ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল: বলিউড অভিনেতা সাইফ আলি খানের জীবনের বিভীষিকাময় রাত ১৬ জানুয়ারি। যে রাতে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি তার শরীরে একের পর এক ছুরির আঘাত হেনেছিলেন। অভিনেতার স্ত্রী কারিনা কাপুর খান তার বয়ানে এ কথা পুলিশকে জানিয়েছেন। জেরার সময় প্রায় একই কথা বলতে শোনা গিয়েছে তারকা দম্পতির ছোট ছেলে জেহ্-র দেখভালকারীর থেকেও। ওই রাতে যিনি হামলার শিকার, সেই সাইফ কী বলছেন? ঠিক কী ঘটেছিল এই অভিনেতার সঙ্গে?
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইফ তার বয়ানে জানিয়েছেন হামলাকারীকে পিছনে থেকে চেপে ধরেছিলেন তিনি। এ সময় নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিল আততায়ী। আর তা করতে গিয়ে সে ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে থাকে অভিনেতাকে।
অভিনেতা জানিয়েছেন, পরিবারের সদস্যরা এবং গৃহপরিচারিকা সে দিন রাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। জেহ্-র চিৎকার শুনে তিনি প্রথম নিচ তলায় নেমে আসেন। এসে দেখেন, ছেলের ন্যানি ইলিয়াম ফিলিপের সঙ্গে এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির ধস্তাধস্তি হচ্ছে। দ্রুত তাকে বাঁচাতে পেছন থেকে আততায়ীকে চেপে ধরেন তিনি।
সাইফের কথায়, ‘আমার শরীর থেকে এত রক্ত বেরোতে দেখে কারিনা ও আমার ছেলেরা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ওরা আমায় হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।’
অভিনেতা বলেন, ‘জেহ্-র চিৎকার শুনে আমরা নিচে নেমে আসি। নিচের তলার ঘরে আমার দুই ছেলে থাকে। সঙ্গে থাকেন ওদের ন্যানি ও পরিচারিকারা। নিচে গিয়ে দেখলাম ছেলের ন্যানির সঙ্গে এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির ধস্তাধস্তি হচ্ছে। তার হাতে ধারালো ছুরি ছিল। বিপদ বুঝতে পেরে আমি পিছন থেকে লোকটিকে চেপে ধরি।’
সঙ্গে সঙ্গে আগন্তুক জেহ্-র বদলে নিশানা বানান অভিনেতাকে। এলোপাথাড়ি ঘাড়ে, হাতে, পিঠে ছুরি দিয়ে কোপাতে থাকেন! আঘাতের পর আঘাত সহ্য করতে করতে একটা সময় ক্লান্ত হয়ে পড়েন সাইফ। সেই অবস্থাতেই ধাক্কা দিয়ে হামলাকারীকে ছোট ছেলের থেকে দূরে সরিয়ে দেন। এই সুযোগে ন্যানি ইলিয়াম দ্রুত জেহ্-কে কোলে তুলে নিয়ে অন্য ঘরে পালিয়ে যান।
সাইফের ভাষ্য, ‘সে সময়েই আমায় আঘাত করা হয়। পিঠে, গলায় এবং হাতে ছুরি মারা হয়। গ্রিপ আলগা হলেও আততায়ী আমার হাতের নাগাল থেকে বের হতে পারেনি। কোনোমতে আমি ওকে একটি ঘরে বন্ধ করে দিই।’
গুরুতর আহত সাইফ এর পরেই হাসপাতালে ভর্তি হন। ফলে, হামলাকারী কী ভাবে তার বাসভবন থেকে পালান সে ব্যাপারে কিছুই জানেন না তিনি।
হামলাকারীকে আটকাতে গিয়ে সাইফের সঙ্গে সে দিন ন্যানি ইলিয়ামও অল্পবিস্তর আহত হয়েছিলেন। একটু ধাতস্থ হয়ে তিনি গৃহকর্তাকে জানান, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিটি জেহ্কে পণবন্দি বানাতে চেষ্টা করছিলেন। ১ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিলেন। পুলিশকে সে রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে সাইফের দাবি, এই বিভীষিকা আজীবন তাকে তাড়া করে বেড়াবে।
বড় ছেলে তৈমুরকে নিয়ে (মতান্তরে ইব্রাহিম আলি খান অথবা তার বন্ধু) সাইফ অটোয় চড়ে পৌঁছে যান লীলাবতী হাসপাতালে। হাসপাতালে যেতেই চিকিৎসকেরা দ্রুত ভর্তি করে নেন তাকে। নিয়ে যাওয়া হয় জরুরি বিভাগে। চিকিৎসকদের একটি পর্যবেক্ষণ দল গঠিত হয়। তারা অস্ত্রোপচার করে সাইফের মেরুদণ্ডের কাছে বিঁধে থাকা ছুরির ভাঙা অংশ বার করে আনেন। ঘাড় এবং বাহুর আঘাতের জন্য প্লাস্টিক সার্জারি করেন। ২১ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে অভিনেতাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, চুরির উদ্দেশ্য নিয়ে সাইফের ঘরে ঢুকেছিলেন আক্রমণকারী। নাম শরিফুল ইসলাম শেহজাদ। সম্ভবত তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। মুম্বাইয়ের ঠাণে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
সাইফ আলি খানের বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে সংগৃহীত আঙুলের ছাপ শরিফুলের সঙ্গে মিলে গিয়েছে। অভিযুক্ত অভিনেতার বাড়ির ১১ তলায় ডাক্ট পাইপ বেয়ে উঠেছিলেন। সেখানেও তার হাতের ছাপ পাওয়া গিয়েছে। জেহ্-র ঘরের দরজার হাতলে এবং বাথরুমের দরজায় অতিরিক্ত ছাপ পাওয়া গিয়েছে। সে সব ফরেনসিক তদন্তে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের ধারণা, সেই ছাপগুলোও অভিযুক্তের আঙুলের ছাপের সঙ্গে মিলে যাবে।
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com