ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল: ১২ হাজার টাকা বিমান ভাড়া কম ধরে ৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকার হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এছাড়া আরো দু'টি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ রোববার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন এই নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করেন।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। প্রতি বছর আমাদের দেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম ভাই-বোন হজ পালন করে থাকেন। সর্বোচ্চ হজযাত্রী প্রেরণকারী দেশের তালিকায় আমাদের অবস্থান চতুর্থ।
তিনি বলেন, গত বছরও আমাদের দেশ থেকে ৮৭ হাজার ১০০ জন হজ পালন করেছেন। সামগ্রিক বিবেচনায় এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান বিশেষ করে যারা হজ পালনের জন্য নিয়ত করেছেন, তাদের মধ্যে হজ প্যাকেজ নিয়ে বিশেষ আগ্রহ ও কৌতূহল রয়েছে। আজ আমরা ২০২৬ সালের হজ প্যাকেজ ঘোষণার সেই মাহেন্দ্রক্ষণে এসে উপনীত হয়েছি।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, হজ দ্বি-রাষ্ট্রিক কার্যক্রম। সৌদি সরকার ও হজযাত্রী প্রেরণকারী দেশসমূহের ব্যবস্থাপনায় হজ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে থাকে। তবে নীতি-নির্ধারণী বিষয়গুলোতে সৌদি সরকারের ভূমিকাই মুখ্য। হজের রোডম্যাপ ঘোষণা, সৌদি প্রান্তে আবশ্যকীয় ব্যয় নির্ধারণ প্রভৃতি বিষয় সৌদি সরকারের এখতিয়ারাধীন।
তিনি বলেন, ২০২৬ সালের হজে সৌদি প্রান্তে আবশ্যকীয় ব্যয়ের চূড়ান্ত ব্যয়ের হিসাব না পাওয়ায় বিগত বছরের খরচের ধারাবাহিকতায় সম্ভাব্য খরচ হিসাব করে প্যাকেজ প্রণয়ন করা হয়েছে। পরবর্তীতে সৌদি সরকার কোনো খাতের খরচ বৃদ্ধি/হ্রাস করলে সে অনুসারে প্যাকেজ মূল্য বৃদ্ধি বা হ্রাস পাবে। প্যাকেজ মূল্য বৃদ্ধি পেলে হজযাত্রীদের তা পরিশোধ করতে হবে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, প্যাকেজ মূল্য হ্রাস পেলে উদ্বৃত্ত টাকা ফেরত দেওয়া হবে। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত রয়েছেন, আমরা ২০২৫ সালের হজে সরকারি মাধ্যমের হজযাত্রীদের ৮ কোটি ২৮ লাখ ৯০ হাজার ১৮৩ টাকা ফেরত দিয়েছি।
তিনি জানান, হজ প্যাকেজে সৌদি আরব পর্বের ব্যয়ের খাতসমূহের মধ্যে রয়েছে: মক্কা-মদিনায় বাড়ি/হোটেল ভাড়া, পরিবহন ব্যয়, জমজম পানি, মিনা-আরাফায় সার্ভিস চার্জ, ভিসা ফিস, স্বাস্থ্যবীমা, ইলেক্ট্রনিক্স ফিস, গ্রাউন্ড সার্ভিস ফিস, মিনার তাঁবু ভাড়া/ক্যাম্প ফিস, লাগেজ পরিবহন ব্যয় ও দমে শোকর খরচ বা কোরবানি খরচ।
বাংলাদেশ পর্বের ব্যয়ের খাতসমূহের মধ্যে রয়েছে: বিমান ভাড়া, হজযাত্রীদের কল্যাণ তহবিল, প্রশিক্ষণ ফি, হজ গাইড, অন্যান্য সার্ভিস।
আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, সৌদি আরব ও বাংলাদেশ পর্বের এই সকল ব্যয় যোগ করেই আমরা প্যাকেজ মূল্য নির্ধারণ করেছি। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের হজযাত্রী পরিবহনে বিমান ভাড়া যৌক্তিকভাবে নির্ধারণের বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করেছি। হজযাত্রী পরিবহনকারী এয়ারলাইনসের সাথে আমরা কয়েক দফা মতবিনিময় করেছি। আমি নিজে চারবার বেসমারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সাথে আনুষ্ঠানিক মতবিনিময় করেছি এবং বহুবার অনানুষ্ঠানিক আলোচনা ও কথাবার্তা বলেছি। বিমান ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণের বিষয়ে বেসমারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন। গত বছর বিমান ভাড়া ছিলো এক লাখ ৬৭ হাজার ৮২০ টাকা। এ বছর বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৫৪ হাজার ৮৩০ টাকা অর্থাৎ এ বছর হজযাত্রী প্রতি বিমান ভাড়া ১২ হাজার ৯৯০ টাকা কমেছে। এছাড়া বেসমারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে হ্রাসকৃত ভাড়া আরো কমানোর বিষয়ে তৎপরতা চলছে মর্মে আমাদের লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, এ বছর বিমান ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে গত বছরের ন্যায় বাংলাদেশ পর্বের ভ্যাট ও ট্যাক্স অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এগুলো গত বছর অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। এ বছরও আমরা বাংলাদেশ পর্বের ভ্যাট ও ট্যাক্সকে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া বহির্ভুত রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগকে অনুরোধ করেছি।
তিনি বলেন, ২০২৬ সালের হজে সৌদি সরকার স্বাস্থ্য বীমার পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে ১৩০ সৌদি রিয়াল যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ হাজার ২৭০ টাকা। মিনা ও আরাফায় তাঁবু ভাড়া ৪.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। নুসুক মাসার প্লাটফর্মে ‘দমে শোকর’ বাবদ ৭২০ সৌদি রিয়াল তথা ২৩ হাজার ৬৫২ টাকা জমাদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ বছর প্রথমবারের মতো দমে শোকর বাবদ টাকা হজ প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত করে প্যাকেজ ঘোষণা করা হচ্ছে। এছাড়া এ বছর সৌদি রিয়ালের বিনিময় হারও বেড়েছে, গত বছর সৌদি রিয়াল ছিলো ৩২.৫০ টাকা, এ বছর সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২.৮৫ টাকা।
তিনি বলেন, এ বছর সরকারি মাধ্যমে একটি হজ প্যাকেজ-১ (বিশেষ), ‘হজ প্যাকেজ-২’ ও ‘হজ প্যাকেজ-৩’ শিরোনামে মোট তিনটি হজ প্যাকেজ নির্ধারণ করেছি।
হজ প্যাকেজ-১ (বিশেষ): এই প্যাকেজের হজযাত্রীদের মক্কায় হারাম শরীফের বহিরাঙ্গণ থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ মিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মারকাজিয়া বা সেন্ট্রাল এরিয়ায় হাজীদের আবাসন সুবিধা দেয়া হবে। এটাচড বাথরুমসহ এক রুমে সর্বোচ্চ ৫ জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-২ এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ডি+ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। এই প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৬ লক্ষ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা।
হজ প্যাকেজ-২: এটি হজ প্যাকেজ-১ এর চেয়ে কিছুটা সুলভ হজ প্যাকেজ। এই প্যাকেজের হজযাত্রীদের মক্কায় হারাম শরীফের বহিরাঙ্গণ থেকে ১.২ কিলোমিটার হতে ১.৮ কিলোমিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মারকাজিয়া বা সেন্ট্রাল এরিয়ায় হাজীদের আবাসন সুবিধা দেযা হবে। এটাচড বাথরুমসহ একরুমে সর্বোচ্চ ৬ জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-২ এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ডি ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। এই প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লক্ষ ৫৮ হাজার ৮৮১ টাকা।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, সেটা হলো- হজ প্যাকেজ-১ ও হজ প্যাকেজ-২ এ নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ সাপেক্ষে মক্কা ও মদিনায় ২ ও ৩ সিটের রুম আপগেডেশন ও শর্ট প্যাকেজ সুবিধা গ্রহণ করা যাবে। হজযাত্রীদের সৌদি আরব অবস্থানকাল হবে সাধারণত ৩৫-৪৭ দিন। তবে শর্ট প্যাকেজে সৌদি আরবে অবস্থানকাল হবে ২২-৩০ দিন।
হজ প্যাকেজ-৩: এটি সাশ্রয়ী হজ প্যাকেজ। এই প্যাকেজের হজযাত্রীদের আবাসন হবে মক্কায় আজিজিয়া এলাকায় এবং মদিনায় মারকাজিয়া এলাকার বাইরে। এক রুমে সর্বোচ্চ ৬ জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-৫ এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ডি ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। হারাম শরীফে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য যাতায়াতের নিমিত্ত এসি বাসের বন্দোবস্ত থাকবে। এই প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা।
এই প্যাকেজটি সরকারি মাধ্যমে হজযাত্রীদের জন্য নতুন সংযোজন। এর আগে কখনও সরকারি মাধ্যমের হাজীদের আজিজিয়া এলাকায় আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে সর্বোচ্চ হজযাত্রী প্রেরণকারী তিনটি দেশ ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ার হজযাত্রীদের বহু বছর ধরে আজিজিয়া এলাকাতেই রাখা হয়। এছাড়া আমাদের দেশের হজযাত্রীদের দীর্ঘ বছর যাবৎ যে এলাকায় রাখা হতো, এই এলাকার হোটেল মিয়াপার বা বাড়িগুলো সৌদি সরকার ভেঙে ফেলেছে। এ কারণে আগামীতে আমাদের দেশের হজযাত্রীদের আজিজিয়া এলাকায়ই রাখতে হবে।
হজ এজেন্সিসমূহের জন্য ‘বেসরকারি মাধ্যমের সাধারণ হজ প্যাকেজ’ শিরোনামে একটি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লক্ষ ৯ হাজার ১৮৫ টাকা। সরকার কর্তৃক অনুমোদিত এই প্যাকেজটি গ্রহণ করে এজেন্সিসমূহ অতিরিক্ত দু'টি প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে।
প্রত্যেক হজযাত্রীর খাবার বাবদ প্রতিদিন ন্যূনতম ৩৫ সৌদি রিয়াল ব্যয় হতে পারে। এ হিসাব অনুসারে খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা হজযাত্রীদের সঙ্গে নিতে হবে এবং নিজ দায়িত্বে খাবার ক্রয় করতে হবে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৬ সালের ২৬ মে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ২০২৬ সালে আমাদের দেশ হতে সম্ভাব্য ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন।
গত ২৭ জুলাই হতে হজের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয়েছে এবং সৌদি সরকারের রোডম্যাপ অনুসারে আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত হজের নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হবে। ১২ বছর ও তদুর্ধ্ব বয়সের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি ২০২৬ সালের হজে গমন করতে পারবেন।
তিন লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন সম্পন্ন করা যাবে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্যাকেজ মূল্যের সমুদয় অর্থ আবশ্যিকভাবে জমা প্রদান করতে হবে।
১ নভেম্বর ২০২৫ হজচুক্তি সম্পাদিত হবে। ২০২৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাড়ি ভাড়া ও পরিবহন চুক্তি সম্পাদন করতে হবে।
২০২৬ সালের ০৮ ফেব্রুয়ারি হতে হজ ভিসা ইস্যুর কার্যক্রম শুরু হবে। ২০২৬ সালের ১৮ এপ্রিল হতে হজ ফ্লাইট শুরু হবে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এদেশের গণমাধ্যম সর্বদা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে আসছে। হজ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে দেশবাসীকে অবহিত করার পাশাপাশি তারা আমাদেরও নানা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে থাকে। আপনাদের অব্যাহত সহযোগিতা ও আন্তরিক উপস্থিতির জন্য আমি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে আপনাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, এবার, সরকারি সিভিল সার্জন অথবা সরকারি ডাক্তারের চিকিৎসা পত্র ছাড়া কেউ হজে যেতে পারবেন না। বিশেষ করে ৮০ বছরের বেশি বৃদ্ধ এবং ১২ বছরের কম বয়সীদের হজে যেতে দেওয়া হবে না।
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com