ঢাকা, বাংলাদেশ গ্লোবাল: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিববুর রহমান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল আজ রোববার সন্ধ্যা নাগাদ আঘাত হানতে পারে। তবে, মূল ঝড় আজ মধ্যরাতে বাংলাদেশ অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ১২০ কিলোমিটার হতে পারে।
তবে, তা আরো বেড়ে ১১০ কিলোমিটার থেকে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভা শেষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিববুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় যাবতীয় কার্যক্রম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সময় সাগরের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। তবে, জোয়ারের সময় হলে তা আরো বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, বাগেরহাট ও ভোলাসহ উপকূলবর্তী জেলাসহ সারাদেশে রেমালের প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হতে পারে। সারাদেশে ৩০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে দেশের পাহাড়ী এলাকায় ভূমিধস হতে পারে। রাজধানীসহ দেশের শহরগুলোতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। এই জলবদ্ধতার জন্য ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। আবার রাস্তা-ঘাটের ওপর গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে যাতায়াতের বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে।
মহিববুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে যে কোন ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সকল মন্ত্রণাললয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ট্যানেল আজ সন্ধ্যা থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। সকল ধরনের লঞ্চ চলাচলও বন্ধ থাকবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় সরকার সার্বিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে। ইতোমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় খাবার পৌঁছে গেছে। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার সকল লোককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে সক্ষম হবো।
তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে আমরা সামরিক ও বেসামরিক সকল যান-বাহনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের মেডিকেল টিম সমুহ প্রস্তুত রয়েছে। সামরিক বাহিনী ও নৌবাহিনীসহ প্রয়োজনীয় সকল বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের সময় সৃষ্ট ভূমিধস থেকে লোকজনকে রক্ষা করতে ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আরো সক্ষমতার সঙ্গে এই ঘূর্ণিঝড়ের যে কোন ধরণের ধ্বংসলীলা মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। আমরা আশা করি, সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে এই ঝড়কে ভালভাবে মোকাবেলা করতে পারব।
অতিদ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য উপকূলবর্তী এলাকার লোকজনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা এখনই নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিন। ৭ থেকে ৮ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খাবারসহ প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঝড়ের সময় রাস্তার ওপর গাছপালা পড়ে যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে। অতিদ্রুত গাছপালা সরিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সচল রাখা হবে।
তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় কোথাও কোন ধরনের ঘাটতি রয়েছে কি না, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় সভা করলাম। আমরা যে কোন ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সামরিক, বেসামরিক, রাজনতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ৮ লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। যেহেতু ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষনা করা হয়েছে, সেহেতু আমাদের লক্ষ্য হলো সকল মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণি ঝড়ের সময় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলে আশ্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রম চালু থাকবে। এছাড়াও সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকায় যাতে আনঅ্যাফেকটেড এলাকার সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কাজ করতে পারে, সেজন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এর আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ গ্লোবাল/এফআর
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com