ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: দুর্নীতির একাধিক অভিযোগে বাংলাদেশে তদন্ত শুরুর পর সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতি বিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) ছিলেন তিনি। সিটি মিনিস্টার হিসেবে পরিচিত এই পদে থেকে টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতে দুর্নীতি দমনের দায়িত্বে ছিলেন। মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন টিউলিপ। স্টারমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।
পদত্যগপত্রে টিউলিপ উল্লেখ করেন, তিনি ভুল কিছুই করেননি। পদত্যাগের কারণ হিসেবে টিউলিপ বলেন, এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইকোনমিক সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেলে সেটা সরকারের কাজ থেকে মনোযোগ ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে পারতো।
বাংলাদেশে গত বছরের আগস্টে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে ২০১৫ সালে লন্ডনের একটি আসন থেকে প্রথমবার তিনি এমপি নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর গত জুলাইয়ে তিনি ইকোনমিক সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাঁরও নাম আসার বিষয়টি নিয়ে টিউলিপ পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, ‘পরিবারের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততার বিষয়টি সবাই জানে। যখন আমি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিই, সে সময় আমি আমার পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছি।’
পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের জন্য টিউলিপকে চিঠি দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কিয়ার স্টারমার। টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর এ নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিধি বিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা লাউরি ম্যাগনাস তদন্ত করেছেন। সেই তদন্তের বিষয়টি উল্লেখ করে কিয়ার স্টারমার টিউলিপকে জানান, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা কোনো অভিযোগের প্রমাণ পাননি ম্যাগনাস। স্টারমার বলেন, ‘আপনার (টিউলিপ) জন্য দরজা খোলা রইলো।’
গতকালই প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের কাছে লেখা এক চিঠিতে ম্যাগনাস বলেন, তদন্তে টিউলিপের বিরুদ্ধে কোনো অন্যায়ের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার সম্ভ্যাব্য ঝুঁকির ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন না।
বাংলাদেশে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে
গত আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ৯টি অবকাঠামো প্রকল্প থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। তাতে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে নাম আসে টিউলিপের। গত মাসে এ অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
আদালতে দাখিল অভিযোগের নথির বরাতে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বাড়তি ব্যয় দেখিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। রাশিয়ার সঙ্গে সেই চুক্তি করতে টিউলিপ সিদ্দিক সহযোগিতা করেন। চুক্তিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ব্যয় ১০০ কোটি ডলার বেশি দেখানো হয়।
দুদকের অনুসন্ধান শুরুর পর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাজ্যের দ্য সানডে টাইমসকে বলেছিলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের লন্ডনের সম্পত্তিতে টিউলিপের বসবাস করার খবর আসার পর তাঁর (টিউলিপ) ক্ষমা চাওয়া উচিত। টিউলিপের ব্যবহার করা সম্পত্তিগুলো নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত এবং ‘ডাহা ডাকাতির’ মাধ্যমে অর্জিত হয়ে থাকলে তা সরকারের কাছে ফেরত দেওয়া উচিত।
এরই মধ্যে গত সোমবার দুদক জানায়, তথ্য গোপন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকার পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে টিউলিপের মা শেখ রেহানা, বোন আজমিনা সিদ্দিক ও ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। তিন মামলাতেই টিউলিপ সিদ্দিক ও শেখ হাসিনাকেও আসামি করা হয়েছে।
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com