ঢাকা      শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
শিরোনাম

স্বাধীনতার ৫৩ বছরে আজ প্রশ্ন উঠছে, গণতন্ত্র কোথায়: মঈন খান

IMG
26 March 2024, 12:03 PM

সাভার, বাংলাদেশ গ্লোবাল: ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য বিরোধী দলের বিরুদ্ধে এক লাখ মামলা দেওয়া হয়েছে ও ৫০ লাখ নেতাকর্মীকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ অভিযোগ করেন।

ড. মঈন খান বলেন, "অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমাদের বলতে হচ্ছে, যে উদ্দেশ্যে এবং আদর্শ নিয়ে এই দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, যে আদর্শের জন্য তার নাম ছিল গণতন্ত্র৷ উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। আজকে ৫৩ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের একটিই প্রশ্ন, সেই গণতন্ত্র কোথায় গেলো; সেই দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি কোথায় গেলো, এটাই আজকের প্রশ্ন।"

তিনি আরও বলেন, "একটি সরকার এ দেশে এসেছে, সে সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা মুখে বলে গণতন্ত্র, বাস্তবে করেছে একদলীয় শাসন। তারা এবার করেছে বাকশাল-২। এটা আমার কথা নয়, এটা বিশ্ববাসীর কথা।"

মঈন খান দাবি করেন, "আজকে আপনারা দেখেছেন কিভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে লক্ষ হাজার কোটি টাকা এ দেশ থেকে পাচার করে দেওয়া হয়েছে। মেগা উন্নয়নের নামে কীভাবে মেগা দুর্নীতি হয়েছে। ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য যারা বিরোধী দল, তাদের বিরুদ্ধে এক লাখ মামলা দেওয়া হয়েছে। তাদের ৫০ লাখ নেতাকর্মীকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগে তাদের আসামি বানানো হয়েছে। এখানে যদি মানুষের ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ না থাকে। এ দেশে যদি মানুষের গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ না থাকে, তাহলে আজকে যারা কবরে শায়িত মুক্তিযোদ্ধা, তাদেরকে প্রশ্ন, কেন তারা এ দেশটি স্বাধীন করেছিলেন? সেই প্রশ্নের উত্তর আওয়ামী লীগ সরকারকে দিতে হবে।"

তিনি বলেন, "বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। এটা আজকে অত্যন্ত স্পষ্ট, যখন সেই ২৫ মার্চের কালরাতে পাক হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের ওপরে হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়েছিল। সেদিন আজকের আওয়ামী লীগ, যারা আজকে নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে দাবি করে, যারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তি বলে দাবি করে, তারা সেদিন পলায়নপর ভূমিকা নিয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর আওয়ামী লীগ দিতে পারবে, আমরা সেই উত্তর দিতে চাই না।"

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান বলেন, "যে কারণে স্বাধীনতার ঝাণ্ডা উঁচু করে তুলে ধরে জিয়াউর রহমান, সেদিনের মেজর জিয়া বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। পাকিস্তানের একটি প্রশিক্ষিত অত্যাচারী হায়েনার মতো অত্যাচারী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে প্রকাশ্যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেই স্বাধীনতার ঘোষণা শুধু বাংলাদেশে নয়, সেদিন ভেসে এসেছিল, আমি মেজর জিয়া বলছি, তিনি বলেছিলেন, ‘আই মেজর জিয়া হেয়ারবাই ডিক্লেয়ার দ্যাট ইন্ডিপেন্ডেন্ট রিপাবলিক অব বাংলাদেশ হ্যাজ বিন এস্টাবলিশ’ সেই কথা ইথারে ভেসে শুধু বাংলাদেশে নয়, সেই কথা সারা বিশ্বে প্রচারিত হয়েছিল। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূচিত হয়েছিল। সারা বিশ্বের মানুষ জেনেছিল, একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হতে যাচ্ছে।"

তিনি বলেন, "এর সঙ্গে আরেকটি কথা যোগ করতে চাই। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি স্বয়ং অংশ নিয়েছিলেন। তিনি সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। পালিয়ে লুকিয়ে থাকেননি কোলকাতায় আরাম আয়েশে। তিনি যুদ্ধ করেছিলেন। যুদ্ধে জয়লাভ করে ১৬ ডিসেম্বর দেশে ফিরেছেন। বাংলাদেশের মানুষ ভালোবেসে তাকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ খেতাব বীর উত্তম উপাধি দিয়েছেন।"

মঈন খান আরও বলেন, "আরও একটি প্রশ্নের উত্তর আপনাদের দিতে চাই, যে প্রশ্ন আপনারা করেছেন, শুধু তারা নয়। আমাদের বন্ধুরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি তাদের রাষ্ট্রীয় ভবনে রাষ্ট্রীয় ভোজসভা দিয়ে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে তাঁকে সম্মান জানিয়েছেন।"

এ নিয়ে বিতর্কের সুযোগ আছে কি না প্রশ্নে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, "বিতর্ক তোলা যাবে না কেনো। আমরা তো স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি, বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। যে যেটা বলতে চায়, বলবে। আওয়ামী লীগের কেউ কিছু বললে আমরা তার টুঁটি চেপে ধরি না। কাজে ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ গণতন্ত্রে থাকবে। কিন্তু ইতিহাসের যে সত্য, সেটি ইতিহাসই নির্ধারিত করে। আজকে বলে দিতে হবে না, কারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করে এ দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বাধীনতা অর্জন করেছিল।"

তিনি বলেন, "আমি স্কুলের পাঠ্যবইয়ে যত গল্প লেখি না কেনো, টেলিভিশনে, মাইকে যত বক্তব্য দেই না কেনো, এসব মিথ্যার বেসাতি যেটা আওয়ামী লীগ করে যাচ্ছে সেটা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।"

তিনি আরও বলেন, "ব্রিটিশ আমলে ঔপনিবেশিক শাসকদের একটা নীতি ছিল, যেটা সারা বিশ্বে শত বছর ধরে পালিত হয়েছে, বাইরে থেকে এসে যদি কোনো ক্ষমতা দখল করতে হয়, ক্ষমতা পরিচালনা করতে হয়, তাহলে সেখানে মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করো। মানুষকে বিভক্ত করে এক পক্ষকে আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দাও। আজকে দুঃখ ও লজ্জার সঙ্গে বলতে হয়, আজকে আওয়ামী লীগ সরকার, এমন এক সরকার যে দেশের মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। যে কারণে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য বাংলাদেশের মানুষদের দু'টি ভাগে ভাগ করে দিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিতে চায়। তাদের এ চাওয়া কোনোদিন পূরণ হবে না।" বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।


বাংলাদেশ গ্লোবাল/এইচএম

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন