ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপ উপকূলে আজ শনিবার ভোরে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক সংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭.৪।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল কামচাটকা অঞ্চলের প্রশাসনিক কেন্দ্র পেত্রোপাভলোভস্ক-কামচাটস্কি শহর থেকে প্রায় ১১১ কিলোমিটার পূর্বে মাটি থেকে প্রায় ৩৯.৫ কিলোমিটার গভীরে। প্রাথমিকভাবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক সংস্থা ভূমিকম্পের মাত্রা ৭.৫ হিসেবে জানিয়েছিল, পরে তা কমিয়ে ৭.৪ নির্ধারণ করা হয়।
প্যাসিফিক সুনামি ওয়ার্নিং সেন্টার জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কারণে আশেপাশের রুশ উপকূলে সর্বোচ্চ এক মিটার উচ্চতার বিপজ্জনক সুনামি ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। এছাড়া জাপান, হাওয়াই এবং প্রশান্ত মহাসাগরের অন্য কিছু দ্বীপে তুলনামূলকভাবে ছোট ঢেউ দেখা যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
চলতি বছরের জুলাই মাসেই কামচাটকা উপকূলে ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। সেই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮.৮, যা ২০১১ সালের পর সবচেয়ে বড় কম্পন হিসেবে রেকর্ড করা হয়। ২০১১ সালে জাপানের উপকূলে ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল, যা ভয়াবহ সুনামি সৃষ্টি করে এবং ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়।
জুলাই মাসের ওই ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্প কামচাটকা উপদ্বীপে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। এতে প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে চার মিটার উচ্চতার সুনামি ঢেউ আঘাত হানে। ফলে হাওয়াই থেকে জাপান পর্যন্ত উপকূলবর্তী অঞ্চলে ব্যাপক সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। শুধু জাপানেই প্রায় ২০ লাখ মানুষকে উঁচু জায়গায় চলে যেতে নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। একই সময়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছিল, যা পরে ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করা হয়।
শনিবারের ৭.৪ মাত্রার এই ভূমিকম্প জুলাইয়ের ঘটনার তুলনায় অনেকটা কম হলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে আশপাশের রুশ উপকূল এবং প্রশান্ত মহাসাগরের কয়েকটি দ্বীপে সুনামি ঢেউ দেখা দিতে পারে। সেজন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সতর্কতা জারি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কামচাটকা উপদ্বীপ প্রশান্ত মহাসাগরের “রিং অব ফায়ার”-এর অংশ হওয়ায় এখানে প্রায়ই শক্তিশালী ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটে। ফলে সুনামির ঝুঁকিও থেকে যায়।
রিং অফ ফায়ার হলো সক্রিয় এবং সুপ্ত আগ্নেয়গিরির একটি বিশাল বেল্ট, যা প্রশান্ত মহাসাগরের বেশিরভাগ অংশকে ঘিরে রেখেছে। এটি দক্ষিণ চিলি থেকে শুরু করে আমেরিকার পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত, আলাস্কার দ্বীপপুঞ্জ এবং জাপানের নিচে ফিলিপাইন পর্যন্ত বিস্তৃত। কিছু ভূতাত্ত্বিকের মতে, এই রিংয়ে ইন্দোনেশিয়ান আগ্নেয়গিরির একটি শৃঙ্খলও রয়েছে।
এই আগ্নেয়গিরিগুলি সাবডাকশনের কারণে উদ্ভূত হয় - প্রতিবেশী প্লেটের নীচে একটি টেকটোনিক প্লেটের চলাচল - যা ম্যান্টলে শিলার গলনাঙ্ককে কমিয়ে দেয়। শিলাটি ম্যাগমায় পরিণত হয়, পৃষ্ঠে উঠে আসে এবং আগ্নেয়গিরি হিসাবে অগ্ন্যুৎপাত করে।
কিন্তু রিং অফ ফায়ার এই সাবডাকশনটি ব্যাপকভাবে করে। ফিলাডেলফিয়ার ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আগ্নেয়গিরিবিদ লোক ভ্যান্ডারক্লুইসেন বলেন, "রিং অফ ফায়ারের বিশেষত্ব হলো প্রশান্ত মহাসাগরের একাধিক মহাসাগরীয় প্লেটের সাবডাকশন সীমানা রয়েছে।" ভ্যান্ডারক্লুইসেন ব্যাখ্যা করেছেন যে পৃথিবীতে ৩৪,০০০ মাইল (৫৫,০০০ কিলোমিটার) সাবডাকশন প্লেট সীমানার প্রায় ৯০% প্রশান্ত মহাসাগরে পাওয়া যায়।
এই টেকটোনিক নড়াচড়ার ফলেও ভূমিকম্প হয়। যখন একটি প্লেট অন্য প্লেটের নিচে চাপা পড়ে, তখন "প্লেটগুলি একে অপরের সাথে ধাক্কা খাওয়ার সময় প্রচুর শব্দ হয়," রিং অফ ফায়ারে পৃথিবীর প্রায় ৭৫% সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে এবং পরিমাপিত ৯০% ভূমিকম্প এখানেই ঘটে।
"রিং অফ ফায়ার" নামটি নিয়ে গবেষকদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক রয়েছে। অনেক বিজ্ঞানী এই শব্দটিকে ঘৃণা করেন। প্রথমত, এটি আসলে একটি সম্পূর্ণ বলয় নয়। আগ্নেয়গিরিগুলি টেকটোনিক প্লেটের প্রান্ত অনুসরণ করে, যা কেবল প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর, পূর্ব এবং পশ্চিমে অধঃপতিত হয়। এছাড়াও বলয়ের কিছু অঞ্চলে কোনও আগ্নেয়গিরি নেই, যেমন পেরু এবং মধ্য চিলি।
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com