ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, নগরবাসীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ট্রাফিক শৃঙ্খলার উন্নতি সাধন আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
তিনি বলেন, জনসম্পৃক্তার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।
শনিবার ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনে পুলিশ, ছাত্র-জনতা ও নাগরিকদের সমন্বয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা একটি জনবহুল নগরী। নগর পরিকল্পনা সঠিকভাবে তৈরি করা হয়নি। যেখানে রাস্তাঘাট থাকার কথা ২৫ শতাংশ, সেখানে রয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। এর ফলে নগরীতে নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যেও সবাইকে সম্মিলিতভাবে এ সমস্যা সমাধান করতে হবে। গত এক মাসে আমরা আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, সাধারণ জনগণের মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে। তবে এর জন্য বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত নয়। মতবিরোধপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনার টেবিলে সমাধান করা উচিত।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানসমূহ একটি নির্দিষ্ট স্থানে করা উচিত। কেননা রাস্তায় সভা সমাবেশ করলে যানজট সৃষ্টি হয়। এতে হাসপাতালগামী রোগী, বিদেশগামী যাত্রীসহ সর্বস্তরের মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে- এই মিছিল বা সমাবেশ যেন অন্যের কাজে বিঘ্ন না ঘটায়।
তিনি বলেন, চাঁদাবাজি একটি সামাজিক সমস্যা। এটি মোকাবিলার জন্য সমাজের প্রতিটি অঙ্গ সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে। কোথায় চাঁদাবাজি হচ্ছে, কারা চাঁদাবাজি করছে তাদের তথ্য আমাদের সরবরাহ করুন। চাঁদাবাজির জন্য নিত্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, চাঁদাবাজি ঠেকানো আমাদের অনেক বড় দায়িত্ব, আমরা চাঁদাবাজদের একটি হালনাগাদ তালিকা তৈরি করছি। এরই ধারাবাহিকতায় চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, হকার উচ্ছেদের ক্ষেত্রে কিছু মানবিক বিষয় আমাদের লক্ষ্য রাখতে হয়। তবে এক্ষেত্রে জনদুর্ভোগ যাতে তৈরি না হয় সে ব্যপারে আমরা সতর্কভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া নির্মানকাজে কাজে ব্যবহৃত ইট, বালু যত্রতত্র রাস্তায় রেখে সাধারন পথচারীর সমস্যা তৈরি না করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
পুলিশ কমিশনার বলেন, মাদক সমস্যার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া মামলাযোগ্য ঘটনার ক্ষেত্রে অবশ্যই থানায় মামলা দায়ের হবে। এক্ষেত্রে কোন ঘটনা যাতে আড়াল না হয় সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছি।
তিনি আরও বলেন,গাড়ীর অতিরিক্ত হর্ন বাজানো নিয়ন্ত্রণের লক্ষে আইন প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা হচ্ছে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছাত্র-জনতা ও রমনা থানা এলাকার নাগরিকবৃন্দ ডিএমপি কমিশনারের কাছে তাদের বিভিন্ন সমস্যা, মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরেন। ডিএমপি কমিশনার উপস্থিত সকলের কথা মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং ডিএমপির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
সভায় উপস্থিত রমনা থানার বিশিষ্ট নাগরিক একরামুল বলেন, পুলিশ জনতা ভাই ভাই। ৫ আগস্টের পর পুলিশের কাজ প্রশংসনীয়। একারণে মানবাধিকার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।
ফৌজিয়া ইসলাম নওশীন বলেন, ‘আপনারা ছাত্রদের ডেকেছেন, আমাদের কথা বলার সুযোগ দিচ্ছেন এজন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই উদ্যোগের ফলে এলাকার সমস্যাগুলো চিহ্নিত হবে এবং সমাধানের একটি পথ বের হবে।
পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াতের মাধ্যমে মতবিনিময় সভা শুরু করা হয়। এরপর গত জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শাহাদাত বরণকারী সকল শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে সকল শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্য মোনাজাত করা হয়।
মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদ আলম । সভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) মো. ইসরাইল হাওলাদার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) হাসান মো. শওকত আলী, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. মাসুদ করিমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ এবং ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ গ্লোবাল/জেএস
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com