রংপুর, বাংলাদেশগ্লোবাল: জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, আমরা সুশাসন পাইনি। যারাই যখন ক্ষমতায় এসেছে, একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। যারা আজকে পরিবর্তন চান, আবার আগের ধারায় ফিরে যেতে না চান, যারা ক্ষমতায় গিয়ে দেশকে নতুনভাবে পরিচালনা করবে—এমন ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। আজ বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত সমমনা ইসলামী আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোটের আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
আট দলের পাঁচ দফা দাবি হলো—জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা।
রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতি বাংলাদেশের মূল সমস্যা। আমাদের দেশের সম্পদের কোনো অভাব নেই। আমাদের অভাব দুর্নীতিমুক্ত সৎ নেতৃত্বের। বিগত ৫৪ বছরে দেখেছি, যারা ক্ষমতায় ছিলেন; তারা দুর্নীতির পাহাড় গড়েছে। সম্পদের অভাব এ জন্য নেই, সাড়ে ১৫ বছরে লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। দেশে সম্পদ ছিল বলেই পাচার করা হয়েছে। আজকে যদি সৎ নেতৃত্ব আমাদের সমাজে-রাষ্ট্রে কায়েম হয়, তাহলে বাংলাদেশ ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে দুর্নীতিমুক্ত হলে সিঙ্গাপুরের মতো নয়, তার চেয়ে অনেক উন্নত বাংলাদেশ হতে পারবে, ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। চব্বিশের ৫ আগস্টের পর পরিবর্তন শুরু হয়েছে। সেই পরিবর্তনকে স্থায়ী রূপ দিতে হলে আগামী নির্বাচনে আপনাদের মূল্যবান ভোট মূল্যবান জায়গায় দিতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি একটি বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইনের শাসন নেই। এমনকি আদালত পর্যন্ত আমরা নিয়ন্ত্রণ করেছি। এ অবস্থায় যে গণবিষ্ফোরণ হলো, অনেকে এটাকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে থাকেন। কেন বলা হয়? আমরা শুধু দুঃশাসন থেকে মুক্তি পাইনি, আমরা আধিপত্যবাদের হাত থেকে মুক্ত হয়েছি।
আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে জামায়াতের এই নেতা বলেন, আজকে সারা বাংলাদেশে আট দলের পক্ষে গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস আগামীর নির্বাচনে জনগণ ইসলাম এবং দেশপ্রেমিক শক্তিকে বেছে নেবে, ইনশাআল্লাহ। আজকে আমরা যারা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি, তারা যদি দায়িত্ব পাই তাহলে আমি রংপুরের সন্তান হিসেবে দাবি রেখে যেতে চাই। রংপুর যে সবসময় বৈষম্যের শিকার হয়েছে, সেই বৈষম্য দূর করতে হবে। অনেক শক্তি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছে না। আমরা পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছি না। যারাই দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, এই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। আজকে ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে ৪ কোটি মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। এর থেকে দেশকে বেরিয়ে আসতে হবে।
এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ফাঁসির দণ্ড নিয়ে আমি কারাগারে ছিলাম। যে কোনো মুহূর্তে আমার ফাঁসি কার্যকর করা হবে। কিন্তু আমাদের রংপুরের ছেলে আবু সাঈদের জীবনের বিনিময়ে যে গণবিপ্লবের শুরু হয়েছিল, তার ফলশ্রুতিতে ৫ আগস্ট আমার মুক্তির পথ সুগম হয়। যার কারণে আজ আপনাদের সামনে হাজির হওয়ার সুযোগ পেয়েছি।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করিম। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সালাহউদ্দিন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, সাংগঠনিক সচিব হাফেজ মাওলানা আবু তাহের খান, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, সংগঠক মুফতি মাহমুদুল হাসান, জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলামসহ আট দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
ব্রেকিং নিউজ, এই মুহূর্তের খবর, প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর, লেটেস্ট নিউজ এবং গুরুত্বপূর্ণ আপডেট নিউজ পেতে ভিজিট করুন www.bangladeshglobal.com