ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল: রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, বাংলাদেশে বিদ্যমান সংবিধান ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরাচারী ব্যবস্থার পথ তৈরি করেছে। ফলে শুধু সংবিধান সংস্কার কিংবা সংশোধন নয়, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রপন্থি বিষয়গুলো রেখে সংবিধান পুনর্লিখন প্রয়োজন। এই সংবিধানে স্বৈরাচারী ও সাংবিধানিক একনায়ক তৈরির পথ রয়েছে। ফলে কিছু কাটাছেঁড়া করে এর সমাধান সম্ভব নয়।
আজ শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে একটি একক জনবক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘স্পিক বাংলাদেশ’ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের উদ্যোগে ‘গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের সংবিধান: সংশোধন না পুনর্লিখন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়।
এ সময় সংবিধান কেন সংশোধন করে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়, তার তিনটি কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, প্রথমত, বিদ্যমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে অভাবনীয় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও তিনি দলের প্রধান, সংসদীয় দলের নেতাসহ মোট চারটি ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্রপতির হাতে ক্ষমতার পাহাড় তৈরি করা হয়েছিল। বাংলাদেশ রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকারব্যবস্থায় প্রবেশের সময় এসব ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেওয়া হয়। সে ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে যেহেতু কোনও জবাবদিহি নেই, তাই অনিবার্যভাবেই তিনি স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে ওঠেন।’
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের তিন ভাগের এক ভাগকে দেখানো হয়েছে ‘ব্যাসিক স্ট্রাকচার হিসেবে, যেগুলো কখনও পরিবর্তন করা যাবে না উল্লেখ তিনি আরও বলেন, এটাকে বলা হয় ‘ইটার্নিটি ক্লজ’ তথা চিরকালীন ধারা, যা করার অধিকার পৃথিবীর কোনও সংসদের নেই। কারণ সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে হলেও জনগণ তাদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত করে। তৃতীয়ত, সংবিধানে ক্ষমতাবিন্যাস যেভাবে করা হয়েছে, খুঁটিনাটি পরিবর্তন করে সেখানে ভারসাম্য তৈরি করা যাবে না।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বর্তমান সংবিধানের যেসব বিষয় মানবাধিকার ও গণতন্ত্র পরিপন্থি নয়, সেগুলো রেখে বাকি বিষয়গুলো পুনর্লিখন করা যেতে পারে। পুনর্লিখনের ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার ঘোষণায় যে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচারের’ কথা বলা হয়ছে, তা মূল ভিত্তি হতে পারে। কারণ সেখানেই এই রাজনৈতিক সমাধানটি রয়েছে। যেকোনও সংবিধান জনগণের আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীকের একটি দলিল। ১৯৭৮ সালে স্পেনে ও ১৯৮৮ সালে ব্রাজিলেও জন-আকাঙ্ক্ষার ওপর সংবিধান পুনর্লিখন হয়েছে। ২০২৪ সালকে যদি সংবিধান ধারণ করতে না পারে, তাহলে আমরা কীভাবে বুঝবো একটি গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে?’
সংবিধানের পুনর্লিখনের ক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে দাবি করে এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, রাষ্ট্র জনগণের বস্তু। বর্তমান সংবিধানে যে মানবাধিকারগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো পূরণের বাধ্যবাধকতা রাষ্ট্রের নেই। অথচ নাগরিক তখনই নাগরিক হয়ে উঠবেন, যখন তার এই অধিকারগুলোর নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। ভার্টিকেলের পাশাপাশি হরিজন্টাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে বিকাল সাড়ে ৩টায় কয়েকজন লেখক, অ্যাকটিভিস্ট, আইনজীবী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে ‘স্পিক বাংলাদেশ’ নামে অরাজনৈতিক সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি মুহাম্মদ সজল জানান, এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যা নাগরিক অধিকার, আইনি ও ধর্মীয় অধিকার এবং মানবাধিকারের ব্যাপারে কথা বলবে।
বাংলাদেশ গ্লোবাল/এফআর
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com