ঢাকা      রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
শিরোনাম

আমদানিতে অনিচ্ছা, দাম কমানোতে আগ্রহী মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

IMG
06 September 2024, 4:30 PM

ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল: আমদানি নয়, দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়াটাই বেশি জরুরি বলে মনে করছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো গোশত আমদানি করতে চাচ্ছি না। বরং গবাদিপশুর উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে গোশতের দাম কমানোর বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

ফরিদা আখতার বলেন, ‘ব্রাজিলসহ অন্যান্য দেশ থেকে নতুন করে হিমায়িত গরুর গোশত আমদানির পক্ষে একটি মহল তৎপরতা শুরু করেছে। তারা নানাভাবে চাপ দিচ্ছে। আমরা কোনো গোশত আমদানি করতে চাচ্ছি না। কারণ বিদেশ থেকে এসব গোশত এসে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগবে। সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত না করার কারণে অনেক ক্ষেত্রে গরুর গোশতের পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে পারে। ফলে এসব খাবারে নানা রোগ-ব্যাধি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রতি বছর কোরবানির ঈদে ২০-২৫ লাখ পশু অবিক্রিত থেকে যায়। দেশে লাখ লাখ গবাদিপশুর খামারি রয়েছে। তবুও দাম বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে গোশত আমদানি করলে প্রথমে হয়তো কম দামে পাওয়া যাবে, কিন্তু গোশতের চাবিকাঠি চলে যেতে পারে অন্য দেশের কাছে। লাখ লাখ লোক গবাদিপশু পালন করছে। এই বাজারটা নষ্ট করে ফেললে আমাদের সমাজটা কোন অবস্থায় পড়বে এটাও চিন্তা করার বিষয়।’

জনগণ যাতে স্বল্প ও ন্যায্যমূল্যে গোশত খেতে পারে এবং খামারিরা টিকে থাকতে পারে সেজন্য উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে গোশতের দাম কমানোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, মাছ, মাংস, দুধ ও ডিমের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য মানুষের কাছে সহজলভ্য করা প্রয়োজন। সেজন্য এগুলোর নিরাপদ উৎপাদন নিশ্চিত করা হবে।

সিন্ডিকেট ও করপোরেট ব্যবসায়ীদের কারণে পশু খাদ্য, গোশত-ডিমের দাম বেড়ে যায় অভিযোগ করে ফরিদা আখতার বলেন, ‘এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।’

জলাশয়ের মাছ উৎপাদনে বেশি নজর:
ফরিদা আখতার বলেন, ‘চাষের মাছ উৎপাদনে আমরা শীর্ষে বা অমুক চাষের মাছ ভালো করছে, এসব তথ্যে আমি মুগ্ধ না। আমাদের দেশি মাছ হাওর-বাঁওড় ও মুক্ত জলাশয়ের মাছ উৎপাদনের দিকে বেশি নজর দিতে চাই। দেশি তিন শতাধিক মাছ ছিল। সেগুলো ফিরিয়ে আনতে চাই। আবার মাছ, পোলট্রি ও মাংস খাতে ফিড নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। এর নিরাপদ উৎপাদন নিশ্চিত করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘একসময় নদী থেকেই আসত বেশির ভাগ মাছ। কিন্তু এখন মোট উৎপাদিত মাছে নদীর অংশ একেবারেই অপ্রতুল। বাংলাদেশে নদীকেন্দ্রিক জলাধার থাকলেও তা মাছ উৎপাদনে সফলভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না।নদীতে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য, নদীদূষণের কারণে মাছের উৎপাদন কমছে।’

এসব সমস্যার সমাধান পেতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সামগ্রিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হবে বলে জানান মৎস্য উপদেষ্টা।

পশুখাদ্যের দাম কমানোর উদ্যোগ:
উপদেষ্টা বলেন, ‘খামারিদের খরচ কমাতে পশুখাদ্যের দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া বিদ্যুৎ বিলে কৃষি খাতের মতো ভর্তুকির বিষয়েও আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলছি। এই খাতের প্রান্তিক চাষি ও উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হবে। উন্নত জাত লালন-পালনকে সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি দেশীয় জাতের পশু টিকিয়ে রাখতে করণীয়গুলোও নির্ধারণ করা হবে।’

গবাদিপশুর চিকিৎসা:
ফরিদা আখতার বলেন, ‘ভেটেরিনারি হাসপাতালে মানুষ গবাদিপশুর চিকিৎসা সঠিকভাবে না পাওয়া নিয়ে অভিযোগ রয়েছে বলে শোনা যায়। এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি। গবাদিপশুর চিকিৎসক সঠিক তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবহেলা অভিযোগ থাকলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রাণিসম্পদ খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ:
উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে আমরা কঠোর। জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে। এই সরকারের সময় কেউ দুর্নীতি করলে পার পাবে না। তাই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবে না। কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দেশের চাহিদা মেটানোর পর হবে ইলিশ রপ্তানি:
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে তারপর ইলিশ মাছ বিদেশে রপ্তানি করা হবে। দেশের মানুষ ইলিশ পাবে না, আর রপ্তানি হবে সেটা হতে পারে না। ফলে এবার দুর্গাপূজায়ও ভারতে যাতে কোনো ইলিশ না যায় তার জন্য আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার দায়িত্ব নিয়েই ইলিশ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বিশ্বের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ইলিশ বাংলাদেশে উৎপাদন হচ্ছে। ইলিশ নিয়ে গর্বের পাশাপাশি আমাদের এখানে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ অবস্থায় ইলিশের প্রজননস্থল ও অভয়াশ্রমগুলোর নিরাপত্তা ও সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করতে না পারলে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রজনন মৌসুমে মা মাছ ও জাটকা ইলিশের সুরক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। স্বল্পমেয়াদি উদ্যোগ হিসেবে আমরা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। সেখানে আমরা দেখছি, প্রচুর মাছ অবৈধভাবে পাচার হচ্ছে। বেশিরভাগই যাচ্ছে ভারতে। সেটি বন্ধে আমরা আরও কঠোর হচ্ছি। অবৈধ পথেও যাতে কোনো ইলিশ যেতে না পারে সে বিষয়ে সীমান্ত এলাকায় কঠোর থাকতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছি।’

স্বল্প সময়ের মধ্যে ইলিশের দাম মানুষের সাধ্যের মধ্যে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান ফরিদা আখতার।

পোলট্রি খামারিদের সহযোগিতা:
উপদেষ্টা বলেন, ‘পোলট্রি খাতে এক দিনের বাচ্চার যে দাম, সেটি কয়েকটি কোম্পানির হাতে সীমাবদ্ধ। বড় কোম্পানিগুলোর একচ্ছত্র আধিপত্য থাকায় ছোট ও ক্ষুদ্র খামারিদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে না। খামারিদের স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এসব খাতে নারীরা জড়িত রয়েছেন বেশি। ফলে তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারলে দেশের নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।’

বন্যায় প্রাণিসম্পদের ক্ষয়ক্ষতি:
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের ঋণের কিস্তি তিন মাস স্থগিত রাখার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি বন্যাদুর্গত কুমিল্লা জেলা সরেজমিনে গিয়ে খামারিদের সাথে কথা বলেছি। এ খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গবাদিপশুর আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের বিষয় আমরা ভাবছি। আকস্মিক বন্যায় মৎস্য খাতে ১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা এবং প্রাণিসম্পদ খাতে ৪১১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পর পশুপাখির নানা ধরনের রোগ হয়। তাই প্রয়োজনীয় ওষুধ ও আর্থিক সুবিধা দিতে না পারলে খামারিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না।

এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বেশ কিছু কার্যক্রম ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান ফরিদা আখতার।

তিনি আরও বলেন, ‘পশুখাদ্য সরবরাহ ও বিতরণ, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির রোগ প্রতিরোধে টিকা প্রদান এবং ঘাসের কাটিং বিতরণ করবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও অধিদপ্তর। একইভাবে মৎস্য খাতেও চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পুনর্বাসন কার্যক্রম করা হবে।’

এছাড়াও সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, মৎস্য খামারগুলোকে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সহায়তা এবং চাষিদের মধ্যে পোনা বিতরণ করা হবে বলেও জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা। (ইউএনবি)


বাংলাদেশ গ্লোবাল/এফআর

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

এ বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন