ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল: গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ব্যাংক থেকে কর্মীদের বেতনের টাকা তুলে ফেরার সময় র্যাব ও সাংবাদিক পরিচয়ে অস্ত্রের মুখে সাড়ে ১৯ লাখ টাকা ডাকাতি করে একটি চক্র। এ ঘটনায় মূলহোতাসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আজ বৃহস্পতিবারদুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।
বুধবার (১২ জুন) রাতে ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাতা দলের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়।
কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, গত ৬ জুন বিকালে গাজীপুরের শ্রীপুরের সেলভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের তিন কর্মকর্তা একটি প্রাইভেট ব্যাংক থেকে কারখানার শ্রমিকদের বেতন, ঈদ বোনাস ও পরিবহন খরচের সাড়ে ১৯ লাখ টাকা তোলেন। ওই টাকা নিয়ে প্রাইভেটকারে কারখানায় ফিরছিলেন তারা। তাদের বহনকারী গাড়িটি কারখানার কাছাকাছি আসলে অপর একটি গাড়ি তাদের গাড়িটির গতিরোধ করে। এসময় র্যাবের জ্যাকেট পরিহিত কয়েক ব্যক্তি অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কর্মকর্তাদে অপহরণ করে এবং তাদের নিজেদের গাড়িতে তুলে নিয়ে মারধর করে। ডাকাতরা জিম্মিদের নিয়ে গাজীপুর-ময়মনসিংহ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গাজীপুরের হোতাপাড়া এলাকায় তিন জনকে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তে নেমে রাজধানীর রামপুরা ও উত্তরা এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে অভিযান চালিয়ে ডাকাত সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো— চক্রের মূলহোতা
হামিম ইসলাম (৪৫), মো. জিন্নাহ মিয়া (২৭), মো. আমিন হোসেন (৩০), মো. রুবেল ইসলাম (৩৩) ও মো. আশিকুর রহমান (৪২)।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, দুটি খেলনা পিস্তল, র্যাবের দুটি জ্যাকেট ও দুটি ক্যাপ, একটি হ্যান্ডকাফসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। আসামিদের কাছ থেকে নগদ এক লাখ ৬২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার ডাকাত সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কমান্ডার আরাফাত বলেন, ডাকাত দলটির প্রধান হামিম। এই ডাকাত দলে ১০ থেকে ১২ জন সদস্য রয়েছে। এছাড়া গ্রেফতারকৃতরা ডাকাতি কাজে মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করতো বলে জানা যায়। ৩ থেকে ৪ বছর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে গাজীপুর, টঙ্গী, উত্তরাসহ রাজধানীর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির করে আসছিল তারা। ডাকাতির কৌশল হিসেব বিভিন্ন সময় নিজেদেরকে র্যাব, পুলিশ, ডিবি, সাংবাদিক ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সদস্য পরিচয় প্রদানসহ ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত গাড়িতে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন বাহিনীর লোগো সংবলিত স্টিকার ব্যবহার করতো। দলের কিছু সদস্য ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নজরদারি করে। বেশি অর্থ উত্তোলনকারী ব্যক্তিকে টার্গেট করে বাইরে অবস্থান নেওয়া চক্রের অন্য সদস্যদের জানিয়ে দিতো। পরে সুবিধাজনক স্থানে টার্গেট করা ব্যক্তির গাড়ির গতিরোধ ও নিজেদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। মারধর করে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে নির্জন স্থানে ফেলে পালিয়ে যেতো তারা। এই গ্রুপটি মাসে ২ থেকে ৩টি ডাকাতি করতো।
চক্রটি পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয় দিয়ে কয়েকটি সম্ভাব্য স্থানে ডাকাতির পরিকল্পনা করছিল বলে জানা যায়।
গ্রেফতার রুবেল দীর্ঘ দিন ধরে ডাকাতি পেশায় জড়িত। সে চক্রের মূলহোতা হামিমের প্রধান সহযোগী। ডাকাতির কৌশল হিসেবে বিভিন্ন সময় নিজেকে ভুয়া সাংবাদিক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া সদস্য পরিচয় দিতো। এরআগেও বরিশাল, ফরিদপুর, গাজীপুর, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভুয়া ডিবি ও র্যাব পরিচয়ে ডাকাতি করেছে রুবেল।
ব্যাংক থেকে বের হওয়ার তথ্য মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হামিমকে জানিয় দিতো রুবেল। ডাকাতি মামলা বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ধর্ষণ, মাদক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মিথ্যা পরিচয়ে ডাকাতির অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, উৎসবের সময়ে আর্থিক লেনদেন বেশি হয়। অনেকেই প্রতিষ্ঠানের জন্য বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে টাকা লেনদেন করেন। এই সময়ে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি অনেক বেশি থাকে। ব্যাংকেও আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের অনুরোধ থাকবে— প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলে এমন ঘটনা এড়ানো যাবে।
বাংলাদেশ গ্লোবাল/এফআর
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com