নিউজ ডেস্ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল: ভারতের অন্ধ্র উপকূলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মান্থা’র স্থলভাগে আঘাত শুরু হয়েছে। মচ্ছলিপত্তনম ও কাকিনাড়া উপকূলের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে ঝড়টি স্থলভাগে প্রবেশ করছে। প্রবল বেগে বইছে ১১০ কিমি প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত বাতাস, সঙ্গে অঝোর বৃষ্টি ও উপকূল জুড়ে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা। রাজ্যজুড়ে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিক ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে, জারি হয়েছে সতর্কতা নির্দেশিকা, বন্ধ রাখা হয়েছে ট্রেন চলাচল ও যানবাহন পরিষেবা।
মচ্ছলিপত্তনম শহরে ঘূর্ণিঝড় মন্তার তাণ্ডবে সম্পূর্ণভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রবল ঝোড়ো হাওয়া ও টানা বৃষ্টিতে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার ভেঙে পড়ায় একাধিক এলাকায় অন্ধকার নেমে এসেছে। উপকূলীয় অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরুদ্ধারে জরুরি কর্মীরা কাজ শুরু করলেও পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতরের মতে, মন্থা বর্তমানে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। ঝড়ের গতিপথ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে মচ্ছলিপত্তনম ও বিশাখাপত্তনমের ডপলার আবহাওয়া রাডার, উপকূলীয় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া স্টেশন, স্যাটেলাইট ও নৌযানগুলির মাধ্যমে। পাশাপাশি আরব সাগরের পূর্ব-মধ্য অংশে আরেকটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়েছে, যা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে জানিয়েছে আইএমডি।
মঙ্গলবার দুপুর থেকে মাঙ্গিনাপুড়ি সৈকতে ঘণ্টায় ১০০ কিমিরও বেশি বেগে বাতাস বইতে শুরু করেছে। ভারতের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১০ম ব্যাটালিয়নের কমান্ডার ঈশ্বর রাও গাড্ডে জানিয়েছেন, “দুপুরের পর থেকে বাতাসের গতি হঠাৎ বেড়ে যায়। মাঙ্গিনাপুড়ি সৈকতের রাস্তায় তিনটি গাছ পড়ে গিয়েছিল—এর মধ্যে দু’টি সরানো হয়েছে, একটি এখনও বৈদ্যুতিক খুঁটির উপর ঝুলছে।” তিনি জানান, ভারী যন্ত্রপাতি আনতে জেলা প্রশাসনের সহায়তা নেওয়া হয়েছে।
ঝড়ের কারণে অন্ধ্র প্রদেশ জুড়ে রেল পরিষেবায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ-মধ্য রেলওয়ের মুখপাত্র এ শ্রীধর জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ১২২টি ট্রেন বাতিল হয়েছে, ২৯টি পুনঃনির্ধারিত এবং ৮টি রুট পরিবর্তন করা হয়েছে। মোট প্রায় ১৬০টি ট্রেনের ওপর ঝড়ের প্রভাব পড়েছে। বিশাখাপত্তনম থেকে বিজয়ওয়াডা পর্যন্ত চলাচলকারী ট্রেনগুলিই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেঙ্গালুরু ও চেন্নাই থেকে হাওড়া, অসম ও সেকেন্দ্রাবাদগামী ট্রেনগুলিও প্রভাবিত হয়েছে।
আইএমডি-র বিশাখাপত্তনম সতর্কতা কেন্দ্রের কর্মকর্তা জগন্নাথ কুমার জানান, মান্থা আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কাকিনাড়া উপকূলে স্থলভাগে প্রবেশ করবে। পরবর্তী দু’দিনে অন্ধ্র প্রদেশের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে, ওডিশাতেও সতর্কতা জারি হয়েছে। রাজ্যের রাজস্ব ও বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী সুরেশ পুজারী বলেন, “আমরা সর্বস্তরের প্রশাসনিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বৈঠক করেছেন। ভারী বৃষ্টিতে যেসব মানুষকে সরিয়ে নিতে হবে, তাদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ ও আশ্রয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমরা যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত।”
সার্বিকভাবে বঙ্গোপসাগর উপকূলে ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে ‘মান্থা’র প্রভাব। প্রশাসন, রেল ও উদ্ধারকারী বাহিনী যৌথভাবে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, যাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সর্বনিম্ন রাখা যায়।
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com