ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে 'যুদ্ধাপরাধের' অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। আদালত বলেছে, নেতানিয়াহু ও গ্যালান্ট 'ইচ্ছাকৃতভাবে এবং জেনেশুনে গাজার বেসামরিক জনগণকে তাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য বস্তু থেকে বঞ্চিত করেছেন' বলে বিশ্বাস করার 'যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি' রয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে হামাসের সেনাপ্রধান মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি। যদিও গত আগস্টে ইসরাইল জানিয়েছিল, গত মাসে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে এক বিমান হামলায় দেইফ নিহত হন।
আইসিসির প্রসিকিউটর করিম খান ছয় মাস আগে প্রথম গ্রেফতারি পরোয়ানার জন্য আবেদন করেন। গত আগস্টে করিম খান আদালতকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, এই কার্যক্রমে যে কোনো অযৌক্তিক বিলম্ব ক্ষতিকারকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকারকে প্রভাবিত করছে।
গ্রেফতারি পরোয়ানা ঘোষণার পর থেকে ইসরাইলি কর্মকর্তারা সমালোচনা করে আসছেন। নেতানিয়াহু বলেছেন, এই রায় ইহুদিবিদ্বেষী। এই রায়ের কোনো গুরুত্ব নেই। ইসরাইলি মন্ত্রী মিরি রেগেভ এটিকে 'ন্যায়বিচারের ছদ্মবেশে আধুনিক ইহুদিবিদ্বেষ' হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তবে আইসিসির এ সিদ্ধান্তকে অনেক দেশ ও নেতা স্বাগত জানিয়েছে। নেতানিয়াহুসহ গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্তরা সেসব দেশে গেলে তাদের গ্রেফতারের ইঙ্গিতও দিয়েছেন।
নেদারল্যান্ডস
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত মূলত নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরই এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, নেতানিয়াহু তাদের দেশের মাটিতে পা রাখলেই তাকে গ্রেফতার করা হবে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) পার্লামেন্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসপার ভেল্ডক্যাম্প বলেন, নেতানিয়াহু ছাড়াও ইসরাইলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট ও হামাস নেতা মোহাম্মদ দেইফের সঙ্গেও নেদারল্যান্ডস কোনো অপ্রয়োজনীয় যোগাযোগ করবে না। নেদারল্যান্ডস রোম সংবিধির সঙ্গেই থাকবে।
অস্ট্রিয়া
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার শ্যালেনবার্গ গ্রেফতারি পরোয়ানাটিকে 'হাস্যকর' বলে অভিহিত করলেও তার অফিস বলেছে, রোম সংবিধির একটি পক্ষ হিসাবে অস্ট্রিয়া আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য।
বেলজিয়াম
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স-এ লিখেছে, যেখানেই অপরাধ সংঘটিত হোক না কেন দায়মুক্তির বিরুদ্ধে লড়াই বেলজিয়ামের জন্য একটি অগ্রাধিকার, যা আইসিসির কাজকে পুরোপুরি সমর্থন করে।
এতে বলা হয়, ইসরাইল ও গাজায় সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়ীদের অবশ্যই সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিচার করতে হবে, তা সে যেই ঘটুক না কেন।
কানাডা
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, তিনি এই রায়কে সম্মান জানাবেন। টেলিভিশনের একটি সাক্ষাৎকারে ট্রুডোকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল।
ট্রুডো জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে তিনি সম্মান জানাবেন। কারণ কানাডা আন্তর্জাতিক আইন মানতে দায়বদ্ধ।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ইইউ'র পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল জানিয়েছেন, আইসিসির পরোয়ানা রাজনৈতিক নয়। এটিকে অবশ্যই সম্মান করা ও বাস্তবায়ন করা উচিত।
তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত একটি বাধ্যতামূলক সিদ্ধান্ত এবং আদালতের সব রাষ্ট্রপক্ষ, যার মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব সদস্য রয়েছে, আদালতের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে বাধ্য।
ফ্রান্স
ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্রিস্টোফ লেমোইন বলেন, ফ্রান্স আইসিসির আইন অনুযায়ী কাজ করবে।
তবে নেতানিয়াহু দেশে এলে তাকে গ্রেফতার করা হবে কিনা সে বিষয়ে কিছু না জানিয়ে তিনি বলেন, এটি 'জটিল আইনগত বিষয়'।
আয়ারল্যান্ড
প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বলেছেন, এই পরোয়ানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আয়ারল্যান্ড আইসিসির ভূমিকাকে সম্মান করে।
ইতালি
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি বলেছেন, রোম মিত্রদের সঙ্গে বিবেচনা করবে কীভাবে এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা করা যায় এবং একসঙ্গে কাজ করা যায়। তারা আইসিসির পরোয়ানাকে সম্মান করেন বলে জানান।
জর্ডন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেছেন, আইসিসির সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে হবে এবং বাস্তবায়ন করতে হবে।
নরওয়ে
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ এইডে বলেন, আইসিসির ম্যান্ডেট ন্যায়সঙ্গতভাবে পালন করা গুরুত্বপূর্ণ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আদালত সর্বোচ্চ ন্যায্যবিচারের মানদণ্ডের ভিত্তিতে মামলাটি এগিয়ে নেবে।
দক্ষিণ আফ্রিকা
এক বিবৃতিতে সরকার আইসিসির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে এবং বলেছে, এটি ফিলিস্তিনে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে এবং সমস্ত রাষ্ট্রপক্ষকে রোম সংবিধিতে তাদের বাধ্যবাধকতা অনুসারে কাজ করার আহ্বান জানায়। আমরা বিশ্ব সম্প্রদায়কে আইনের শাসন সমুন্নত রাখার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
সুইডেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিয়া মালমার স্টেনারগার্ড বলেন, সুইডেন ও ইইউ আদালতের গুরুত্বপূর্ণ কাজে সমর্থন করে এবং এর স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা রক্ষা করে। সুইডিশ আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ গ্রেফতারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
সুইজারল্যান্ড
সুইস ফেডারেল অফিস অফ জাস্টিস জানিয়েছে, রোম সংবিধির অধীনে আইসিসিকে সহযোগিতা করতে তারা বাধ্য। তাই নেতানিয়াহু, গ্যালান্ট বা মাসরি যদি সুইজারল্যান্ডে প্রবেশ করে এবং আদালতে প্রত্যর্পণের উদ্যোগ নেয় তবে তাদের গ্রেফতার করতে হবে।
তুরস্ক
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে 'গণহত্যা' পরিচালনাকারী ইসরাইলি কর্তৃপক্ষকে বিচারের আওতায় আনতে আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা একটি আশাব্যঞ্জক ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ফিদান বলেন, গণহত্যার শাস্তি দিতে আন্তর্জাতিক আইন যাতে বাস্তবায়ন করা হয়, তা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাব।
যুক্তরাজ্য
ব্রিটেন আইসিসির স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারের এক মুখপাত্র। তবে নেতানিয়াহুর গ্রেফতারি পরোয়ানা যুক্তরাজ্য গ্রহণ করছে কি না, তা স্পষ্ট করেননি।
জাতিসংঘ যা বলছে
নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে জানতে চাইলে মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেন, আইসিসির কাজ ও স্বাধীনতাকে সম্মান করেন আন্তোনিও গুতেরেস।
বাংলাদেশ গ্লোবাল/এমএন
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com