ঢাকা      বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১
শিরোনাম

ট্রেন চলাচল বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

IMG
28 January 2025, 5:20 PM

ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল: পাবনার ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে খুলনাগামী সাগরদাড়ি এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রী যশোরের মনিরামপুর উপজেলার বাঘদব গ্রামের নবাব আলী তিন দিন আগে টিকিট সংগ্রহ করেও সকালে স্টেশনে এসে অপেক্ষা করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এ সময় তিনি বলেন, আমি ও আমার মেয়ে নিজ গ্রামে যাবো। আজ সকালে স্টেশনে এসে শুনছি, কোনো ট্রেন চলাচল করছে না। এখন কীভাবে বাড়ি যাবো বুঝতে পারছি না। সড়ক পথে যেতে অনেক টাকা খরচ হয়, তাই ট্রেনেই যাতায়াত করি।

এ ছাড়া মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা যাওয়ার জন্য নাটোরের কয়েনবাজার থেকে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে এসেছেন জান্নাত আরা বেগমসহ পরিবারের পাঁচজন। তারা দুই দিন আগে টিকেট সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু তারা জানেন না ট্রেন চলাচল বন্ধ। তারা এখন কীভাবে ঢাকা যাবেন এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

ঢাকা বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার ফুলবাড়িয়া থেকে থেকে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টায় মহানন্দা ট্রেনে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে এসেছেন আব্দুল রাজ্জাকসহ ২৬ জন। এখান থেকে ভোর ৫টায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ঢাকা মেইলে কম খরচে ইজতেমায় যেতে চেয়েছিলেন। এখানে এসে তারা জানতে পারেন, ভোরে ট্রেন ছাড়বে না। তবুও তারা ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষায় স্টেশনে বসে রয়েছেন। এখন স্বল্প খরচে কীভাবে ইজতেমায় যাবেন তাই ভাবছেন।

পাকশী বিভাগীয় রেল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা থেকে ঈশ্বরদী হয়ে সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ঢাকা রুট ও রাজশাহী, জয়দেবপুর, চাপাইনবাবগঞ্জ, ঢালারচর, সৈয়দপুর, সান্তাহারসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন মোট ৯৭টি ট্রেন চলাচল করে। এরমধ্যে আন্তঃনগর ৫৮, মেইল ২৭ এবং লোকাল ১২টি ট্রেন রয়েছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার রাত ১২টা থেকে রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি শুরু হওয়ায় পাকশী রেলবিভাগ দিয়ে মধ্যরাত থেকেই ৯৭টি ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এসব ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছানোর পর থেকে চলাচল বন্ধ রাখা হয়।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ও অন্যান্য লাইনে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ১২টি ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। কোনো ট্রেনের সঙ্গে ইঞ্জিন নেই। স্টেশনে কর্মরত রানিং স্টাফ টিটিই, গার্ড ও ট্রেন চালক কারো দেখা মেলেনি। ঢাকা, খুলনা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার জন্য শত শত যাত্রী স্টেশনে এসে ঘুরে চলে যাচ্ছেন। স্টেশনের মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে অনিবার্যকারণবশত ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ২৮ জানুয়ারি যাত্রা করার জন্য যারা টিকেট সংগ্রহ করেছিলেন তারা কাউন্টারে টিকেট ফেরত দিয়ে টাকা সংগ্রহ করতে পারবেন। আর যারা অনলাইনে টিকেট সংগ্রহ করেছেন তারা অনলাইনের মধ্যে রিফান্ড করতে পারবেন।

ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার সুজন কুমার বলেন, প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৪টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এ স্টেশন থেকে তিনটি ট্রেন চলাচল করলেও মঙ্গলবার ভোর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি। ঢালারচর এক্সপ্রেস, ঢাকা মেইল, ঈশ্বরদী কমিউটারের সব বগি স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু কোন ইঞ্জিন স্টেশনে আসেনি। এ ছাড়া এ স্টেশন হয়ে চলাচলকারী সকাল ৭টা ১০ মিনিটে সাগর দাঁড়ি এক্সপ্রেস ও ৭টা ৪০ মিনিটে ঢাকাগামী মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেন স্টেশনে আসেনি। ভোর থেকে শত শত যাত্রী স্টেশনে এসে ফিরে যাচ্ছেন। পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের বাণিজ্যিক কর্মকর্তার নির্দেশে মাইকিং করে ২৮ তারিখে যাত্রীদের টিকেট কাউন্টারে ফেরত দিয়ে টাকা সংগ্রহ ও অনলাইনে যারা টিকেট সংগ্রহ করেছেন তারা অনলাইনের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহের জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।

ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের বুকিং সহকারী শামীম আহমেদ বলেন, সকাল থেকে স্টেশনে এসে মধুমতি, সাগরদাড়ি, ঈশ্বরদী কমিউটার, সিল্কসিটিসহ বিভিন্ন ট্রেনের যাত্রীরা টিকেট দিয়ে টাকা ফেরত নিচ্ছেন। টিকিটের সব যাত্রীদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে।

ঈশ্বরদী স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট মহিউল ইসলাম বলেন, রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে ঈশ্বরদী স্টেশন থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি। অন্য স্টেশন থেকে কোনো ট্রেন আসেনি। সকালের দিকে কয়েকজন যাত্রী স্টেশনে এসে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার খবর শুনে বুকিং অফিসে গিয়ে টাকা ফেরত নিয়ে চলে যান।

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের রাজশাহী বিভাগীয় আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। এখন আমাদের কিছু করার নেই। সব দাবিদাওয়া মেনে নিলেই কাজে যোগ দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে গার্ডস কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, মাইলেজ প্রদানসহ সব দাবি পূরণের জন্য রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে রেলওয়ে কর্মকর্তা ও রেলমন্ত্রণালয়কে তিন বছর ধরে আমরা চিঠির মাধ্যমে অবহিত করে আসছি। পাশাপাশি আমরা প্রায় মাসেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তারা কোনো কর্ণপাত করেননি এবং আমাদের কোনো ধরনের মূল্যায়ন করেননি। এজন্য রানিং স্টাফরা বাধ্য হয়ে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি দিতে বাধ্য হয়েছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের পার্ট অফ পে রানিং অ্যালাউন্স (মাইলেজ) যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক প্রদানের দাবি পূরণ না হওয়ায় ২৮ জানুয়ারি সোমবার দিনগত রাত ১২টা থেকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন