নাটোর, বাংলাদেশ গ্লোবাল: দীর্ঘদিন পর সোমালিয়ান জলদস্যুদের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে গত মঙ্গলবার দেশে ফিরেছেন এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিক। তাদের মধ্যে একজন নাটোরের জয় মাহমুদ। অর্ডিনারি সিম্যান হিসেবে কাজ করেন তিনি। চট্রগ্রাম থেকে রওনা হয়ে আজ বুধবার ভোরে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার সালাইনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামে নিজ পরিবারের কাছে ফিরেছেন।
পরিবারের একমাত্র ছেলেকে ফিরে পেয়ে সকাল থেকে জয়ের পরিবারে চলছে উৎসবের আমেজ। সন্তান জয় মাহমুদকে কাছে পেয়ে আনন্দের সীমা নেই মা আরিফা বেগমের। আদর সোহাগ করে বরণ করে নেন নিজ সন্তানকে। জয় মাহমুদের ফিরে আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশিরা তাকে এক নজর দেখার জন্য তার বাড়িতে ভিড় জমায়। জয় মাহমুদকে কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে ওঠেন স্বজন সহ প্রতিবেশীরা। তার ফিরে আসায় অনেকেই আনন্দ প্রকাশ করেন।
বুধবার দুপুরে নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জিম্মিদশার অভিজ্ঞতার কথা জানান জয় মাহমুদ। জয় মাহমুদ বলেন, যখন আমাদেরকে জলদস্যুরা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়, তখন থেকে আমরা কেউ স্বপ্নেও ভাবিনি জীবিত কখনো বাংলাদেশে ফিরবো। এরপর যখন আমাদের ফোন নিয়ে নেয় তখন আরও চিন্তিত হয়ে পড়ি। সব সময় ভাবতাম পরবর্তী ধাপ কি হবে। এরপর ঈদ চলে আসলে নামাজ টুকু শুধু পড়েছি, ঈদের আনন্দ করতে পারিনি। এখন ছাড়া পেয়ে সেই ঈদের আনন্দ আল্লাহ যেনো এখন দিয়েছে। আমাদের ফিরিয়ে আনাতে সিও স্যার সহ যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
জয়ের চাচাতো ভাই মারুফ হোসন বাংলাদেশ গ্লোবালকে বলেন, বাড়িতে অন্য কারো স্মার্ট ফোন না থাকায় আমার ফোন দিয়েই সব সময় ভাই কথাবার্তা বলতো। জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর থেকে আমাদের বাড়িতে আনন্দ নামের জিনিসটা হারিয়ে গিয়েছিল। এখন ভাই ফিরে এসেছে। আমরা অনেক খুশি।
জয়ের বাবা জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ গ্লোবালকে বলেন, ছেলেদের ডাকাতদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর চিন্তিত হয়ে পড়ি। আল্লাহর রহমতে ছেলে বাড়ি ফিরেছে। সরকার ও জাহাজের মালিক পক্ষের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের চেষ্টায় দ্রুত আমার সন্তান বাড়িতে ফিরেছি।
জয়ের মা আরিফা বেগম বলেন, আমার বুকের ধন আমার বুকে ফিরে এসছে এটাই বড় আনন্দ। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। আল্লাহ য়ে আমার বুকের মানিককে ফিরে দিছে এই জন্য তার দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া।
প্রসঙ্গত, কার্গো নিয়ে আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ দুপুরে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজকে জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। অস্ত্রের মুখে দস্যুরা সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখে। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিম্মিকালীন সময়ে মালিকপক্ষের তৎপরতায় সমঝোতা হয় জলদস্যুদের সঙ্গে।
এরপর গত (১৪ এপ্রিল) ভোরে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হন এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজসহ ২৩ নাবিক। এরপর জাহাজটি পৌঁছে দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরে। সেখান থেকে মিনা সাকার নামের আরেকটি বন্দরে চুনা পাথর ভর্তি করার পর চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সব মিলিয়ে ৬৫ দিন পর মুক্ত নাবিকরা বাংলাদেশে এসে স্বজনদের কাছে ফিরলেন।
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com