ঢাকা      বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২
শিরোনাম

দুই কূল ছাপিয়ে বইছে তিস্তা-দুধকুমার, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

IMG
14 August 2025, 6:35 PM

নিউজ ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের তিস্তা এবং দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দুই নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ, তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ আমন ধান ও সবজির খেত, ডুবে গেছে রাস্তাঘাট। গবাদি পশু ও আসবাবপত্র নিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি রাস্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর। কেউ কেউ পলিথিন মোড়ানো ঝুপড়ি তৈরি করে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তার পানি ৫২ দশমিক ৩০ মিটার রেকর্ড করা হয়, যা বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপরে। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমারের পানি রেকর্ড করা হয় ২৯ দশমিক ৬৬ মিটার, যা বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপরে।

ব্রহ্মপুত্র, ধরলাসহ অন্যান্য নদীর পানি বাড়লেও তা এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্রের পানি রেকর্ড করা হয়েছে ২২ দশমিক ৩৪ মিটার, যা বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার নিচে এবং কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি রেকর্ড করা হয়েছে ২৫ দশমিক ৪৫ মিটার, যা বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে।

পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলার তিস্তাপাড়ের ১৩ উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়ন এবং কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার দুধকুমারপাড়ের ৮ ইউনিয়নের ২২০টি চর ও নদী তীরবর্তী গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশন তথ্যকেন্দ্র জানিয়েছে, আজ সকাল ৯টায় ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে তিস্তা অববাহিকার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো হলো: চর খড়িবাড়ী, পূর্ব খড়ীবাড়ী, একতার চর, সতীঘাট, ঝাড়সিংহেস্বর, ছোটখাতা, টেপা খড়িবাড়ী, খগাখড়িবাড়ী, গয়াবাড়ী, খালিশা চাপানী, ভেন্ডাবাড়ী, ঝুনাগাছ চাপানী, ছাতুনামা, পাগলপাড়া, গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ী, শোলমারী ও কইমারী ইত্যাদি।

ডিমলা উপজেলার খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, তার এলাকায় পাগলপাড়া গ্রামের পাশের চর থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮০টি পরিবার সহায় সম্বল হারিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। এসব পরিবারের চার শতাধিক মানুষ চরমভাবে খাদ্য ও সুপেয় পানি সংকটে ভুগছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, 'দুধকুমারের পানি বিপৎসীমার ওপরে। উজানের ঢলে পানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ব্রহ্মপুত্র প্লাবিত হলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। কেননা এ অঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারসহ সব নদ-নদীর পানি পতিত হয় ব্রহ্মপুত্রে।'

হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, 'তিস্তার দুর্গম চরাঞ্চলের অনেকেই গবাদি পশু ও আসবাব হারিয়েছেন। তারা উঁচু স্থানে পলিথিনের ঝুপড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।' তিনি জানান, তার ইউনিয়নে দশ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সরকারি ও বেসরকারিভাবে পানিবন্দি মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক নূসরাত সুলতানা জানান, বন্যা দুর্গত এলাকায় কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পানিবন্দি মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com

সর্বশেষ খবর

আরো পড়ুন