নিউজ ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: ব্রাজিলের বেলেম শহরে আয়োজিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ৩০-এ ক্রমবর্ধমান জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় ন্যায়ভিত্তিক জলবায়ু কার্যক্রম, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বৈশ্বিক সংহতির জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশের ন্যাশনাল স্টেটমেন্ট উপস্থাপনকালে এ অবস্থান তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বিশ্ব যখন অপরিবর্তনীয় জলবায়ু ক্ষতি এবং বহুপাক্ষিকতার প্রতি আস্থাহীনতার কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি, তখন বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন কোনো দূরবর্তী ধারণা নয়, বরং প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা। তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ভাঙনে লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী চরম সংকটে নিপতিত হচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, একদিকে চরম জলবায়ু ঝুঁকির বিরুদ্ধে লড়াই এবং অন্যদিকে রোহিঙ্গা সংকটের মানবিক দায়িত্ব বহন বাংলাদেশকে বহুমাত্রিক চাপের মুখে ফেলেছে। যা স্পষ্টভাবে দেখায় জলবায়ু, সংঘাত ও বাস্তুচ্যুতি কীভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ওপর অতিরিক্ত বোঝা সৃষ্টি করে।
মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ বলেন, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান ০.৫ শতাংশেরও কম, তবুও দেশটি দায়িত্ব ও নেতৃত্ব গ্রহণ করেছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশ এনডিসি ৩.০ বাস্তবায়নে অগ্রসর হচ্ছে, যা গ্লোবাল স্টকটেক ফলাফলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যা বর্তমানের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি। পাশাপাশি জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজন কার্যক্রমে বড় বিনিয়োগ অব্যাহত রয়েছে।
অতিরিক্ত সচিব আরো বলেন, পূর্বানুমানযোগ্য জলবায়ু অর্থায়ন ও প্রযুক্তি সহজলভ্য না হলে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো টিকে থাকতে পারবে না। সীমিত বাজেট থেকে দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যয় করতে গিয়ে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক জলবায়ু কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করার জন্য তিনি চারটি অগ্রাধিকারমূলক উদ্যোগ তুলে ধরেন। তা হলো- ন্যায়ের দৃষ্টিকোণ থেকে জলবায়ু কার্যক্রম মূল্যায়ন এবং আইসিজের মতামতকে জবাবদিহিমূলক পদক্ষেপে রূপান্তর; সরকারি অর্থায়ন শক্তিশালী করা এবং অভিযোজন অর্থায়ন বছরে কমপক্ষে ১২ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করা; অনুদানভিত্তিক অভিযোজন অর্থায়ন বৃদ্ধি এবং ক্ষয়ক্ষতি তহবিল দ্রুত কার্যকর করা এবং স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজন ও প্রকৃতিনির্ভর সমাধানে বিনিয়োগ করা—বিশেষ করে সুন্দরবনের মতো ম্যানগ্রোভ বন সংরক্ষণ, জলবায়ু-সহনশীল কৃষি এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক বন্যা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ।
তিনি বলেন, জলবায়ু উদ্যোগের রাজনীতিকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ পরিস্থিতি আরো জটিল করেছে এবং কার্যকর পদক্ষেপকে দীর্ঘায়িত করেছে।
বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন, কপ৩০ হয় জলবায়ু বিপর্যয়ের দিকে আরেকটি হারানো সুযোগ হয়ে থাকবে, নয়তো বহু বছরের অক্রিয়তাকে পেছনে ফেলে একটি নতুন দিশা দেখাবে।
তিনি বলেন, সাহস জাগুক, ন্যায় সামনে থাকুক এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে সম্মিলিত উদ্যোগ শুরু হোক।
ব্রেকিং নিউজ, এই মুহূর্তের খবর, প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর, লেটেস্ট নিউজ এবং গুরুত্বপূর্ণ আপডেট নিউজ পেতে ভিজিট করুন www.bangladeshglobal.com