ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল: চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর দেশের ৯টি সাধারণ ও কারিগরি এবং মাদরাসা বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এই বছর পাসের হার কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার।
তিনি বলেন, বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া এ বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল অনেককে বিস্মিত করেছে। পাসের হার এবং জিপিএ–৫ সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কম এবং প্রশ্ন উঠেছে—কেন? এর উত্তর জটিল নয়, বরং সহজ, কিন্তু অস্বস্তিকর: বাংলাদেশে শেখার সংকট শুরু হয় খুব শুরুর দিকেই। প্রাথমিক স্তর থেকেই শেখার ঘাটতি তৈরি হয় এবং সেই ঘাটতি বছরের পর বছর সঞ্চিত হয়। কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে চাইনি। আমরা এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি যেখানে সংখ্যাই সত্য হয়ে উঠেছিল—পাসের হারই সাফল্যের প্রতীক, জিপিএ–৫ এর সংখ্যা ছিল তৃপ্তির মানদণ্ড। ফলাফল ‘ভালো’ দেখাতে গিয়ে আমরা অজান্তেই শেখার প্রকৃত সংকট আড়াল করেছি। আজ আমি সেই সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই। একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী হিসেবে আমি চাই, শিক্ষা ব্যবস্থা আবার বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করুক। যে ফলাফল শিক্ষার্থীর শেখাকে সত্যিকারের মূল্যায়ন করে, সেটিই হোক আমাদের সাফল্যের মানদণ্ড।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, এসএসসি ফলাফল প্রকাশের পর মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে যে উদ্বেগ উঠেছিল, আমি তা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছি। আমি সকল শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছি—যেন ভবিষ্যৎ পরীক্ষায়, বিশেষ করে এইচএসসি মূল্যায়নে, সীমান্তরেখায় থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতি সর্বোচ্চ ন্যায্যতা বজায় রাখা হয়, কিন্তু একই সঙ্গে যেন ফলাফলের বাস্তবতা বিকৃত না হয়। আমরা ‘অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি’ নয়, বরং ‘ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততা’কে বেছে নিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত সহজ নয়, কিন্তু প্রয়োজনীয়। কারণ আজ যদি আমরা সাহস করে বাস্তবতা স্বীকার না করি তাহলে মেধাবীদের প্রতি এবং আগামী প্রজন্মের প্রতি আমরা অন্যায় করব।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় হিসেবে আমরা কোনোভাবেই দায়িত্ব এড়াতে পারি না উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এই মন্ত্রণালয়ের কর্ণধার হিসেবে আমার প্রথম দায়িত্ব হলো নিজেকে এবং আমাদের পুরো ব্যবস্থাকে মূল্যায়নের আওতায় আনা।
‘এই ফলাফলকে আমি ব্যর্থতা নয়, বরং আত্মসমালোচনার সুযোগ হিসেবে দেখছি। আমরা এখন এমন এক সময়ে আছি, যেখানে নিজেদের, শিক্ষাবোর্ড, শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একত্রে শেখার ভবিষ্যৎ নিয়ে সততার সঙ্গে কথা বলার সময় এসেছে। আমরা যা করছি স্ব-মূল্যায়ন ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডকে তাদের মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার একটি স্বতন্ত্র পর্যালোচনা রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, আমরা শিক্ষাবিদ, গবেষক, ও নীতিনির্ধারকদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করছি—যারা ডেটা বিশ্লেষণ করে শেখার মূল ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করবেন। আমাদের উদ্দেশ্য, অভিযোগ নয়, সমাধান খোঁজা।’
উপদেষ্টা জানান, আগামী সপ্তাহে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি জাতীয় শিক্ষা পরামর্শ সভা আহ্বান করছে। সেখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয়, এবং প্রযুক্তি খাতের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। আমরা সবাই মিলে প্রশ্ন করব: কী ভুল হচ্ছে, কেন হচ্ছে, এবং কীভাবে তা বদলানো যায়? আমরা বোর্ডগুলোর মূল্যায়ন প্রক্রিয়া যাচাই করার জন্য র্যান্ডম স্যাম্পল অডিট শুরু করছি। সীমান্তরেখায় থাকা স্ক্রিপ্টগুলো বেছে নিয়ে স্বাধীনভাবে পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। উদ্দেশ্য—শাস্তি নয়, শেখা; কীভাবে মান উন্নত করা যায়, তা বোঝা। আমরা EdTech প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে কাজ করছি, কীভাবে ডিজিটাল শেখা ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক সহায়তা তৈরি করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ইংরেজি ও গণিতে ব্রিজ কোর্স বা বুটক্যাম্প চালুর সম্ভাবনা আমরা অন্বেষণ করছি, এবং বাস্তবতা যাচাই করে এগোব। আমরা মার্কিং রুব্রিক ও মডারেশন প্রটোকল পর্যালোচনা করছি, যেন ভবিষ্যতের পরীক্ষায় শিক্ষকরা আরও একীভূত মানদণ্ডে মূল্যায়ন করতে পারেন। এর জন্য রিফ্রেশার প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম চালুর সম্ভাবনা বিবেচনাধীন।
বাংলাদেশ গ্লোবাল/এমএস
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com