ঢাকা      বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১
শিরোনাম

একদিনে প্রভাবশালী ২১ পিডিবি কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি

IMG
30 October 2024, 11:35 AM

ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল: একদিনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) প্রভাবশালী ২১ জন কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশই বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতা এবং সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সিন্ডিকেটের সদস্য।

অভিযোগ আছে, আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে এই সিন্ডিকেট বিদ্যুৎ খাতে চালিয়েছিল ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি। এক যুগ ধরে এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিয়েছেন খোদ নসরুল হামিদ বিপু ও পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানসহ সাবেক দুই চেয়ারম্যান। আর সিন্ডিকেট হোতা হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বসে এসব কর্মকাণ্ডের কলকাঠি নাড়তেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ ও আহমেদ কায়কাউস।

ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে আছেন তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও আবুল কালাম আজাদ। পিডিবির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। বাকি দুই চেয়ারম্যানও পলাতক রয়েছেন। দেশের বাইরে থাকায় আহমেদ কায়কাউস এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন।

তবে অভিযোগ আছে, এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন কোম্পানি ও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অনেক প্রভাবশালী শীর্ষ কর্মকর্তা ও রাঘববোয়ালরা বহাল তবিয়তে আছেন। এদের মধ্যে অনেক রাঘববোয়ালের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও কেন্দ্র নির্মাণে মেশিনারির আমদানির নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ আছে। নিম্নমানের ও পুরোনো মেশিনারিজ আমদানির নামে একটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক শীর্ষ কর্মকর্তাসহ এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ আছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২৮ অক্টোবর পিডিবির এক অফিস আদেশে যাদের অন্যত্র বদলি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ নেতা বিউবোর বাণিজ্যিক পরিচালন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মফিজুল ইসলাম। তাকে বিউবোর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) পদে বদলি করা হয়েছে। সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান সিন্ডিকেটের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যানে চিফ স্টাফ অফিসার মনিরুজ্জামানকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং গবেষণা ও উন্নয়ন পরিদপ্তরের পরিচালক করা হয়েছে।

বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পরিদপ্তর বিভাগের পরিচালক সাধন চন্দ্র দেকে চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক পদে বদলি করা হয়েছে। সাধন চন্দ্র দে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের অন্যতম নেতা। অপর পরিষদ নেতা পরিচালক এসবিইউ পরিদপ্তরের পরিচালক জাকিয়া নাজনিন পান্নকে ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিট রি-পাওয়ার্ড কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক করা হয়েছে।

এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ নেতা নকশা ও পরিদর্শন-১ পরিদপ্তরের উপপরিচালক আশিক ইমরানকে ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিট বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবে বদলি করা হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী মুজিবুর রহমানকে নির্বাহী প্রকৌশলী পরিচালন পদে বদলি করা হয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কনজ্যুমার অ্যাফেয়ার্স শহীদুল ইসলামকে শাহজীবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে বদলি করা হয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতা ছিলেন। বিউবোর বিতরণ বিভাগের উপসচিব জাহাঙ্গীর আলম জুয়েলকে ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সপ্তম ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে বদলি করা হয়েছে। তিনিও বঙ্গবন্ধু পরিষদ নেতা। নকশা ও পরিদর্শন-২ পরিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী তানভীর মাহমুদুল হাসানকে বাঘাবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে বদলি করা হয়েছে। তিনিও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ নেতা।

চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট কমবাইন্ড বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক নুরুল আবছারকে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পরিদপ্তরের পরিচালক পদে বদলি করা হয়েছে। রাউজান চারশ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপপ্রকল্প পরিচালক নান্নু মিয়াকে ক্রয় পরিদপ্তরের পরিচালক পদে বদলি করা হয়েছে। ঘোড়াশাল ৩য় ইউনিট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক শফিকুল হুদাকে কনজ্যুমার অ্যাফেয়ার্স বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে বদলি করা হয়েছে। ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোকতার হোসেনকে নকশা ও পরিদর্শন-১ এর উপপরিচালক করা হয়েছে। কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল আনামকে বিতরণ বিভাগের উপসচিব করা হয়েছে।

এর আগে এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে বিদ্যুৎ বিভাগের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছিল। তবে অভিযোগ আছে, সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানের অন্যতম সিন্ডিকেট সদস্য মনিরুজ্জামানকে অন্যত্র বদলি করা হলেও তার ডান হাত হিসাবে পরিচিত কর্মচারী পরিদপ্তরের উপপরিচালক বনি আমিন এবং আইপি সেল-১ এর পরিচালক শামসুজোহা কবীর এখনো বহাল তবিয়তে থেকে সব ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সদস্যদের পিডিবি থেকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন।

জানা গেছে, একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া থেকে শুরু করে অনুমোদন পর্যন্ত কমপক্ষে ২০টি ধাপে সিন্ডিকেটকে টাকা দিতে হতো। এর মধ্যে ছিল প্ল্যানিং, সাইট ভিজিট, মেশিনপত্র অনুমোদন দেওয়া, নেগোসিয়েশন, প্রকল্পের সাইট সিলেকশন, মাটি ভরাট, জমি ক্রয়, বিদ্যুৎ ক্রয়ের দরদাম ঠিক করা, বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা বা কমিশনিং, মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠানো, ক্রয় অনুমোদন, বিল অনুমোদন, বিল ছাড় করা-অর্থাৎ প্রতিটি খাতে এ সিন্ডকেটকে টাকা দিতে হতো।

বাংলাদেশ গ্লোবাল/জেএস

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন