ঢাকা      সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২
শিরোনাম

হংকংয়ে রানওয়ে থেকে সমুদ্রে ছিটকে পড়লো কার্গো বিমান

IMG
20 October 2025, 4:03 PM

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: হংকং বিমানবন্দরে একটি কার্গো বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে গিয়ে সরাসরি সমুদ্রে পড়েছে। এ ঘটনায় বিমানবন্দরের দু'জন নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়েছেন। দেশটির দমকল বাহিনী জানিয়েছে, ঘটনার দুই মিনিটের মধ্যে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। উদ্ধারকারীরা বলছেন, বিমানটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে এবং এর একটি খণ্ড সমুদ্রের পানিতে ভাসছিলো।

এমিরেটস ফ্লাইট ইকে ৯৭৮৮, বোয়িং ৭৪৭-৪৮১ মডেলের বিমানটি দুবাই থেকে হংকংয়ে এসেছিলো। এটি তুরস্কের কার্গো এয়ারলাইন এয়ার এসিটির মালিকানাধীন। বিমানটিতে থাকা চারজন ক্রুর সবাই বেঁচে আছেন। উদ্ধারের আগে তারা দরজা ভেঙ্গে বেরিয়ে এসেছিলেন। এরপর উদ্ধার কর্মীরা তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় সেখানকার আবহাওয়া ভালো ছিলো এবং এ ঘটনার কারণে অন্য কোন ফ্লাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। প্রায় তিন দশক আগে ১৯৯৮ সালে হংকং বিমানবন্দর চালু হওয়ার পর এটি এ ধরনের দ্বিতীয় মারাত্মক দুর্ঘটনা।

এমিরেটস এক বিবৃতিতে অবতরণের সময় বিমানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে। এ ঘটনার পর পরিস্থিতি মোকাবেলায় হংকং বিমানবন্দরে ২১৩ জন দমকল কর্মী ও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা কর্মকর্তাদের মোতায়েন করা হয়েছে।

বোয়িং ৭৪৭-৪৮১ মডেলের বিমানটি মূলত যাত্রীবাহী বিমান ছিলো। পরে এটিকে মালবাহী বিমানে রূপান্তর করা হয়। এয়ারক্রাফট ট্র্যাকিং সাইট এয়ারফ্লিটসের মতে, ৩০ বছরের বেশি পুরনো এই বিমানটির যাত্রা শুরু হয়েছিলো ১৯৯৩ সালে।

এয়ারফ্লিটসের তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইনস এই বিমানটি ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে আছে জাপানের অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ এবং সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস (সৌদিয়া)। সোমবার এটি পরিচালনা করা হচ্ছিলো এমিরেটস স্কাই কার্গো ইকে ৯৭৮৮ ফ্লাইট হিসেবে।

রোববার দুবাই থেকে রওনা দিয়ে হংকংয়ের স্থানীয় সময় রাত তিনটা ৫০ মিনিটে এটি হংকং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরণ করে। আরেকটি ফ্লাইট ট্র্যাকিং প্লাটফর্ম ফ্লাইটরাডার ২৪ জানিয়েছে, এ ধরনের আরেকটি বোয়িং এয়ার এসিটির কাছে আছে।

তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, রানওয়ে নিরাপদ ছিলো। হংকং বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক স্টিভেন ইয়ু বলেছেন, অবতরণের পর বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে গিয়ে পাশের বেষ্টনীতে গিয়ে আঘাত করে। "দুঃখজনকভাবে এ সময় সেখানে একটি এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি পেট্রোল কার ছিলো। বিমানটির সাথে সেই পেট্রোল কারের সংঘর্ষ হয়। বিমানের ধাক্কায় পেট্রোল কারটিও সমুদ্রে গিয়ে পড়ে," ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলছিলেন তিনি।

দুর্ঘটনায় যে দু'জন গ্রাউন্ড স্টাফ মারা গেছেন তাদের একজন সাত বছর, অন্যজন ১২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। স্টিভেন ইয়ু আরও জানিয়েছেন যে, অবতরণের সময় বিমানটি কোনো বিপদ সংকেত পাঠায়নি।

"বিমান পরিচালনার জন্য যেমন থাকা দরকার, তার সব শর্তই সেখানে বিদ্যমান ছিলো। এই বিমানবন্দরের নর্থ রানওয়েতে দুর্ঘটনাটি হয়েছে। তবে সাউথ ও সেন্ট্রাল রানওয়ের কার্যক্রম যথারীতি চালু আছে," বলছিলেন স্টিভেন ইয়ু।

হংকং এয়ার এক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন অথোরিটির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা সমুদ্র থেকে ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। এগুলোই ব্ল্যাক বক্স হিসেবে পরিচিত।

"কখন ব্ল্যাক বক্স পাওয়া যাবে, তার ওপরেই তদন্তের গতি নির্ভর করবে," বলেছেন তিনি। আর স্টিভেন ইয়ু জানিয়েছেন, সমুদ্র থেকে বিমানটির ধ্বংসস্তূপ সরানোর জন্য দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু হচ্ছে।

"এয়ারলাইন এবং বিমানটির মালিক পক্ষের সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। তারা দ্রুত হংকং আসছেন। তারা আসা মাত্রই আমরা এ বিষয়ে কাজ শুরু করবো," বলেছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়েছিলো যে, বিমানটি অবতরণের পর ভুল ডিরেকশনে যাচ্ছিলো কী-না। জবাবে ইয়ু বলেন, "স্বাভাবিকভাবে বিমানটি সাগরের দিকে ঘুরে যাওয়ার কথা নয়। কোন ডিরেকশনে যেতে হবে, সেটা গাইড করা হয়েছিলো। কিন্তু এটা নরমাল রুট (যেদিকে বিমানটি গেছে) ছিলো না"।

হংকং সরকার জানিয়েছে, দুর্ঘটনাটি ঘটেছে স্থানীয় সময় রাত তিনটা ৫০ মিনিটে। ভোর শুরুর এ সময়টায় কার্গো ফ্লাইট চলাচলের কারণে বিমানবন্দর খুব ব্যস্ত থাকে।

হংকং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কার্গো হাব আছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এই কার্গো হাব ব্যবহার করা হয়েছে চার লাখ ২৯ হাজার টন মালামাল পরিবহনের কাজে।

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন