এসআই মিলন, গাইবান্ধা: অতিবর্ষণ ও উজানের ঢলে গাইবান্ধার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলা সদরসহ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ২৯টি ইউনিয়নের ৬৮ হাজার পরিবার।
বন্যায় পানিতে তলিয়ে গেছে আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, কাউন ও আমন বীজতলাসহ আড়াই হাজার হেক্টরের অধিক জমির ফসল। ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। পানি ওঠায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ৮০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে জেলার কয়েক লাখ মানুষ।
আজ শনিবার বিকেল ৩টায় গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যানুযায়ী, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৪ সেমি হ্রাসের পরও বিপৎসীমার ৮৪ সেমি ও ঘাঘট নদীর পানি ৪ সেমি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ৩৪ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে করতোয়া নদীর পানি ৬ সেমি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ১৪৫ সেমি ও তিস্তার নদীর পানি ৩০ সেমি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৬ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এসব নদ-নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট, ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৬৮ হাজার পরিবার। তবে আবারও তিস্তার পানি বাড়লেও বেড়েছে বিপৎসীমার নিচেই রয়েছে।
জানা যায়, অতিবর্ষণ ও উজানের ঢলে গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে থাকায় জেলার চার উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নতুন-নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলার সবগুলো নদ-নদীর পানি দ্বিতীয় দফায় বেড়ে শনিবার বিকেল থেকে তিন নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা, এই চার উপজেলায় বন্যায় ২৯টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বিপৎসীমার ওপরে থাকায় ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত সদরের কামারজানি, ঘাগোয়া, ফুলছড়ির ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়ি এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি এসব এলাকার মানুষ শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। প্রকট আকার ধারণ করেছে গো-খাদ্যসহ বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। কয়েকটি এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় লোকজন আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে অন্যত্র।
জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গাইবান্ধার সদর উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন, সুন্দরগঞ্জের ৯ টি, সাঘাটার ৮ টি ও ফুলছড়ি উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। এই ২৯ ইউনিয়নে পানিবন্দি রয়েছে ৬৭ হাজার ৭২৯টি পরিবার। এরমধ্যে গাইবান্ধা সদরে ৩৯ হাজার ৮৮৯টি, সুন্দরগঞ্জে ৫২ হাজার, সাঘাটায় ১৫ হাজার ১৫০টি ও ফুলছড়ির ৭৪ হাজার ৯০টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। তবে স্থানীয়দের দাবি বাস্তবে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৭০ হাজারেরও বেশি হবে।
পানিবন্দি এসব মানুষের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ১৮১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরমধ্যে সাঘাটা উপজেলায় রয়েছে ৩৬টি, সুন্দরগঞ্জে ৪৮টি, ফুলছড়িতে ২৩টি, সদরে ২৪টি, সাদুল্লাপুরে ৩৩টি, পলাশবাড়ীতে ৬টি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ১১টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে।
এদিকে, বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরে বন্যার পানি ওঠায় ইতোমধ্যে সদর উপজেলার ১৭টি, ফুলছড়িতে ১৪টি, সাঘাটায় ২১টি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ১১টিসহ জেলার মোট ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। এছাড়া, ৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৩টি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা শিক্ষা বিভাগ।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, চলমান বন্যায় চার উপজেলায় দুই হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, বীজতলা ও শাকসবজি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। দ্রুত পানি নেমে গেলে ক্ষতি কম হবে। অন্যথায় ফসল পঁচে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, টানা বৃষ্টি ওউজানের ঢলে জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, এ পর্যন্ত সদরসহ চার উপজেলার বন্যার্ত মানুষের মাঝে ৩ হাজার ৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার, ১৬৫ মেট্রিক টন জি আর চাল ও ১০ লক্ষ টাকা জি আর ক্যাশ ৪টি উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরপরেও ২৬৫ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে। ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য নৌকা, স্পীডবোট প্রস্তুত রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় খোলা হয়েছে জেলা এবং উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। প্রত্যেক উপজেলায় মেডিকেল টিম, কৃষি টিম, স্বেচ্ছাসেবক এবং লাইভস্টোক টিম রয়েছে। এছাড়া একাধিক এনজিও বানবাসী মানুষের সেবায় কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ গ্লোবাল/এফআর
সবশেষ খবর এবং আপডেট জানার জন্য চোখ রাখুন বাংলাদেশ গ্লোবাল ডট কম-এ। ব্রেকিং নিউজ এবং দিনের আলোচিত সংবাদ জানতে লগ ইন করুন: www.bangladeshglobal.com