ঢাকা      রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
শিরোনাম

ইরানের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা কারা মারা গেছেন

IMG
14 June 2025, 2:56 PM

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: শুক্রবার ইসরাইল যখন ইরানে হামলা করে, তখন তাদের লক্ষ্য ছিল ইরানের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র, সেনা ঘাঁটি ও বেশকিছু বেসামরিক স্থাপনা। হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, রেভ্যুলেশনারি গার্ড-এর কমান্ডার হোসেইন সালামিসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং অন্তত ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ইরান। এরপর রাতে ইরান ওই হামলার পাল্টা জবাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এতে এ পর্যন্ত দু'জন নিহত এবং ৬৩ জনের মত মানুষ আহত হয়েছেন।

সবশেষ খবর অনুযায়ী, ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা ইরানে তাদের অভিযান চালিয়ে যাবে। এদিকে, ইরান বলেছে, শুক্রবারের হামলার জন্য ইসরাইলকে 'কঠিন শাস্তি আশা' করতে হবে। ইসরাইল এই অভিযানকে আখ্যায়িত করেছে 'অপারেশন রাইজিং লায়ন' হিসেবে। ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডস কর্পস, আইআরজিসি সংশ্লিষ্ট সংবাদ সংস্থা তাসনিম এই তথ্য নিশ্চিত করেছে, ইসরাইলের হামলায় ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের সাথে জড়িত অন্তত ছয়জন বিজ্ঞানী মারা গেছেন। সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী ছাড়াও ইসরাইলের হামলায় শিশুসহ বহু বেসামরিক ব্যক্তিও নিহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।

ইরানের নিহত হওয়া হাই-প্রােফাইল কমান্ডারদের সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক, চলুন।

ইরানের সর্বোচ্চ র‍্যাংকের সেনা কর্মকর্তা ছিলেন মোহাম্মদ বাঘেরি। ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব রত ছিলেন তিনি।অর্থাৎ, তিনি রেভলিউশনারি গার্ডস ও সেনাবাহিনী – এই দুই বাহিনীরই প্রধান ছিলেন। ১৯৮০ সালে ২০ বছর বয়সে বাঘেরি আইআরজিসিতে যোগ দেন। তিনি এবং তার ভাই আশির দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় আইআরজিসির গোয়েন্দা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করতে বড় ভূমিকা রাখেন। অন্য কমান্ডারদের চেয়ে তাকে অপেক্ষাকৃত কম কট্টরপন্থী মনে করা হতো। গত এপ্রিলে এক ভাষণে যুদ্ধ এড়িয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলায় ইরানে কিছুটা সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। এখন তার জায়গায় সশস্ত্র বাহিনীর নতুন প্রধান নিযুক্ত করা হয়েছে আব্দোল রাহিম মৌসাভিকে।

ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডস, আইআরজিসির কমান্ডার ইন চিফ ছিলেন হোসেইন সালামি। বাঘেরির মত হোসেইন সালামিও ১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় আইআরজিসিতে যোগ দিয়েছিলেন। পরে ২০০৯ সালে তিনি ডেপুটি কমান্ডার এবং ২০১৯ সালে বাহিনীর কমান্ডার হন। তিনি মূলত একজন সুবক্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের জন্যও তার খ্যাতি ছিল।গত মাসে এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ইসরাইল বা যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা করলে তাদের জন্য 'নরকের দরজা খুলে যাবে'। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তার জায়গায় আইআরজিসির নতুন কমান্ডার হয়েছেন মোহাম্মাদ পাকপোর।

আইঅরজিসির খাতাম-আল আনবিয়া সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টার্সের প্রধান ছিলেন গোলামালি রাশিদ। এই বিভাগটি আইআরজিসি ও ইরানের সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতো। আশির দশকে ইরাক ও ইরানের মধ্যে হওয়া যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন গোলামালি রশিদ। পরে ইরানের সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। গোলামালি রাশিদের মৃত্যুর পর আলি সাদমানি তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন বলে খবর প্রকাশ করেছে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম।

আইআরজিসির এরোস্পেস ফোর্স বা বিমান ও মহাকাশ সংশ্লিষ্ট বাহিনীর প্রধান ছিলেন আমির আলি হাজিযাদেহ। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট কর্মসূচির একজন শীর্ষ কর্মকর্তাও ছিলেন তিনি। ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্সেস, আইডিএফ জানিয়েছে, আইআরজিসির বিমানবাহিনীর বেশ কয়েকজন কমান্ডারের সাথে মাটির নিচে একটি ঘাঁটিতে অবস্থান করছিলেন আমির আলি হাজিযাদেহ। আইডিএফের দাবি, সেখান থেকে ইসরাইলের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিলেন তারা। মাটির নিচে থাকা অবস্থায় ওই ঘাঁটিতে আইডিএফ হামলা করে বলে তারা দাবি করেছে। আইডিএফের বিবৃতিতে তারা দাবি করেছে, যে গত বছরের অক্টোবর ও এপ্রিলে ইসরাইলে যে মিসাইল হামলা করেছিল ইরান, তার নির্দেশদাতা ছিলেন আমির আলি হাজিযাদেহ। তেহরানে ২০২০ সালে যে ইউক্রেনিয়ান বিমানকে ভূপাতিত করা হয়, তার দায় স্বীকার করেছিলেন আমির আলি হাজিযাদেহ। ওই ঘটনায় ১৭৬ জন বিমান যাত্রী মারা গিয়েছিলেন। সেই ঘটনার পর থেকে ইরানের সাধারণ মানুষের কাছে হাজিযাদেহর গ্রহণযোগ্যতা অনেকটা কমে গিয়েছিল।

পরমাণু বিজ্ঞানী ফেরেইদুন আব্বাসি ইরানের পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত। এরপর ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সংসদ সদস্য হিসেবেও দায়িত্বরত ছিলেন তিনি। ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের মাধ্যমে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পক্ষপাতী ছিলেন আব্বাসি। এ বছরের মে মাসে ইরানের টিভি চ্যানেল এসএনএনের সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি পরমাণু অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা সম্পর্কে কথা বলেছিলেন।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যাচ্ছে যে, আরো কয়েকজন সুপরিচিত পরমাণু বিজ্ঞানীও মারা গেছেন ইসরাইলের হামলায়। তারা হলেন:

মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি, তিনি তেহরানের আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ছিলেন।

আবদুল্লা হামিদ মিনৌচেহর, তিনি ইরানের শহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ছিলেন।

আহমেদ রেজা জোলফাঘারি, তিনি শহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধাপক ছিলেন।

আমির হোসেইন ফেকহি, তিনি শহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধাপক ছিলেন।

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন