রাজবাড়ী, বাংলাদেশ গ্লোবাল: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সেনাবাহিনীর মূল লক্ষ্যই হলো সব পরিস্থিতিতে বিজয়ী হওয়া, দেশকে রক্ষা করা। বলা যাবে না—এখন বর্ষার দিন, এখন আর পারব না কিংবা এখন বেশি গরম এটা পারা যাবে না, বলার উপায় নাই। যে কোনো মুহূর্তে, যে অবস্থায় আছে না কেন প্রয়োজনে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় পূর্ণ সাহস ও প্রস্তুতি নিয়ে। সেটারই একটা মহড়া হলো। ভবিষ্যতে বাস্তব যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য একটা প্রস্তুতি।
রোববার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে রাজবাড়ী মিলিটারি ট্রেনিং এরিয়ার (আরএমটিএ) চর খাপুড়া ও চর রামনগর এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের ব্যবস্থাপনায় শীতকালীন ম্যানুভার অনুশীলন পরিদর্শন শেষে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা সিনেমার পর্দায় যুদ্ধ দেখি সবসময়, সম্মুখ যুদ্ধ দেখি, ইতিহাসের বহু বড় বড় যুদ্ধ আমরা সিনেমার পর্দায় দেখি। প্রথম মহাযুদ্ধের, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের একাবারে প্রকৃত ছবিগুলো দেখি। নানা ব্যাটল তার শত্রুর সম্মুখে হয়েছে সেই দৃশ্য দেখি। করুণ দৃশ্য দেখি, সাহসের দৃশ্য দেখি। অনেকগুলো আমাদের স্মৃতিতে অমর হয়ে থাকে, সারা পৃথিবীর স্মৃতিতে অমর হয়ে থাকে। তাদের বীরত্বের জন্য এবং সাহসের জন্য। সম্পূর্ণ অসহায় অবস্থা থেকে কীভাবে পুরো জিনিসটাকে পাল্টে দিয়ে জয়কে ছিনিয়ে নিয়ে আসে, সেই দৃশ্য দেখেছি। বহু ব্যাটল পৃথিবীতে বিখ্যাত হয়ে আছে। এক একটা ব্যাটেল কীভাবে লড়াই করেছে কীভাবে জিতেছে, কীভাবে শত্রুর কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে-সবকিছুর প্রস্তুতি এভাবেই হয়।
তিন বলেন, আজকের এই প্রস্তুতি দেখে খুব ভালো লাগলো। যাতে এটা ক্রমাগতভাবে আমরা প্রতি মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারি সেটার জন্য। আজে যে সমস্ত ইউনিট অংশগ্রহণ করল, সেই সব সৈনিকদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। যারা পরিচালনা করেছেন তাদেরকেও অভিনন্দন জানাচ্ছি। ক্রমাগত এটা আরও সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে বলে আশা করছি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই মহরায় আসতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। একজন শান্তিকামী মানুষ হিসেবে আমি যুদ্ধের চেয়ে শান্তির মহরা দেখতে আমি বেশি আনন্দবোধ করি। তবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে প্রস্তুতির লক্ষ্যে সামরিক বাহিনীর এই প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এই মহড়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রদর্শিত দক্ষতা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এই মহড়া দেখে আমি সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সক্ষমতা সম্পর্কে আরও আত্মবিশ্বাসি হয়েছি।
ভবিষ্যতে সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা আরও আধুনিকায়নের আশ্বাস দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রশিক্ষণই সর্বোত্তম কল্যাণ, এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে আধুনিক ও যুগপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আভিজানিক দক্ষতা অর্জন করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যগণ সর্বদা প্রস্তুত থাকবে। সেই লক্ষ্যে সেনা সদস্যদের প্রশিক্ষণ হতে হবে বাস্তবসম্মত। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এইরকম একটি মহড়া আয়োজন করতে হলে অনেক পরিশ্রম, পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের প্রয়োজন।
সেনা বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, এই মহড়া দেখে আমি বুঝতে পারছি, এই আয়োজন ৫৫ ডিভিশনের সব সদস্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। তাই আমি কনিষ্ঠতম সৈনিক হতে জিওসি পর্যন্ত সব পদবীকে ধন্যবাদ দিতে চাই। এছাড়া আমাকে এখানে মহড়ায় আমন্ত্রণ জানানোর জন্য সেনাবাহিনীর প্রধানকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই। বরাবরের মতোই বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর দেশের সম্মান ও গৌরব অটুট রাখতে জনগণের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে এবং যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সর্বদা নিজেদেরকে প্রস্তুত রাখবে এই প্রত্যাশা রাখছি।
প্রশিক্ষণ মহড়া পর্যবেক্ষণ করে দুপুরের মধ্যাহ্নভোজন শেষে দুপুর ২টা ৪৭ মিনিটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় যান।
এর আগে বেলা ১১টা ৫৪ মিনিটে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে রওনা হন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দুপুর সাড়ে ১২টা ৩৬ মিনিটের দিকে প্রধান উপদেষ্টাকে বহন করা হেলিকপ্টারটি কালুখালীর মিলিটারি ট্রেনিং এরিয়ার চর খাপুড়ায় হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন।
অনুশীলনস্থলে পৌঁছালে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অভ্যর্থনা জানান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান এবং জিওসি, ৫৫ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার, যশোর এরিয়া মেজর জেনারেল জে এম ইমদাদুল ইসলাম।
প্রধান উপদেষ্টা অনুশীলন অবলোকন শেষে সমাপনী বক্তব্যের শুরুতেই মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রশিক্ষণের এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এগিয়ে চলবে।
পরিশেষে, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা অনুশীলনে অংশগ্রহণকারী সেনাসদস্যদের দক্ষতা ও উঁচুমানের প্রশিক্ষণের প্রশংসা করেন।
প্রায় ১ ঘণ্টাব্যাপী অনুশীলনে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাসদস্যগণ বাস্তবসম্মত যুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে আক্রমণ অনুশীলন সফলভাবে পরিচালনা করেন। অনুশীলনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন প্রকারের অত্যাধুনিক ট্যাংক, এপিসি, গোলন্দাজ বাহিনীর কামান, পদাতিক, ইঞ্জিনিয়ার্স ও কমান্ডোসহ সব আর্মস এবং সার্ভিসেস অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়া, উক্ত মহড়ায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যুদ্ধ বিমান, আর্মি এভিয়েশনের বিমান এবং হেলিকপ্টার অংশগ্রহণ করে।
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com