার করায় তাকে এখন পদত্যাগ করতে হবে। সবচেয়ে বড় মিত্র উদারপন্থী কমিউনিস্ট ইউনিফায়েড মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী (ইউএমএল) পার্টি গত সপ্তাহে প্রচন্ডের সরকারের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে। ফলে তিনি হয় পদত্যাগ করতে বা পার্লামেন্টে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে বাধ্য হন।
ক্ষমতা ধরে রাখতে ২৭৫ সদস্যের পার্লামেন্টে তার পক্ষে কমপক্ষে ১৩৮ ভোট প্রয়োজন ছিল। এদিন পার্লামেন্টে উপস্থিত ২৫৮ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ৬৩ জন তাকে সমর্থন জানান। পার্লামেন্টের স্পিকার দেব রাজ ঘিমিরে ব্যালট গণনা করার পরে ঘোষণা করেন, প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহলকে আস্থা ভোটে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এখন প্রচন্ড পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য সংসদীয় ভোট না হওয়া পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পদে বহাল থাকবেন।
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com