ঢাকা      রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১
শিরোনাম

আইপিএলের ফাইনালে কলকাতার প্রতিপক্ষ হায়দরাবাদ

IMG
25 May 2024, 12:14 AM

স্পোর্টস ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: পশ্চিমবঙ্গের এক ক্রিকেটারের দাপটেই আইপিএলের ফাইনালে কলকাতার সামনে হায়দরাবাদ। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে নেমে তিন উইকেট তুলে নেন শাহবাজ আহমেদ। শুক্রবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রাজস্থান রয়্যালসকে ৩৬ রানে হারিয়ে ফাইনালে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। দুর্দান্ত অধিনায়কত্ব প্যাট কামিন্সের। পারফেক্ট বোলিং চেঞ্জ। চিপকের মন্থর উইকেটের পূর্ণ ফায়দা তোলেন। পাওয়ার প্লে শেষ হতেই বল দেন শাহবাজের হাতে। তাতেই বাজিমাত।

এর আগে, চিদম্বরম স্টেডিয়ামে সাত ম্যাচের মধ্যে পাঁচ ম্যাচে পরে ব্যাট করা দল জেতে। কিন্তু এদিন ঘুরে যায় ভাগ্য। প্লে অফের প্রথম দুই ম্যাচে অল্প রানের পুঁজি নিয়ে নেমে ডিফেন্ড করতে পারেনি হায়দরাবাদ এবং বেঙ্গালুরু। কিন্তু এদিন সেটা করে দেখালো হায়দরাবাদ। ব্যাট হাতে হেনরিচ ক্লাসেন এবং বল হাতে শাহবাজ আহমেদ পার্থক্য গড়ে দেযন। শেষদিকে একাই লড়লেন ধ্রুব জুরেল। কিন্তু একার হাতে দলকে জেতানো সম্ভব ছিল না। প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেটের বিনিময়ে ১৭৫ রান তোলে সানরাইজার্স। জবাবে নির্ধারিত ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রানে শেষ করে রাজস্থান।

ফাইনালে প্রথম প্লে অফের পুনরাবৃত্তি। চলতি আইপিএলে এই নিয়ে তৃতীয়বার মুখোমুখি হবে কেকেআর এবং সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। আগের দু'বার জেতে নাইটরা। এবার হ্যাটট্রিকের হাতছানি গৌতম গম্ভীরের দলের। অন্যদিকে কেকেআরকে হারিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করতে চাইবেন কামিন্সরা। হায়দরাবাদের কর্তৃপক্ষ চেন্নাইয়ের। তাই ফাইনালে হয়তো সমর্থনও কিছুটা বেশি পাবে সানরাইজার্স।

এদিন হায়দরাবাদের ইনিংস শেষে পাল্লা ভারী ছিল সঞ্জুদের। শুরুটা করেন ট্রেন্ট বোল্ট, শেষটা আবেশ খান। গোটা আইপিএলে দুর্ধর্ষ ব্যাটিংয়ের পর প্লে অফে ফ্লপ সানসাইজার্সের টপ অর্ডার। কেকেআরের পর রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধেও ব্যর্থ। নির্ধারিত ওভারের শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৭৫ রান তোলে হায়দরাবাদ।

গোটা আইপিএলে ধুন্ধুমার ব্যাটিং। আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান। কিন্তু সানরাইজার্সের ৮০ শতাংশ সাফল্য নির্ভর করে ওপেনিং জুটির ওপর। পাওয়ার প্লেতে দারুণ শুরু করেন দুই ওপেনার। ট্রাভিস হেড এবং অভিষেক শর্মা রান না পেলেই সমস্যায় পড়ে প্যাট কামিন্সের দল। নাইটদের বিরুদ্ধেও তাই হয়েছিল। এদিনও তারই পুনরাবৃত্তি। প্লে অফের মধ্যে ৩ উইকেটে হারায় সানরাইজার্স। হেনরিচ ক্লাসেন‌ সবচেয়ে সফল ব্যাটার। ৩৪ বলে ৫০ রান করেন। মারেন ৪টি ছয়। কোনও চার নেই। শেষ দুই ওভারে তিনি থাকলে আরও বেশি রান উঠতো। কিন্তু ১৮.১ ওভারে সন্দীপ শর্মার বলে বোল্ড হন। যার ফলে রানের গতি কমে যায়।

টসে জিতে সানরাইজার্সকে ব্যাট করতে পাঠান সঞ্জু স্যামসন। মরা-বাঁচার ম্যাচে ব্যর্থ অভিষেক শর্মা। চার, ছয় হাঁকিয়ে শুরু করলেও ১২ রানে আউট হন। তবে তাতে রানের গতি কমেনি। দারুণ খেলেন রাহুল ত্রিপাঠি। আগের ম্যাচে অর্ধশতরান করেছিলেন। সেদিন যেখানে শেষ করেন, এদিন ঠিক সেখান থেকেই শুরু করেন। সাধারণত পাওয়ার প্লেতে বিধ্বংসী মেজাজে পাওয়া যায় হেডকে। কিন্তু ধীরে চলো নীতিতে শুরু করেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার। তাঁর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন ত্রিপাঠি। কিন্তু প্রত্যেক বল বাউন্ডারিতে পাঠাতে গিয়ে বিপক্ষের সাজানো ফাঁদে ধরা পড়েন।

বোল্টের ওভারের প্রথম দু'বলে ছয় এবং চার মারার পর থার্ড ম্যানের ওপর দিয়ে আবার ছয় মারার চেষ্টা করতে গিয়ে চাহালের হাতে ধরা পড়েন। বলটা স্লো থাকায় জমি কভার করেনি। ২টি ছয়, ৫টি চারের সাহায্যে ১৫ বলে ৩৭ রান করে আউট হন। একই ওভারের শেষ বলে আইডেন মার্করামকে ফিরিয়ে দেন বোল্ট। বেশ কয়েকটা ম্যাচ পর দলে ফিরেই ব্যর্থ। মাত্র ১ রান করেন। ৫৭ রান ৩ উইকেট হারায় হায়দরাবাদ। পাওয়ার প্লের শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ৬৮ রান ছিল। চতুর্থ উইকেটে ৪২ রান যোগ করে হেড-ক্লাসেন‌ জুটি। শুরুটা করেও বড় রান করতে ব্যর্থ সানরাইজার্সের ওপেনার। দশম ওভারে ব্যক্তিগত ৩৪ রানের মাথায় ফিরে যান। ইনিংসে ছিল ১টি ছয়, ৩টি চার। নিয়মিত উইকেট হারানোর ফলে নিজের চেনা ছন্দে পাওয়া যায়নি ক্লাসেনকে।

তবে দলের প্রয়োজন অনুয়ায়ী একটা দিক ধরে রাখেন। তাঁর অর্ধশতরানে লড়াই করার মতো জায়গায় পৌঁছায় হায়দরাবাদ। রান পাননি নীতিশ কুমার রেড্ডি (৫) এবং আব্দুল সামাদ (০)। দু'জনেই আবেশ খানের শিকার। প্রথম বলেই বোল্ড হন সামাদ। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে নেমে ১৮ রান করেন শাহবাজ আহমেদ। ক্লাসেন‌ ক্রিজে থাকাকালীন মনে হয়েছিল ১৯০-২০০ রানের কাছাকাছি হয়তো পৌঁছে যাবে হায়দরাবাদ। কিন্তু প্রোটিয়া বিগ হিটার আউট হতেই সেই সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়।

রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় রাজস্থান। দলের ২৪ রানে ফেরেন টম কোহলার (১০)। কখনই স্বচ্ছন্দ মনে হয়নি রাজস্থানের ওপেনারকে। তবে অন্যপ্রান্তে স্কোরবোর্ড সচল রাখেন যশস্বী জয়েসওয়াল। পঞ্চম ওভারে ভুবনেশ্বরের বলে ১৯ রান নেন। তবে এদিনও অর্ধশতরান হাতছাড়া করেন বাঁ হাতি ওপেনার। ২১ বলে ৪২ রান করে আউট হন যশস্বী। ইনিংসে ছিল ৩টি ছয়, ৪টি চার। আগের দিনও ক্লান্ত দেখানোর পরপরই প্যাভিলিয়নে ফেরেন তরুণ ওপেনার।

এদিনও পায়ে ক্র্যাম্প ধরার পরের ওভারেই আউট হন। জঘন্য সঞ্জু স্যামসন। ঠিক আগের ম্যাচের পুনরাবৃত্তি। সেদিনও যশস্বী আউট হওয়ার পর বাজে শট খেলে আউট হয়েছিলেন। এদিনও রাজস্থানের ওপেনার ফেরার পরের ওভারেই আউট সঞ্জু। আরও একবার দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দেন রয়্যালসের অধিনায়ক। ১০ রানে আউট হন। ছন্দে থাকা যশস্বী ফেরার পরে বড় শট মারার কোনও দরকার ছিল না। গোটা টুর্নামেন্টে দারুণ ছন্দে থাকা রিয়ান পরাগের সামনে সুযোগ ছিল নায়ক হওয়ার। কিন্তু আসল দিনই ব্যর্থ। প্ল্যানিংহীন ব্যাটিং। খারাপ টেম্পারামেন্টের পরিচয় দেন। সদ্য ৩ উইকেট হারানোর পর ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময় ছয় মারার চেষ্টা করা কোনভাবেই উচিত হয়নি। উইকেটে টিকে থাকার দরকার ছিল। ৬ রানে আউট হন পরাগ। খাতা খুলতে পারেননি রবিচন্দ্রন অশ্বিন।

ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার শিমরন হেটমেয়ারও (৪) ব্যর্থ। ৯২ রানে ৬ উইকেট হারায় রাজস্থান। তার মধ্যে ৩ উইকেট শাহবাজ আহমেদের। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে নেমে ম্যাচ জেতানো স্পেল এই অলরাউন্ডারের। ব্যাটে বিশেষ কিছু করতে না পারলেও বল হাতে ৩ উইকেট তুলে নেন শাহবাজ। তার মধ্যে দুটো গুরুত্বপূর্ণ উইকেট যশস্বী এবং পরাগের।

প্রশংসা করতে হবে অভিষেক শর্মার। জোড়া উইকেট তুলে নেন পার্ট টাইম স্পিনার। এর আগে চলতি আইপিএলে মাত্র তিন ওভার বল করেন। কিন্তু এদিন সুযোগ পেয়েই সঞ্জু স্যামসন এবং শিমরন হেটমেয়ারের উইকেট তুলে নেন। তবে অনবদ্য অধিনায়কত্ব প্যাট কামিন্সের। সাধারণত দ্বিতীয় ইনিংসে শিশিরের জন্য বিশেষ সুবিধা করতে পারে না স্পিনাররা। কিন্তু এদিন সেটা হয়নি। চিপকের মন্থর উইকেটে স্পিনারদের সদ্ব্যবহার করেন কামিন্স। শেষদিকে একাই লড়াই করেন ধ্রুব জুরেল। রাজস্থানের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী তিনি। ২টি ছয়, ৭টি চারের সাহায্যে ৩৫ বলে ৫৬ রানে অপরাজিত জুরেল।

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন