ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল: চলতি বছরের হজ ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করায় ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস। একই সঙ্গে আগামী বছরের হজ ব্যবস্থাপনা যেন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা যায়, তার প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
আগামী বছরের হজের জন্য ইতোমধ্যে রোডম্যাপ প্রকাশ করায় সন্তোষ প্রকাশ করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এ বছর ছোটখাটো যেসব ত্রুটি ধরা পড়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে ভবিষ্যতে সেগুলো যেন না হয়; তার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।” এ সময় ধর্ম উপদেষ্টা আফম খালিদ হোসেন প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, আগামী বছরের হজ ব্যবস্থাপনার জন্য ইতোমধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে এবং ১০ জুলাই বাংলাদেশিদের জন্য হজ কোটা ঘোষণা করা হবে।
বৈঠকে ড. ইউনূস বলেন, “এ বছর হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোন অভিযোগ আসেনি। সবাই প্রশংসা করেছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পরিশ্রম করেছেন - এজন্য সবাইকে অভিনন্দন, শুভেচ্ছা।” নিবন্ধিত সকল হজযাত্রী হজ পালন করতে পারার যে দৃষ্টান্ত এ বছর সৃষ্টি হয়েছে তা যেন এই মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী নীতিতে পরিণত হয়, সে বিষয়ে আন্তরিক হওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, “হজযাত্রী ও হজ ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্টদের সবার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সবাই যেন নির্বিঘ্নে হজ পালন করতে পারেন, সেজন্য প্রশিক্ষণ খুবই জরুরি।”
চলতি বছরের হজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক জানান, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এবং সৌদি সরকারের নির্দেশনার আলোকে হজ ২০২৬-এর জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সফল ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, হজযাত্রীদের সৌদি আরবগামী মেডিক্যাল ফিটনেস সার্টিফিকেট গ্রহণের মাধ্যমে নিবন্ধন নিশ্চিত করা হবে। বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন অথবা ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালের পরিচালক প্রদত্ত সার্টিফিকেট গ্রহণযোগ্য হবে। সৌদি টাইমলাইন ও রোডম্যাপ অনুযায়ী হজ কার্যক্রমের ক্যালেন্ডার ও চেকলিস্ট তৈরি করা হয়েছে এবং হজযাত্রী কোটা পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, হজ ২০২৬-এর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয় নির্ধারিত সময়সূচি প্রকাশ করেছে। আগামী ১০ জুলাই হজ ২০২৬-এর বাংলাদেশের কোটা ঘোষণা করা হবে এবং ২১ অক্টোবরের মধ্যে হজযাত্রীদের চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন হবে। পহেলা ডিসেম্বর বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন এবং ২০২৬ সালের ০৪ জানুয়ারি ভেন্ডর ও কোয়াটেশন অনুমোদনের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এরপর ২০ মার্চ থেকে হজযাত্রীদের ভিসা প্রদান শুরু হবে এবং ১৮ এপ্রিল থেকে ফ্লাইট কার্যক্রম শুরু হবে। সবশেষ ২৯ মে পবিত্র হজের টেস্ট (সেবা যাচাইকরণ) সম্পন্ন হবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি বছর ৮৭ হাজার ১০০ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পেয়েছেন। 'লাব্বাইক' মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে হজযাত্রীরা সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়েছেন এবং অ্যাপটিতে ৩০ হাজার ২৩৪ জন রেজিস্ট্রেশন করেছেন।
হজ পালনকালে এ বছর ৩৮ জনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও এই মুহূর্তে সৌদি আরবের বিভিন্ন হাসতাপালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৪ জন। গত ২৫ জুন পর্যন্ত দেশে ফেরত এসেছেন ৫১ হাজার ৬১৫ জন হাজি। ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক জানান এখন পর্যন্ত ৮০৬টি লাগেজ হারানোর তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৭৯০টি লাগেজ পাওয়া গেছে। বাকি ১৬টি লাগেজ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
পর পর তিন বছর হাজি নিতে না পারায় ৪১৫টি হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। হজ এজেন্সিগুলোর কর্মদক্ষতা মূল্যায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট সূচক ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে হজযাত্রীদের সন্তুষ্টি, চুক্তি পরিপালন এবং সরকারি নীতিমালা অনুসরণের বিষয়গুলো দেখে তাদের এ প্লাস, এ, বি, সি ও ডি ক্যাটাগরিতে রাখা হবে।
এ প্লাস ক্যাটাগরি যারা অর্জন করেছে - তাদের প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে চিঠি লিখে অভিনন্দন জানানোর নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস। আগামী বছর যারা হজে যেতে ইচ্ছুক, তাঁরা যেন এখন থেকে ‘লাব্বাইক’ অ্যাপ ব্যব্যবহার করে তাঁদের নানা প্রশ্নের জবাব পান - সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। একই সঙ্গে পবিত্র ওমরাহ পালনে ইচ্ছুকরাও যেন এই অ্যাপ থেকে প্রয়োজনীয় সেবা পান - সেদিকেও নজর দিতে বলেন তিনি।
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com