ঢাকা      মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
শিরোনাম

কন্ট্রোল রুমে ঢুকে প্রকৌশলীকে পেটালেন কাউন্সিলর

IMG
02 April 2024, 4:09 AM

সিলেট, বাংলাদেশ গ্লোবাল: সিলেটে ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি ও ঝড়-তুফানের কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখায় বন্ধ রাখা বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে কন্ট্রোল রুমের ভেতরে ঢুকে প্রকৌশলী মাসুদ রানাকে মারধরের অভিযোগ ওঠেছে। রোববার (৩১ মার্চ) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে দক্ষিণ সুরমার বড়ইকান্দি উপকেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।

সিলেটে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়-তুফানের কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখায় কন্ট্রোল রুমে ঢুকে প্রকৌশলী মো. মাসুদ রানাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রায়হান হোসেনের বিরুদ্ধে। রোববার (৩১ মার্চ) রাতে দক্ষিণ সুরমা বড়ইকান্দি এলাকার বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৩ কেপিআইভুক্ত কন্ট্রোল রুমে এ ঘটনা ঘটে। মো. মাসুদ রানা সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৩-এর সহকারী প্রকৌশলী।

এ ঘটনায় সোমবার (১ এপ্রিল) দক্ষিণ সুরমা থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী প্রকৌশলী। মামলায় কাউন্সিলর রায়হান হোসেনকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়াও তার সহযোগী বায়োজিদ আহমেদ ও শাহদাত হোসেনকে আসামি করা হয়।

মামলার এজহার থেকে জানা যায়, রোববার রাত ১০টা থেকে একটা পর্যন্ত প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টি ও ঝড়-তুফানের কারণে বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৩, বিউবো, সিলেট দপ্তরের ১১ কেভি ফিডার ফল্টের কারণে দফতরের আওতাধীন বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ লাইন সচল করার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানাসহ দফতরের সকল উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও পালাবদলে কর্মরত কর্মচারীরা দফতরে উপস্থিত হন।

ফিডার লাইন চালু করার জন্য মাসুদ রানাসহ উপ-সহকারী প্রকৌশলীরা দফতরের বড়ইকান্দি উপ-কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমে অবস্থান করছিলেন। রাত প্রায় দেড়টার দিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর রায়হান হোসেনসহ আরও দুইজন বিনা অনুমতিতে কেপিআইভুক্ত কন্ট্রোল রুমে প্রবেশ করে দু'টি চালু ১১ কেভি ফিডার (১১ কেভি কদমতলী ও ১১ কেভি স্টেশন ফিডার) বন্ধ করা এবং ১১ কেভি বড়ইকান্দি ফিডার চালু করতে চাপ দিতে থাকেন। এ সময় সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানা তাদের বুঝাতে চেষ্টা করেন, কোনো ফিডার বন্ধ বা চালু করার জন্য সুনির্দিষ্ট কারণ প্রয়োজন। ফল্ট লাইন চালু করলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, জান ও মালের ক্ষয়-ক্ষতি হতে পারে।

কিন্তু এসব কথা না শুনে তারা সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানাকে হুমকি ধমকি দিতে থাকেন। ফল্টের কারণে বন্ধ হওয়া ১১ কেভি বরইকান্দি ফিডার জোরপূর্বক চালু করতে চাইলে তিনি মানুষের জীবন সংশয় ও নিরাপত্তার কথা ভেবে তাদের ফিডার চালু করা থেকে নিবৃত করার চেষ্টা করেন। এতে কাউন্সিলর রায়হান হোসেনসহ তার দুই অনুসারী তাকে গালাগালি করেন এবং মারধর করেন।

সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানা বলেন, কাউন্সিলর ফল্টের কারণে বন্ধ হওয়া ১১ কেভি বড়ইকান্দি ফিডার জোরপূর্বক চালু করতে চাইছিলেন। কিন্তু এভাবে এই ফিডার চালু করলে অনেক সমস্যা হবে। মানুষের জানমালের ক্ষতি হবে। তাই আমি তাকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি আমার কোনো কথা না শুনে আমার উপর আক্রমণ করেন। আমাকে জামার কলার ধরে টেনে হিঁচড়ে কন্ট্রোল রুমের বাইরে নিয়ে যেতে যেতে বলতে থাকেন এলাকা তাদের, তাদের কথাতেই সব কিছু হবে, আমাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে মেরে পার্শ্ববর্তী সুরমা নদীতে ফেলে দেবেন। উপস্থিত আমার সহকর্মীরা তাদের কোনোক্রমে নিবৃত করলে আমি প্রাণে বেঁচে যাই। কিন্তু যাওয়ার সময় আমাকে হুমকি দিয়ে যান, অফিসের আশেপাশে পেলে আমাকে মেরে ফেলবেন। এরপর তারা একে একে মোটর সাইকেলে স্থানীয় সন্ত্রাসী নিয়ে দফতরের সামনে অবস্থান করেন।

তিনি বলেন, এসময় বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১, বিউবো, আম্বরখানা, সিলেট দপ্তরের আওতাধীন শেখঘাট ৩৩ কেভি ফিডারের ফন্ট মেরামতের জন্য আমার দফতরের ৩৩ কেভি বরইকান্দি ফিডার শাটডাউন নিলে সমগ্র অফিস প্রাঙ্গণ ও কন্ট্রোল রুম অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এতে তারা ভাবে আমি ইচ্ছাকৃতভাবে লাইন বন্ধ করেছি এবং এজন্য তারা দ্বিতীয় দফায় এসে আমাকে গুম করে ফেলাসহ প্রাণনাশের হুমকি দেন।

এ ব্যাপারে ওয়ার্ড কাউন্সিলর রায়হান হোসেন বলেন, মারামারি বা হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে রাস্তায় পড়েছিল। সেই ছেঁড়া লাইন সরানোর জন্য আমরা তাদের বলি। কিন্তু তারা সেটা রাতে সরাতে রাজি হয়নি।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির বলেন, এরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি মাঠে থাকি আমরা। আমরাতো ঘরে বসে থাকি না। কিছু হলেই আমাদের স্টাফ, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই বের হয়ে কাজে লাগেন জনসাধারণের সেবার জন্য। অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, তারপরও আমরা পিছপা হই না। কিন্তু বিদ্যুৎ চলে গেলেই দফতরে এসে প্রকৌশলী, কর্মকর্তা কর্মচারীদের মারধর করা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। রাতে এটা খুবই বাজে কাজ করেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর। তিনি দায়িত্বশীল পদে থেকে দায়িত্ব জ্ঞানহীনের মতো কাজ করেছেন। তিনি যদি এরকম মারমুখী হন, তাহলে আগামীতে তার এলাকার জনগণও এ ধরনের কাজ করবেন। আমরা তো রাজনৈতিক-সামাজিক কারণে এসব ব্যাপারে কঠোর হতে পারি না। কিন্তু এবার আমরা এসব কঠোর হাতে দমন করবো।

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন