ঢাকা      সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
শিরোনাম

এনআইডি, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধসহ ৪ বিল সংসদে

IMG
04 September 2023, 10:01 PM

ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল: ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন বিল, ২০২৩’সহ এক দিনে গুরুত্বপূর্ণ চারটি বিল সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন চলাকালে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা বিলগুলো উত্থাপন করেন। পরে স্পিকার অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বিলগুলো সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠিয়ে দেন।

বাকি তিনটি বিল হলো- ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল, ২০২৩’, ‘বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) বিল, ২০২৩’ ও ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (সংশোধন) বিল, ২০২৩’।

এনআইডি যাচ্ছে স্বরাষ্ট্রে, বিল উত্থাপন
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন বিল, ২০২৩’ উত্থাপন করেছেন। বিলটি পাস হলে নির্বাচন কমিশন থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে যাবে। ২০১০ সালের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন রদ করে নতুন এই আইন করা হচ্ছে। এই আইনের মাধ্যমে জন্মের পরপরই নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্র পাবে।

বিলটির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিভিন্ন দেশের উদাহরণের আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সুরক্ষা সেবা বিভাগ উক্ত দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বিবেচিত বিধায় সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাধ্যমে এই সেবাটি জনগণের নিকট পৌঁছিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বর্তমান আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন।

মন্ত্রী বলেন, সকল বয়সের নাগরিকের জন্য জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের লক্ষ্যে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০১০’ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে হালনাগাদ করে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩’ প্রণয়নের উদ্যোগ সময়োপযোগী। এটি প্রত্যেক নাগরিককে নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে নিবন্ধিত হওয়ার এবং এর ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলটি অধিকতর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে পাঁচ দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠান।

জমি দখল ও ভুয়া দলিলে কারাদণ্ড
জাতীয় সংসদে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল, ২০২৩’ উত্থাপন করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। অন্যের জমি নিজের দখলে রাখা, ভুয়া বা মিথ্যা দলিল তৈরি এবং নিজ মালিকানার বাইরে অন্য কোনো জমির অংশবিশেষ উল্লেখ করে দলিল হস্তান্তরে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে আইনটিতে।

বিলটি উত্থাপন প্রক্রিয়ায় আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম বিলের প্রশংসা করে বিলটি সংসদে উত্থাপনের জন্য মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

বিলটির বিষয়ে ভূমিমন্ত্রী বলেন, ভূমির স্বত্ব সংরক্ষণ ও শান্তিপূর্ণ ভোগদখল বজায় রাখার লক্ষ্যে ভূমিসংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধ এবং দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। নাগরিকগণের নিজ নিজ মালিকানাধীন ভূমিতে নিরবচ্ছিন্ন ভোগদখলসহ প্রাপ্য অধিকারসমূহ নিশ্চিতকরণ, ভূমি বিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিতকরণ এবং এর প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি ও সর্বসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি সম্পর্কিত অপরাধসমূহ প্রতিরোধ ও দমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, ভূমি সংক্রান্ত কিছু অপরাধের দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে উক্ত আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

মন্ত্রী বলেন, ভূমি হতে বেআইনি দখল, স্থাপনা বা প্রতিবন্ধকতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অবৈধভাবে ভরাটকৃত মাটি, বালু, ইত্যাদি অপসারণ করতে এবং উক্ত ভূমিকে এর পূর্বের শ্রেণি বা প্রকৃতিতে পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা সন্নিবেশ করা হয়েছে। ভূমিসংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা দূরীকরণ এবং যথাসময়ে জনগণের বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং মাঠ পর্যায়ের মতামত গ্রহণসহ অংশীজনের মতামত গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে প্রস্তাবিত ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’ প্রণয়ন করা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বিলটি আইনে পরিণত হলে ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা এবং ভূমি সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বিধায় সর্বসাধারণ উপকৃত হবেন।

পরে ভূমি মন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলটি অধিকতর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠান।

আরও দুটি বিল উত্থাপন
জাতীয় সংসদে ‘বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) বিল, ২০২৩’ উত্থাপন করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। বিলটির বিষয়ে ভূমিমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্র ও জনসাধারণের স্বার্থে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বর্তমানে আবশ্যকতা ও প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও জেলা প্রশাসকগণের মতামত গ্রহণপূর্বক বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন, ২০২৩ প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

মন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বিলটি আইনে পরিণত হলে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা হবে। পরিকল্পিত বালু উত্তোলনের মাধ্যমে নদ-নদীর নাব্যতা বজায় রাখা, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বালু/মাটির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অবৈধভাবে বালু/মাটি উত্তোলনের প্রবণতা বন্ধ হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিসহ জনসাধারণের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে মর্মে আশা করা যায়।

পরে ভূমিমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলটি অধিকতর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠান।

এদিকে জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (সংশোধন) বিল, ২০২৩’ উত্থাপন করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী (সংসদ কার্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত) আ ক ম মোজাম্মেল হক আজ জাতীয় সংসদে বিলটি উত্থাপনের প্রস্তাব করেন।

বিলটির বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, উৎপাদন এবং রপ্তানি বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণে উৎসাহ প্রদানের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়ন, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনে ২০১০ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ২০১০ আইন প্রণয়ন করা হয়। সরকার কর্তৃক ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম সম্পাদনের লক্ষ্যে ‘একুইজিশন এন্ড রিকুইজিশন অব ইম্মুভাবেল প্রপার্টি অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২’ রহিতপূর্বক ‘স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৭ প্রণীত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন, ২০১০ এর ধারা ৬ এ ‘একুইজিশন এন্ড রিকুইজিশন অব ইম্মুভাবেল প্রপার্টি অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২’ এর স্থলে ‘স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৭’ প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন।

পরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলটি অধিকতর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠিয়ে দেন।

বাংলাদেশ গ্লোবাল/এমএস

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

এ বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন