ঢাকা      শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
শিরোনাম

ঘূর্ণিঝড় রেমাল: আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ

IMG
27 May 2024, 4:01 AM

নিউজ ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় অঞ্চলের অনেক এলাকার বাঁধ ভেঙে ও উপচে পানি ঢুকে একের পর এক গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। এতে সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে যারা দিনের আলোতে আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি, সেইসব মানুষ গভীর রাতে গবাদিপশু নিয়ে ছুটছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। অন্যদিকে দিনের আলোতে যারা আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন, পানি প্রবেশের খবর শুনে তারা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি যাচ্ছেন মুল্যবান জিনিসপত্র আনার জন্য।

রোববার (২৬ মে) দুপুরের পর থেকেই সারাদেশের ৯ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেয়া মানুষের মাঝে শুকনো খাবার ও খিচুড়ি দেয়া হচ্ছে।

৪০০ কিলোমিটার আকৃতির ঘূর্ণিঝড় রেমাল স্থলভাগে তাণ্ডব চালাচ্ছে। রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যা ৬ টার পরপরই রেমালের কেন্দ্র উপকূল অঞ্চল ছুঁয়েছে৷ ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম করছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাতে বরগুনায় জলোচ্ছ্বাসে স্বাভাবিক জোয়ারের থেকে অন্তত ৬ থেকে ৭ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বাঁধ ভেঙে ও উপচে আমতলী উপজেলায় চারটি, বরগুনা সদর উপজেলায় পাঁচটি এবং বিষখালী নদীর মাঝের চর প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ প্রাণ বাঁচাতে শেষ সম্বলটুকু নিয়ে হন্যে হয়ে ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।

সদর উপজেলার পোটকাখালী এলাকার বাসিন্দা সেলিম মিয়া বলেন, সতর্কবার্তা পেলেও ভেবেছিলাম কিছু হবে না। কিন্তু রাত ১২টার দিকে অবস্থা বেগতিক দেখে গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি। আমাদের এলাকার বেড়িবাঁধ উপচে পানি গ্রামের মধ্যে প্রবেশ শুরু করেছে।

মাঝের চরের বাসিন্দা রিয়াজ জানান, দুপুরে জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে মাঝেরচরের লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। রাতের জোয়ারে ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে অর্ধ নিমজ্জিত হয়ে গেছে মাঝেরচর। এখানেও বাসিন্দারা মুজিব কেল্লা ও সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রতি মুহুর্তে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে।

সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের মাছখালী গ্রামের বাসিন্দা হেমায়েত মিয়া বলেন, জলোচ্ছ্বাসে আমাদের এলাকার কমপক্ষে ২০০ মিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। জোয়ারে ৫ থেকে ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের বাসিন্দারা যে যেভাবে পারছেন, নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটছেন।

বড় পোটকাখালী গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, বড় পোটকাখালী এলাকার সরকারি দু'টি সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের সবাইকে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে বলেছি।

উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষের জন্য খুলে রাখা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। রাত নয়টায় এক বিজ্ঞপ্তিতে বাগেরহাটের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান এই তথ্য জানিয়েছেন।

বাগেরহাটের মানুষের আশ্রয়ের জন্য ৩৫৯টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করেছে জেলা প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দমকা ঝড়ো হাওয়ায় বিদ্যুতের লাইনের উপর গাছপালা উপড়ে পড়ায় জেলা জুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।

বাগেরহাট ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ঝড়ে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাস করা জনসাধারণের জন্য জেলায় ৩৫৯টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়। রোববার সকাল থেকে রেডক্রিসেন্ট, সিপিপি, স্কাউটসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পাঁচ সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে মাইকিং করে। দুপুরের পর থেকে নারী, পুরুষ ও শিশুরা আশ্রয় কেন্দ্রে আশা শুরু করে। রাত পর্যন্ত এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৭০ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া চার হাজারের বেশি গৃহপালিত গরু-ছাগলও আশ্রয় কেন্দ্রে নিরাপদে রাখা হয়েছে।

বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক সুশান্ত রায় বলেন, জেলায় চার লাখ ৮৫ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছে। দমকা ঝড়ো হাওয়ায় পল্লী বিদ্যুতের মূল সঞ্চালন লাইনের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে। এতে কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুর্যোগ শেষ হলে লাইনে কাজ করে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু করা হবে।

সাতক্ষীরায় বিকেলের পর থেকে প্রচণ্ড ঝড় ও নদীতে তুফান উঠলে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালি আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকত মোড়ল নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল সাতক্ষীরা উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে।

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন