গাজীপুর, বাংলাদেশ গ্লোবাল: কানাডা যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা কামরুজ্জামান কাকন। চাকরি ভিসায় কানাডা যাওয়ার জন্য এক ব্যক্তির কাছে ৩ লাখ টাকাও দিয়েছিলেন। গাজীপুরের উত্তর ভুরুলিয়ার আদর্শ পাড়ার ব্যবসায়ী মো. মোশারফ হোসেন লম্বরির ছেলে কাকনকে শেষ পর্যন্ত ওই ব্যক্তি কানাডা পাঠাতে পারেননি।
পরে কাকনের ছোট ভাই কামরুল ইসলাম সাগরকে ভালো বেতনে সৌদি আরব পাঠানোর প্রস্তাব দেন সেই লোক। ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকায় সাগরকে পাঠানো হয় সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে। পরবর্তীতে কাকনকেও কৌশলে তার ছোট ভাই সাগরের কাছে পাঠানো হয়। সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের একটি ফ্ল্যাটে এই দুই ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় সৌদি পুলিশ ফ্ল্যাট থেকে কাকন ও সাগরের মরদেহ উদ্ধার করেছে। হত্যার খবর রাতেই গাজীপুরের উত্তর ভুরুলিয়ার লম্বরি বাড়িতে পৌঁছে।
নিহত কাকন ও সাগরের স্বজনরা জানান, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে কাকন চাকরির সন্ধান করছিলেন। এরই মধ্যে ঢাকার নয়া পল্টনের একটি প্রতিষ্ঠানের এক পরিচালকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে ২১ লাখ টাকা চুক্তিতে চাকরি ভিসায় কাকনকে কানাডায় পাঠানোর প্রস্তাব দেন ওই ব্যক্তি। ৩ লাখ টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও তিনি কাকনকে কানাডা পাঠাতে পারেননি।
পরে কাকনের ছোট ভাই সাগরকে সৌদি আরব পাঠানোর প্রস্তাব করেন সেই ব্যক্তি। ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে গত বছরের অক্টোবর মাসে সৌদি পাঠানো হয় সাগরকে।
স্বজনরা বলেন, কাজের পরিবর্তে তাকে দাম্মামে একটি ঘরে আটকে রেখে আরও ৪ লাখ টাকা দাবি করা হয় পরিবারের কাছে। ছেলের কথা ভেবে আরও ৪ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন সাগরের বাবা মোশারফ লম্বরি। মোশারফ হোসেন বলেন, টাকা নিয়েও ছেলেকে ভালো চাকরি না দিয়ে খাবার ডেলিভারির কাজ দেয়। পরে কাকনকেও সৌদির মদিনা ইউনিভার্সিটিতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রস্তাব দেন সেই লোক।
মোশারফ হোসেন লম্বরি বলেন, ‘নতুন করে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর কাকনকে সৌদি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কাজ না দিয়ে দুই ভাইকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। বিষয়টি জানার পর ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব গিয়ে দুই ছেলেকে দেখে আসার প্রস্তাব দেই। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সৌদি আরব যান মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, গিয়ে দেখি খাবার ডেলিভারির কাজ দেওয়া হয়েছে ছেলেদের। ঠিকমতো খেতে দেওয়া হয় না। রাখা হয়েছে ছোট্ট ঘরে। ২২ ডিসেম্বর তিনি দেশে ফিরেন।’
মোশারফ হোসেন বলেন, আমার আর কেউ রইলো না। দুইটা সন্তানই আমার ছিল। বুধবার রাত ১২টার পর এক বাংলাদেশি ফোন করে দুই ছেলেকে হত্যার খবর দিয়েছেন। পরে সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন দুই ভাই। দুপুরের পর দরজার নিচ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখে ফ্ল্যাট মালিক পুলিশে খবর দেন। সিসি ফুটেজ দেখে মঞ্জু নামে এক বাংলাদেশি যুবককে পুলিশ শনাক্ত করেছে। তাকে দিয়েই অভিযুক্ত সেই ব্যক্তি তার দুই সন্তানকে খুন করে থাকতে পারেন বলে অভিযোগ করেন মোশারফ হোসেন।
গাজীপুর মহানগরের সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এ রকম কোনো খবর আমাদের জানানো হয়নি। তবে পরিবার জানিয়েছে।
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com