কক্সবাজার, বাংলাদেশ গ্লোবাল: সপ্তাহব্যাপী অবিরাম বর্ষণে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলার ৮০টির বেশি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। কক্সবাজার জেলা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ বি হান্নান জানান, জুলাই মাসের প্রথম ৭ দিনে জেলায় ৬৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
তিনি বলেন, 'এটাকে ভারী বৃষ্টিপাত হিসেবে ধরা হয়, কারণ কক্সবাজারে প্রতিদিন গড়ে ৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। জুলাই মাসে গড়ে ২২ দিন বৃষ্টি হয়। চলমান এই বৃষ্টির প্রবণতা ৯ জুলাই থেকে কিছুটা কমবে, এরপর ২–৩ দিনের বিরতি দিয়ে আবার বাড়তে পারে।' এই আবহাওয়াবিদ জানান, গত বছর কক্সবাজারে জুলাই মাসে ১ হাজার ৭০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। চলতি মাসে ওই রেকর্ড ভাঙতে পারে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৬টি দুর্যোগপ্রবণ উপজেলার মধ্যে টেকনাফের পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নে ৮টি, হ্নীলা ইউনিয়নে ১২টি, টেকনাফ পৌরসভায় ৭টি, টেকনাফ সদর ইউনিয়নে ৬টি, সাবরাং ইউনিয়নে ৭টি এবং বাহারছড়া ইউনিয়নে ১০টি গ্রাম পানির নিচে চলে গেছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, 'ভারী বর্ষণের কারণে বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।'
হ্নীলা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জানান, ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৪ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি। তিনি বলেন, 'প্লাবিত গ্রামগুলোর রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।'
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জানান, মহেশখালিয়া পাড়া, নতুন পল্লান পাড়া, তুলাতুলি, লেঙ্গুর বিল, খোনকার পাড়া, মাঠ পাড়া ও রাজারছড়াসহ ৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপেও জোয়ার ও সাগর উত্তাল থাকায় কয়েকটি গ্রামে সাগরের পানি ঢুকে পড়েছে। দ্বীপে দ্রুত পানি অপসারণের মতো ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় টানা বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
উখিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হোসেন চৌধুরী জানান, উপজেলায় পাহাড়ি ঢলে অন্তত ১৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, 'হঠাৎ করে পানি আসায় এ বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। ৫–৬ ঘণ্টার বিরতি পেলে পানি নেমে যেতে পারে। তবে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'
উখিয়ার ৩, ৭, ১২ ও ২২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও হঠাৎ বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় এনজিওগুলো কাজ করছে বলে জানান ইউএনও।
রামু উপজেলায় বাঁকখালী নদীর পানি বেড়ে ফতেখাঁরকুল, রাজারকুল ও শ্রীকুল ইউনিয়নের ১০–১২টি গ্রাম এবং সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের বাংলাবাজার ও খরুলিয়া এলাকার প্রায় এক হাজার বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে, মাতামুহুরী নদীর পানি উপচে পড়ায় চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় ২ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এই তিন উপজেলায় অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
জানতে চাইলে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি উঠে এসেছে। এতে নদীর পাড়ের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।' তিনি জানান, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার কিছু বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলোর সংস্কার কাজ চলছে।
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com