ঢাকা      শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬ কার্তিক ১৪৩২
শিরোনাম

১২৭ নট আউট, ভারতবাসীর নয়নের মণি জেমিমা

IMG
31 October 2025, 4:24 PM

স্পোর্টস ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: গত কয়েক বছরে একের পর এক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে জেমিমা রড্রিগেজকে। গত বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়া, বাবার বিতর্কের কারণে জিমখানার সদস্য পদ বাতিল, চলতি বিশ্বকাপে দুই ম্যাচে শূন্য রান, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে দল থেকে বাদ পড়া। কিন্তু তারপরও তিনি হেরে যাননি।

বৃহস্পতিবার সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জেমিমা প্রমাণ করে দিলেন, কেন তিনি ভারতের অন্যতম উজ্জ্বল প্রতিভা। নভি মুম্বাইয়ের ডি.ওয়াই. পাতিল স্টেডিয়ামে মহিলা বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অপরাজিত ১২৭ রানের ইনিংস খেলে ভারতকে এনে দিয়েছেন ঐতিহাসিক জয়।

মাত্র ২৫ বছর বয়সে তিনি একা হাতে ভারতকে ফাইনালে তুলেছেন। এই ইনিংসের মাধ্যমে জেমিমা তার নাম লিখিয়েছেন ভারতের মহিলা ক্রিকেট ইতিহাসের সোনালি অধ্যায়ে। কিন্তু মাঠের বাইরে, এই তারকা ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানার আগ্রহও কম নয়।

ঝলমলে ক্যারিয়ারের আড়ালে, জেমিমার জীবনের ব্যক্তিগত দিকটি তুলনামূলকভাবে অনেকটাই অজানা। সম্প্রতি একটি পডকাস্টে ইউটিউবার রণবীর আলাহবাদিয়ার সঙ্গে কথোপকথনে জেমিমা নিজেই তার সম্পর্কের বিষয়ে খোলাখুলি বলেন। তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত তিনি পুরোপুরি সিঙ্গেল।

কারণ ছোটবেলা থেকেই তার সমস্ত মনোযোগ ছিল কেবল ক্রিকেটে। কিশোর বয়স থেকেই কঠোর অনুশীলনের কারণে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের জন্য কখনও সময়ই বের করতে পারেননি জেমিমা। তবে তিনি স্বীকার করেন, মাঝে মাঝে কোনও সঙ্গী না থাকার এই বিষয়টিও তাকে ভাবায়।

জেমিমার কথায়, ‘অনেক সময় মনে হয়, যদি এমন কেউ থাকত যার সঙ্গে নিজের ভাবনা ভাগ করে নিতে পারতাম’! তবে তিনি এটাও বলেন, ‘একজন সঙ্গী থাকা যেমন মানসিকভাবে ভরসা জোগাতে পারে, তেমনি তা লক্ষ্য থেকে মনোযোগ সরিয়ে দিতেও পারে’।

জেমিমা জানান, তিনি এমন কাউকেই খুঁজছেন, যিনি তাকে তার নিজের জন্য ভালবাসবেন। শুধুমাত্র একজন সফল ক্রিকেটার বলে যেন সম্পর্কটা না হয়। জেমিমা আরও জানান, তার অনেক সতীর্থই সোশ্যাল মিডিয়া বা কলেজে তাদের সঙ্গীর সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন, কিন্তু তিনি সবসময় প্রাধান্য দিয়েছেন ক্রিকেটকেই।

তারই এক সতীর্থ স্মৃতি মান্ধানা প্রকাশ্যে নিজের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন। উল্টোদিকে, জেমিমা ব্যক্তিগত জীবনটিকে গোপন রাখতেই পছন্দ করেন। জেমিমা জন্মগ্রহণ করেছেন মুম্বাইয়ের এক মাঙ্গলোরিয়ান খ্রিস্টান পরিবারে। তার বাবা ইভান রড্রিগেজ এবং মা লাভিতা রড্রিগেজ তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা।

ইভান নিজে একজন সাবেক ক্লাব পর্যায়ের ক্রিকেটার ও অভিজ্ঞ কোচ। যিনি মেয়ের ক্রিকেট জীবনের শুরু থেকেই পাশে থেকেছেন। তিনি এমনকি মেয়েদের ক্রিকেট দলও গঠন করেছিলেন জেমিমার স্কুলে, যাতে তার মেয়ে নিয়মিত খেলতে পারে।

অন্যদিকে, মা লাভিতা একজন পুষ্টিবিদ ও ক্রীড়াপ্রেমী, যিনি মেয়ের ক্যারিয়ারে সমানভাবে সহায়তা করেছেন। জেমিমা ছোটবেলায় প্রথমে ভান্ডুপ এলাকায় থাকলেও পরে উন্নত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে পরে বান্দ্রায় চলে আসেন। পরিবারের সেই সিদ্ধান্তেই আজ তিনি আন্তর্জাতিক সাফল্যের শিখরে।

মাত্র ১৭ বছর বয়সে ভারতের জাতীয় দলে অভিষেক ঘটে জেমিমার। এরপর থেকে তিনি হয়ে ওঠেন দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটার। ২০১৭ সালে ঘরোয়া ক্রিকেটে সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তার ২০২ রানের ইনিংস তাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে।

তারপর থেকে তিনি ভারতীয় দলে নিয়মিত মুখ, ওডিআই, টেস্ট ও টি–টোয়েন্টি, সব ফরম্যাটেই সফল। বিশ্বের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টেও খেলেছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ায় ওমেন্স বিগ ব্যাশ লিগে ব্রিসবেন হিট দলের হয়ে দেখা গিয়েছে তাকে।

তবে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের ইনিংস তাকে পৌঁছে দিয়েছে এক অন্য পর্যায়ে। জেমিমা রদ্রিগেজ আজ শুধুই একজন ক্রিকেটার নন, তিনি একটা জেনারেশনের অনুপ্রেরণা যিনি প্রমাণ করেছেন যে কঠোর পরিশ্রম, শৃঙ্খলা ও দৃঢ়তা থাকলে স্বপ্ন কখনও দূরে থাকে না।

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন