ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল: রাস্তার মাঝে কেউ শুয়ে আছেন, কেউ বসে। কেউ আবার গান গাইছেন। হাতে তালি দিয়ে কেউ অন্যকে উজ্জীবিত রাখছেন। কেউ আবার মেতেছেন খোশগল্পে। কেউ দিচ্ছেন স্লোগান, কেউ আবৃত্তি করছেন কবিতা- এভাবেই কাকরাইল মসজিদের সামনে ৩ দফা দাবিতে রাত কাটালেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বুধবার গভীর রাতে কাকরাইল মোড়ে মসজিদের সামনে এভাবেই তাদের কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের অবস্থান কর্মসূচিতে রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, শিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্রফ্রন্ট, বৈষম্যবিরোধীসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান করেন।
সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে অপরকে উজ্জীবিত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যান। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘মার যখন খেয়েছি, মার আরও খাবো; অধিকার আদায় না করে ক্যাম্পাসে ফিরবো না।’
জবি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে সব ক্রিয়াশীল সংগঠনের পাশাপাশি ছাত্রদলও আন্দোলনে আছে। কাকরাইল মসজিদের ভেতর ৫ শতাধিক আর বাইরে রাস্তায় অসংখ্য ছেলে অবস্থান করছেন। তারা বিপ্লবের গান করে সময় পার করছেন। রাস্তায় যখন নেমেছি, রাস্তা থেকেই সব দাবির ফয়সালা হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দাবি ন্যায্য, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে আমরা সব সময় আপোষহীন। আমরা আমাদের দাবি আদায়ে এসেছিলাম যমুনায়। কিন্তু, পুলিশ আমাদের ভাই-বোনের ওপর বর্বরভাবে আঘাত করেছে। তারা হাসপাতালে ভর্তি, আমরা দাবি আদায় রাজপথে।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি রাকিব বলেন, ‘যেহেতু রাজপথে আমরা নেমেছি, অধিকার আদায় না করে আমরা ফিরবো না। মার যখন খেয়েছি, মার আরও খাবো; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার আদায়ে আমরা আছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহীন আহমেদ বলেন, যেহেতু ক্যাম্পাস ছেড়ে এসেছি, আমাদের দাবি পূরণ না করে আর ক্যাম্পাসে ফিরতে চাই না। তাতে যদি আমাদের আরও এক সপ্তাহ এখানে থাকা লাগে, আমরা তাই থাকবো, ইনশাআল্লাহ।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাতে রাস্তায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে অবস্থান নেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও সাদা দলের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোশাররফ হোসেন ও ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মঞ্জুর মোর্শেদ ভূঁইয়া। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সারা রাত তারা রাস্তায় সময় পার করেন। এছাড়া গভীর রাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ অন্যান্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক ড. মোশাররফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার শিক্ষার্থীরা এখানে আছে, এজন্য আমিও আছি। আমার ছেলেদের রেখে আমি যেতে পারি না। আমাদের দাবি যৌক্তিক।’
শিক্ষার্থীদের ৩ দফা দাবি হলো:
আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা।
বুধবার সকাল ১১টায় তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে লংমার্চে শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। লংমার্চটি গুলিস্তান, মৎস্য ভবন পার হয়ে কাকরাইল মসজিদের সামনে আসলে ১২টা ৪০ মিনিটে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় ছত্রভঙ্গ করতে গরম পানি ছোড়া হয়। শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছেন।
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com
