কুমিল্লা, বাংলাদেশ গ্লোবাল: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রী চট্টগ্রামগামী সেন্টমার্টিন পরিবহনের বাসে শ্লীলতাহানি ও ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় অভিযুক্তরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বাস থেকে ফেলে দেন। এ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনের মধ্যে দু'জনকে ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।
আটক হওয়া অভিযুক্ত দুইজনের একজনের নাম মো. আলী হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া। অন্যজন হলেন মোহাম্মদ আলী। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ।
জানা গেছে, ওই ছাত্রী আলেখারচর থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশে সেন্টমার্টিন নামের বাসে ওঠেন। এ সময় বাসে কোনো যাত্রী না থাকায় পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড যাওয়ার পথে গাড়িতে থাকা হেলপার ও তার সহযোগীসহ আরো দুইজন ভুক্তভোগীর হাত-পা বেঁধে ফেলেন এবং তার গলায় থাকা সোনার চেইন ছিনিয়ে নেন। এ সময় তার সঙ্গে যৌন হয়রানির পাশাপাশি তাকে মেরে ফেলার উদ্দেশে গাড়ি থেকে ফেলে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাস থেকে একজনকে পড়ে যেতে দেখে তারা বাস আটকান। এ সময় গাড়িতে থাকা ৫ জন থেকে তিনজন পালিয়ে যান। বাকি দু'জনকে তারা ধরে রাখেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গিয়ে অভিযুক্তদের মারধর করেন। স্থানীয়রা পুলিশকে কল দিলে তারা এসে দু'জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যেতে চান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিয়ে বিচার করতে চান- এমনটা বললে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, ভুক্তভোগীর কল পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে আসেন এবং অভিযুক্তদের বিচার চান। তবে পুলিশ প্রশাসন সঠিক কোনো সিদ্ধান্ত দিতে না পারায় তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় অভিযুক্তদের বহনকারী পুলিশের গাড়িও শিক্ষার্থীরা আটকে রাখেন। পরে সেন্টমার্টিন পরিবহনের দুইটি বাস বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে রাখেন তারা।
শিক্ষার্থীদের অবরোধের ফলে রাস্তার দুইদিকে প্রায় ২০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপার গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আলোচনার পর অভিযুক্তদের শাস্তির আশ্বাস পেয়ে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিলেও বিকেল ৫টা পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজীব তালুকদার বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ স্বীকার করে আসামিরা স্বাক্ষর দিয়েছেন।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া খানম বলেন, যে দু'জনকে আটক করা হয়েছে, আমরা মোবাইল কোর্ট অনুযায়ী দুই বছরের জেল দিয়েছি। বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করা হবে। ভিক্টিমের যে ক্ষতি হয়েছে তা আটক বাসের মালিকদের কাছ থেকে আদায় করা হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ২ বছরের জেল দিয়েছেন। যা অজামিন যোগ্য। পুলিশ প্রশাসন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাকি ৩ জনকে অ্যারেস্ট করবে। এক মাসের মধ্যে মামলার চার্জশিট প্রদান করবে। এছাড়াও ছিনতাই, হত্যা ও ধর্ষণের চেষ্টার বিষয়ে পুলিশ পৃথকভাবে খতিয়ে দেখবে। এই মামলার নিয়মিত আপডেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেবে।
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com