ঢাকা      বুধবার, ২৮ আগস্ট ২০২৪, ১৩ ভাদ্র ১৪৩১
শিরোনাম

ট্রাম্পের ওপর হামলা, যে প্রশ্নের মুখে সিক্রেট সার্ভিস

IMG
16 July 2024, 3:48 PM

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: যুক্তরাষ্ট্রে পেনসিলভেইনিয়া রাজ্যে নির্বাচনি প্রচার সমাবেশে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প হামলার শিকার হওয়ার পর বড় ধরনের কয়েকটি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসকে। প্রতিবেদন বিবিসির।

হামলার ঘটনায় প্রধান তদন্তকারীর ভূমিকা নিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। ট্রাম্পের নির্বাচনি সমাবেশে হামলায় একজন নিহত এবং আরও দুজন গুরুতর আহত হয়েছে।

এই ঘটনার জন্য জবাবদিহি করার দাবির মুখে সিক্রেট সার্ভিস বলছে, তারা কী ঘটেছিল, কীভাবে ঘটেছিল তা উদঘাটন করার চেষ্টা করছে। তাছাড়া, কী করে এ ধরনের ঘটনা ঠেকানো যায় এমনকি পুনরাবৃত্তিও রোধ করা যায় তা নিয়ে কাজ করছে তারা।

তবে এর মাঝেই সিক্রেট সার্ভিসের পরিচালক কিম্বার্লিকে তলব করা হয়েছে আগামী ২২ জুলাই মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের একটি কমিটির সামনে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য।

বিশেষজ্ঞরা এরই মধ্যে সিক্রেট সার্ভিসকে নানা প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন। এমনই পাঁচটি প্রশ্ন হচ্ছে:

বন্দুকধারীর ছাদ আগে থেকে সুরক্ষিত করা হয়নি কেন?
সন্দেহভাজন বন্দুকধারী থমাস ম্যাথিউ ক্রুকস কীভাবে ট্রাম্পের থেকে ১৩০ মিটার (৪৩০ ফুট) দূরে অবস্থিত সমাবেশের কাছে একটি ভবনের ছাদে প্রবেশ করেছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়।

সিক্রেট সার্ভিসের দুই কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এনবিসি নিউজ বলছে, ভবনের ছাদ বিশেষ করে অনিরাপদ ছিল। একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এনবিসি বলেছে, ভবনটির নিরাপত্তার জন্য কারও ছাদের ওপরে অবস্থান নেওয়া উচিত ছিল, যাতে কেউ ছাদে উঠতে না পারে।

পাশাপাশি ছাদ থেকে ট্রাম্পের পডিয়ামের এলাকাটি দেখা যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করা উচিত ছিল। তাহলে হামলাকারী ক্রুকস সরাসরি ট্রাম্পকে দেখতে পেতেন না বলে এনবিসি নিউজকে জানিয়েছেন হোমল্যান্ড সিকিউরিটির এক সেক্রেটারি।

বন্দুকধারী সম্পর্কে সতর্কবার্তা কি দেওয়া হয়েছিল?
গুলিবর্ষণের ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসি-কে বলেছেন, তিনি এবং অন্যরা 'স্পষ্টই' ক্রুকসকে রাইফেল হাতে ছাদে হামাগুড়ি দিতে দেখেছেন। তারা পুলিশকে খবর দিলেও সন্দেহভাজন হামলাকারী কয়েক মিনিট ধরে এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করতে থাকে এবং পরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিজেই মারা যায়।

কাউন্টি শেরিফ নিশ্চিত করে জানিয়েছেন যে, ক্রুকসকে একজন স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা দেখেছিলেন, কিন্তু তিনি তাকে সময়মতো থামাতে পারেননি। ট্রাম্পের আশপাশের এজেন্টদের কাছে এই তথ্য পৌঁছেছিল কিনা তাও এখনও স্পষ্ট নয়।

আইনপ্রয়োগকারী এক কর্মকর্তা বলেছেন, ক্রুকস কর্মকর্তাদের রাডারে ছিলই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তারা সিএনএন-কে বলেন, ইভেন্ট ম্যাগনেটোমিটারের কাছে ক্রুকসের সন্দেহজনকভাবে আচরণের তথ্য সম্ভবত সিক্রেট সার্ভিসকে জানানো হয়েছিল।

সিক্রেট সার্ভিস কি স্থানীয় পুলিশের উপর খুব বেশি নির্ভরশীল ছিল?
বন্দুকধারী যে জায়গা থেকে গুলি চালিয়েছিল পুলিশ সেটিকে বলছে, ‘সেকেন্ডারি রিং'। ওই স্থানে সিক্রেট সার্ভিস নয় বরং স্থানীয় পুলিশ ও রাজ্য কর্মকর্তারা টহল দিচ্ছিল।

সিক্রেট সার্ভিসের সাবেক এক এজেন্ট বলেন, এ ধরনের ব্যবস্থা তখনই কাজ করে যখন কোনও বিপদ দেখা দিলে কী করতে হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা থাকে।

ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকাকে জোনাথন ওয়াক্রো বলেন, "আপনি যখন স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভর করেন, তখন আপনাকে অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা নিতে হবে এবং বলে দিতে হবে যে, কোনও হুমকির ক্ষেত্রে আপনি তাদের কাছ থেকে করণীয় কি আশা করেন।”

কাউন্টি শেরিফ স্বীকার করেছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ছিল। তবে তিনি বলেন, এর জন্য কাউকেই এককভাবে দোষারোপ করা যায় না।

প্রচার সমাবেশ কি যথাযথভাবে আয়োজন করা হয়েছিল?
নির্বাচনকে সামনে রেখে আমেরিকার রাজনীতি যখন সরগরম, তখনই নির্বাচনি প্রচারণায় নিরাপত্তা বাহিনী সিক্রেট সার্ভিস টিম তুলনামূলক অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে।

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় লোকবল, সাজসরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

হাউস ওভারসাইট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, শনিবারের সমাবেশের মতো ইভেন্ট সুরক্ষিত করার জন্য স্থানীয় পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। সিক্রেট সার্ভিসও অনেকগুলো কাজের দায়িত্ব নিয়ে সবদিকে মনোযোগ দিয়ে উঠতে পারেনি।

এর আগে সিক্রেট সার্ভিসের ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলা জেসন শ্যাফেটজ ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকাকে বলেন, হুমকির ঝুঁকির ক্ষেত্রে ট্রাম্প বা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চেয়ে বড় আর কোনও ব্যক্তিত্ব নেই। কিন্তু পেনসিলভেইনিয়ার সমাবেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে সেটা মনে হয়নি।

সমাবেশের আগে ট্রাম্প শিবিরের কর্মী বাড়ানোর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে সিক্রেট সার্ভিস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ট্রাম্পকে কি যথেষ্ট তাড়াতাড়ি মঞ্চ থেকে নামানো হয়েছিল?
ট্রাম্পের ঢাল হয়ে যে এজেন্টরা দাঁড়িয়ে ছিলেন, তারা ঘটনার পরপরই তাকে নিরাপদভাবে মঞ্চ থেকে নামিয়ে নেওয়ায় প্রশংসিত হয়েছেন।

সাবেক সিক্রেট সার্ভিস কর্মী রবার্ট ম্যাকডনাল্ড বলেছেন, জরুরি পরিস্থিতিতে কী করা উচিত সে সম্পর্কে কোনও সঠিক পূর্ব পরিকল্পনা না থাকার পরও এজেন্টরা তাৎক্ষণিক ভাবে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেছেন।

কিন্তু তারপরও প্রশ্ন উঠছে যে, তারা কি যথেষ্ট ত্বরিত গতিতে সাবেক প্রেসিডেন্টকে গাড়িতে তুলে দিয়েছে।

ঘটনার ফুটেজে দেখা যায়, বন্দুকের গুলির শব্দে তারা দ্রুত তার চারপাশে ঢাল তৈরি করে, কিন্তু পরে ট্রাম্প তার জুতা নেওয়ার কথা বললে তারা থেমে যায়। সমর্থকদের উদ্দেশে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে তিনবার “ফাইট, ফাইট, ফাইট বলতে থাকেন ট্রাম্প।

সিক্রেট সার্ভিসের এক প্রবীণ কর্মকর্তা বলেছেন, তিনি অপেক্ষা করতে না। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জেফ্রি জেমস বলেন, আমি যদি ওখানে থাকতাম তাহলে জুতার জন্য দাঁড়াতে দিতাম না। তাকে বরং বলতাম, “আমরা যাচ্ছি, আমরা এখনই যাচ্ছি।



বাংলাদেশ গ্লোবাল/এফআর

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন