কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ গ্লোবাল: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী আজ সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে কুষ্টিয়া পৌরসভার ঢাকা এলাকা দিয়ে মহাসড়কের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। সবার চোখে পানি, শোকে মুহ্যমান তারা। তাদের মধ্যে কয়েকজন গেলেন ডান পাশের গোরস্থানে। একটি কবরের বেড়া ধরে কাঁদলেন। বলছিলেন তাদের সহপাঠীকে এখানে রেখে যাচ্ছেন চিরদিনের মতো। এই সহপাঠী রোববার সকালেও ক্যাম্পাসে তাদের সঙ্গে ছিলেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে গতকাল রোববার দুপুরে ঢাকা এলাকার মেয়ে সায়মা হোসাইনের মৃত্যু হয়। আজ সোমবার দুপুরে নামাজে জানাজা শেষে এলাকার সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ সময় আত্মীয়-স্বজনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও তার সহপাঠীরা উপস্থিত ছিলেন। সায়মা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
কবরের বেড়া ধরে কাঁদছিলেন সায়মার চাচাতো বোন সৌহরিয়া আফরিন। তাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন সায়মার এক বান্ধবী। সৌহরিয়া বলছিলেন, ‘অন্ধকার কবরে তুই কী করে থাকবি।’
বাইপাস সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা সায়মার প্রায় ৮০ জন সহপাঠী বিশ্ববিদ্যালয়ের দু'টি বাসে করে চলে যান তাদের শিক্ষকদের সঙ্গে। যাওয়ার সময় সায়মার ছোট বোন ফারজানা হোসেনকে সান্ত্বনা দেন তারা।
সায়মার বাবার নাম আবুল হোসেন। মায়ের নাম শিরীনা খাতুন। এক ভাই ও দুই বোন তারা। সায়মা ছিলেন দ্বিতীয়। সবার ছোট বোন এবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। বড় ছেলে স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। দুই মেয়েকে পড়াশোনা করাতে খুবই কষ্ট করেছেন আবুল হোসেন।
সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেল, আধা পাকা ঘরের ভেতর চৌকিতে শুয়ে আছেন সায়মার মা শিরীনা খাতুন। তাঁর পাশে স্বজনরা বসে ছিলেন। শিরীনা বললেন, ‘মেয়েদের কীভাবে পড়ালেখা করাচ্ছি, তা শুধু আল্লাহ জানে। আমার মেয়ের (সায়মা) প্রাথমিকে, মাধ্যমিকে কখনো রোল নম্বর এক থেকে দুইয়ে যায়নি। এলাকাতেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়েছে। মাধ্যমিকে জিপিএ–৫ ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে মানবিকে জিপিএ–৫ পেয়েছিল। এত মেধা সব চলে গেল।’
বাবা আবুল হোসেন বলছিলেন, ‘মেয়েকে প্রতিদিন সকালে ফোন করে খোঁজ-খবর নিই। কিন্তু গতকাল সকালে মেয়ে ফোন করে বলে, “বাবা কেমন আছ।” আমি তো চমকে উঠি। আজ কেন সে ফোন দিল। কোনো সমস্যা নেই বলে জানায়। এরপর আর কথা হয়নি। পরে জানতে পারি, সে পানিতে ডুবে মারা গেছে। আমার মেয়েকে পড়াশোনা করানোর সামর্থ্য ছিল না। মেয়ের মেধা ছিল। আত্মীয়-স্বজন সহায়তা করত। ভরা খেতে আগুন লেগে গেল। সব শেষ হয়ে গেল। মেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করার কথা বলত। সব শেষ। এসব বলে আর কী হবে!’
সায়মার চাচা মোহাম্মদ সুলতান বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ আগে ১২ হাজার টাকা দিয়ে একটি স্মার্ট ফোন কিনে দিলাম। মেয়ে বলেছিল, “আর মাত্র ৬ মাস পরেই বের হব। চাকরি করে তোমাদের দিব।” কিন্তু সে–ই চলে গেল।’
বাড়ির বাইরে চেয়ারে বসে কাঁদছিলেন সায়মার ভাই ইস্রাইল হোসেন। তিনি বললেন, ‘কিছুই বলার নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলেছেন, তদন্ত করবেন। তারা যা ভালো মনে করেন, করুক।’
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com